বাংলাদেশের জন্য গৌরবের যে, সমুদ্র থেকে দূরে ভূগর্ভে অবস্থিত বিশ্বের একমাত্র গ্রানাইট খনিটি বাংলাদেশেই রয়েছে। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথরখনিও। গ্রানাইট হচ্ছে বাড়ি নির্মাণে ব্যবহৃত উচ্চমানের কঠিন পাথর। মার্বেল পাথর তৈরিতেও এটি ব্যবহার হয়। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি বাংলাদেশের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ, যা দেশের অর্থনীতিতে ও উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সক্ষম। সাম্প্রতিক সময়ে এই খনিতে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় পাথর উত্তোলন বেড়েছে। প্রতিদিন তিন শিফটে চার হাজার টন গ্রানাইট শিলা উৎপাদন হচ্ছে, যা আগামীতে বেড়ে দৈনিক কুড়ি হাজার টন হবে। মান ভাল হওয়ার কারণে ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে এই পাথর। এ ছাড়াও সড়কের চার লেন প্রকল্প, যমুনা নদী রক্ষা প্রকল্প, রেলওয়ে নির্মাণ কাজসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে এই শিলা। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প, যেমন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট, বাঁশখালী-রামপাল-মহেশখালী-মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পাতাল রেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিতব্য টানেল, কক্সবাজার বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণ কঠিন শিলার প্রয়োজন হবে। এসব প্রকল্পে গুণগতভাবে উৎকৃষ্ট মধ্যপাড়ার গ্রানাইট শিলার ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে, এই শিলা ‘ফিজিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোপার্টিজ নির্মাণ কাজের জন্য উপকরণ হিসেবে যথেষ্ট মজবুত, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব।’ রাসায়নিক পরীক্ষায়ও দেখা গেছে এই শিলা ক্ষতিকারক নয়। ভূগর্ভের প্রায় তিন শ’ মিটার গভীর থেকে এ গ্রানাইট শিলা উত্তোলন করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই শিলা বিদেশ হতে আমদানি করা ভূ-পৃষ্ঠের পাথরের চেয়ে অনেক উন্নতমানের ও দেড়গুণ শক্তিশালী। বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন কাজে গ্রানাইট পাথর ও পাথর ‘ডাস্টের’ ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জার্মানিয়া ট্রোট কনসোর্টিয়াম’ তথা জিটিসি। সত্তর বছরের পুরনো খনিটিতে যে পরিমাণ পাথর মজুদ আছে, তা দিয়ে আগামী ৬০ থেকে ৭০ বছর পাথর উত্তোলন করা সম্ভব হবে। উৎপাদন বাড়ায় দেশে পাথর আমদানি কমবে। সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা। মধ্যম আয়ের দেশে যাত্রা শুরুর এই সময়ে কঠিন শিলার ব্যবহার দেশের উন্নয়নের চাকাকে সচল রাখবে। কোন কারণেই যেন খনিটির উৎপাদন ব্যাহত না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকা জরুরী। দেশের অগ্রগতির পথে মধ্যপাড়ার কঠিন শিলা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাবে- এটাই প্রত্যাশা।
শীর্ষ সংবাদ: