ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এসএসসির ফল

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৯ মে ২০১৮

এসএসসির ফল

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে রবিবার। পরীক্ষায় কৃতকার্য সব শিক্ষার্থীকে আমাদের অভিনন্দন। নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়নের প্রভাব পড়েছে পরীক্ষার ফলে। গত বছর এই পদ্ধতিকে সময়োচিত আখ্যা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, এ পদ্ধতিতে পাসের হার কিছুটা কমে গেলেও পরীক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ে এটি যথার্থ কার্যকরী হবে। দেখা যাচ্ছে এবার পাসের হার ৭৭.৭৭ শতাংশ, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছরও এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৮০.৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। ১০ শিক্ষা বোর্ডে এবার ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন। পরীক্ষায় পাসের হার কমলেও গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল এক লাখ চার হাজার ৭৬১ শিক্ষার্থী। এ বছর জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। ২০০৯ সালে এসএসসিতে পাসের হার ছিল ৬৭.৪১ শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে এর পর থেকে পাসের হার উর্ধমুখী হয়েছে। ২০১৪ সালে পাসের হার ছিল ৯২.৬৭ শতাংশ। আবার ২০১৬ সাল থেকে পাসের হার কমতে থাকে। তবে একেবারে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বছরের প্রথম দিন থেকে শিক্ষাপঞ্জি শুরু, শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়া এবং সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। এবারে ফল পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে মেয়েরা ভাল ফল করেছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে দেশের কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মান বৃদ্ধি করতে সব ব্যবস্থা নেয়া একান্ত আবশ্যক। একই সঙ্গে দৃষ্টি দিতে হবে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। শহরের সঙ্গে গ্রামের শিক্ষার্থীদের ব্যবধান বাড়ছে। এটি কাম্য নয়। এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবনের বড় ধরনের একটি বাঁক ফেরার কেন্দ্র। এ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর একজন শিক্ষার্থীর পরবর্তী ধাপের শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে। কাজেই ভাল ফলের জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকম-লীসহ সংশ্লিষ্ট সবার যতœবান ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে অনুত্তীর্ণদের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি আনার চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করা দরকার। ইংরেজী ও গণিতের মতো অতীব জরুরী বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কেন খারাপ করছে সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। একই সঙ্গে দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষকের অভাব পূরণে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা, যারা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। শিক্ষার উন্নত গুণগতমান সে কারণে জরুরী তা বলাই বাহুল্য। শিক্ষার মান বাড়ানোর কথা আমরা বারবার বলে আসছি। সে লক্ষ্যে প্রয়োজন মানসম্মত শ্রেণীকক্ষ, যা নির্ভর করে মানসম্পন্ন শিক্ষকের ওপর। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক নিশ্চিত করা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের কা-ারি তথা সুনাগরিক। দেশের সেই নাগরিকদের গড়ে তোলার দায়িত্ব যাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে তাদের মান হতে হবে প্রশ্নাতীত। পরীক্ষার ফলের সঙ্গে শিক্ষার মানের বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষার মানের উন্নতি হলে পরীক্ষার ফলেরও উন্নতি হবেÑ এটা সাধারণ হিসাব। কিন্তু রাতারাতি শিক্ষার মান বাড়ানো অসম্ভব। এর জন্য সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। দুঃখজনক বিষয় হলো পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে এমন ক’জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। জীবনের চাইতে কোন কিছুই যে বড় হতে পারে না সেই শিক্ষাটিও শিক্ষার্থীদের দেয়া জরুরী হয়ে উঠেছে।
×