ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

কর্ণফুলী রক্ষায় ব্যতিক্রমী আয়োজন- উভয় তীরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৯ মে ২০১৮

কর্ণফুলী রক্ষায় ব্যতিক্রমী আয়োজন- উভয় তীরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ কর্ণফুলী রক্ষায় চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমী এক আয়োজন। ‘বিনি সুতার মালা’ শীর্ষক এই আয়োজনে রয়েছে নদীর উভয় তীরের ত্রিশটি ঘাটে এবং নদীর তীরের জনবসতি ঘিরে আলোচনা, নাচ, গানের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীকে স্বচ্ছ রাখতে সচেতনতা সৃষ্টি। কর্ণফুলীতে দখল ও দূষণমুক্ত করতে তীরবর্তী ১০ লক্ষাধিক মানুষকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমি। প্রথম দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় নগরীর সদরঘাট থেকে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। সদরঘাট থেকে চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটারব্যাপী এই অনুষ্ঠান চলে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমির আয়োজনে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে তিন দিনব্যাপী ‘সাম্পান খেলা ও চাঁটগাইয়া সংস্কৃতি মেলার’ প্রথম দিনের অনুষ্ঠান ‘বিনি সুতার মালা’। ভাসমান বোটে মঞ্চে পাহাড়ী নাচ, আলোচনা, আঞ্চলিক গানের অনুষ্ঠানমালা সদরঘাট, চরপাথরঘাটা, নয়াহাট, কালুরঘাট, বোয়ালখালী, লাম্বুরহাট, গোচরা বাজার, গোডাউন ঘাট, ইছাখালী ঘাট, গোদালাঘাট, চৌধুরী হাট, দোভাষী বাজার ইত্যাদি স্থানে আয়োজন করা হয়। ডায়মন্ড সিমেন্টের সৌজন্যে বিনি সুতার মালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়েট প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিত বলেন, কর্ণফুলী দখল ও দূষণে মানুষের চেয়ে নদী ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দায়ভার বেশি। বন্দর মোহনা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলী নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারা কখনও সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি। কর্ণফুলীতে নোঙ্গরকারী শত শত জাহাজের পোড়া তেল প্রতিনিয়ত কর্ণফুলীতে ফেলছে। বন্দর নীরব। চট্টগ্রাম মহানরগীর ৭০ লাখ মানুষ সৃষ্ট বর্জ্য সরাসরি কর্ণফুলীতে পড়ছে। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ওয়াসা নীরব। নদীর উভয় তীরের শতাধিক শিল্প কারখানা, বাজার, ঘাটের মাধ্যমে নদী দূষণ হচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। কর্ণফুলী রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন আরও জোরদার করার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, খরস্রোতা না হলে অনেক আগেই কর্ণফুলী বুড়িগঙ্গা হয়ে যেত। কর্ণফুলী জোয়ার ভাটা রাসায়নিক ও মানুষ্য সৃষ্ট বর্জ্য সাগরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে সাগরের দূষণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। বক্তব্যে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমির চেয়ারম্যান আলীউর রহমান বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের অব্যবস্থাপনা কর্ণফুলীর প্রাকৃতিক রূপ ও সৌন্দর্য্য নষ্ট করছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প নিয়ে গত দশ বছর ধরে টালবাহানা করছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে কর্ণফুলীর উভয় তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ক্যাপিটাল ড্রেজিং বাস্তবায়ন না করলে জোরদার আন্দোলন করা হবে। ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের ব্র্যান্ডিং এবং কমিউনিকেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আমান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, কর্ণফুলী রক্ষায় ডায়মন্ড সিমেন্ট সব সময় সাম্পান মাঝিদের সঙ্গে ছিল, আগামীতেও থাকবে। কর্ণফুলী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, কথাটি এখন আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এসএম পেয়ার আলীর সঞ্চালনায় এবং উক্ত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মেম্বার। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মির্জা মোহাম্মদ ইসমাইল, চরপাথরঘাটা সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাফর আহমদ, শিল্পা গীতা আচার্য্য, শিল্প মিলন আচার্য্য, ইছানগর সাগরঘাটা সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি আলী হায়দার, কর্ণফুলী নদী মাছ ও মালবাহী সমিতির সভাপতি মীর আহম্মদ, চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি জিন্নাত আলী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ভাসমান জাহাজে নৃত্য পরিবেশন করেন পলিয়ন বোমাং ও তার দল। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিন ৯ মে বুধবার সকাল ১১টায় নগরীর অভয়মিত্র ঘাট থেকে সাম্পান শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় দিন ১০ মে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় অভয়মিত্র ঘাট থেকে চরপাথরঘাটা সিডিএ মাঠে সাম্পান খেলা ও চাঁটগাইয়া সংস্কৃতি মেলা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত হতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি একাডেমির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
×