ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিষাক্ত নিশ্বাসে বাধা যুদ্ধাপরাধীর সম্পদ -জাফর ওয়াজেদ

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৭ মে ২০১৮

বিষাক্ত নিশ্বাসে বাধা যুদ্ধাপরাধীর সম্পদ -জাফর ওয়াজেদ

একাত্তরের এপ্রিলের শেষদিকে রাতের অন্ধকারে ওরা এলো। কনভয় আর লরিতে চড়ে ওরা এসে নামলো গ্রামের প্রবেশ পথে। তারপর পাউডারগান ছিটালো মুক্তিকামী বাঙালীর ঘরবাড়িতে। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। আগুনের লেলিহান শিখায় গাছপালাও পুড়তে থাকে। ঘরে থাকা মানুষজনের আর্তচিৎকার বাতাসে ভাসতে থাকে। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসা মানুষদের ওপর অবিরাম গুলিবর্ষণ চলতে থাকে। সারি সারি নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা মুহূর্তেই লাশে পরিণত হলো। ঘরের ভেতর দগ্ধ হয়ে অনেক দেহ হলো অঙ্গার। বীভৎসতা তখন চতুর্দিকে। বিভীষিকাময় রাতে মানুষের গগনবিদারী আর্তনাদে কেঁপে উঠেছিল আশ-পাশের গ্রামগুলো। আগুন যেমন সর্বগ্রাসী, তেমনি হানাদাররাও ছিল সর্বগ্রাসী। তাদের নির্মমতায় গবাদি পশুরাও পুড়েছে আগুনে। মানুষ আর গবাদি পশুর আর্তনাদ সে রাতে হয়ে গিয়েছিল একাকার। আগুন জ্বেলে ঘর পোড়ানো, মানুষ মারা সবই ছিল সহজ যেন। ভিনদেশী হানাদার বাহিনীকে চেনালো গ্রাম, ঘরবাড়ি, জানা ছিল সবার। রাজাকার, শান্তি কমিটির সশস্ত্র সদস্যরা পথ চিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল গ্রামে। এই দৃশ্য কোন একটি গ্রামের শুধু নয়, সারা বাংলারই দৃশ্যপট ছিল এমনই। মুক্তিযুদ্ধকালে এইচএমভি থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে মুকুল দত্তের লেখা একটি ‘ব্যালাড সং’-এর রেকর্ড বের করেছিলেন ত্রিপুরা তথা কুমিল্লার সন্তান- রাহুল দেব বর্মণ। ‘স্বপ্ন আমার হারিয়ে গেছে, তার স্মৃতিটুকু মনে আছে’ গানটির মাঝখানে সংলাপে বর্ণনা করেন শিল্পী।, ‘ওরা এলো, ঘরবাড়িতে আগুন দিল, সবশেষ হয়ে গেল।’ ঘরে আটকা পড়ে স্ত্রী এবং পুত্র দু’জনেই দগ্ধ হয়ে মারা যায়। গানটি আজও শুনলে চোখে জল আসে। এমনকি ভেসে ওঠে চোখের সামনে ঘরবাড়ি পোড়ানোর দৃশ্যগুলো। সব ফেলে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। ফিরে এসে পাওয়া গেল বিরানভূমি। আগুনে গিলেছে বসতঘরসহ অন্যান্য ঘরবাড়ি, গবাদি পশুর আবাসস্থল, গাছপালা। একাত্তরে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের সহযোগী মিলিশিয়া, রাজাকার ও আল বদররাও নয় মাসে বহু ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট যেমন চালিয়েছে, তেমনি গণহত্যাও। থেমে থাকেনি বাঙালী নিধনে। সর্বস্ব হারিয়েও বাঙালী ভীত হয়নি; বরং প্রতিরোধ গড়েছে। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এ দেশ দখল করে নিয়ে গণহত্যা, নির্যাতন চালিয়েছে। সেই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোটি কোটি বাঙালী। সম্পদ হারানোর চেয়েও বড় হারানো ছিল পরিবারের সদস্যদের। নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে নিরপরাধ বাঙালীদের। হত্যাকারীরা বলাবলি করতো, তারা বাংলার মানুষ চায় না। চায় মাটি। তাই গণহত্যা চালিয়েছে দেশজুড়ে। যারা দেশত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের ঘরবাড়ি লুট করা হয়, ঘরের টিনের চালও লুটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তারা লুটের পর ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সবই হয়েছে ভস্মীভূত। বিরানভূমিতে ফেরার পথও ছিল রুদ্ধ। স্বাধীনতার পর নিপীড়িত, নির্যাতিত, ক্ষতিগ্রস্তদের তেমন ক্ষতিপূরণ দেয়া যায়নি। ফিরে আসা শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থবরাদ্দ করা যায়নি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যেই দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসীদের বাড়তে থাকে অপতৎপরতা। গলাকাটা, শ্রেণীশত্রু খতমের নামে মানুষ হত্যা, গুদাম, ফাঁড়ি, অস্ত্র লুট, মিলিয়ে দেশ আরও ধ্বংস করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। তাই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেও আদি অকৃত্রিম পুরনো ঘরবাড়ি আর ফিরে পায়নি। নতুন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার অবস্থা আর তৈরি হয়নি। একাত্তরে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার এখন পর্যন্ত পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি। বিশেষ করে শহীদ পরিবারগুলো এখনও দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তাদের পুনর্বাসন হয়নি যথাযথ। অথচ পাকিস্তানী হানাদারদের সহযোগীদের ঘরবাড়ি একাত্তর কেন, এরপরও গত ৪৬ বছরেও কেউ ঢিল পাটকেল নিক্ষেপ দূরে থাক, আগুনও জ্বালায়নি। তাদের সম্পদও লুটপাট করা হয়নি। বরং তারা আরও ফুলে ফেঁপে উঠেছে অর্থে, বিত্তে, সম্পদে। পঁচাত্তরের আগস্টের পর একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দেয়। তারা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয় সামরিক শাসক জিয়ার হাত ধরে। রাজাকার পুনর্বাসনে জিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করতে থাকেন। শহীদ পরিবারদের বঙ্গবন্ধুর বরাদ্দ করা বাড়ি থেকে উচ্ছেদ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির কোটা স্থগিত করা হয়। দেশ আবার পাকিস্তানী ধারায় ফিরে যায়। যুদ্ধাপরাধী ও জাতীয় শত্রুরা সর্বত্র বিচরণ করতে থাকে জিয়া-এরশাদ নামক দুই জান্তা শাসকের বদৌলতে এবং সক্রিয়তায়। যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা এখন এদেশে অঢেল সম্পদের মালিক। অবশ্য এই সম্পদের এক বড় অংশের উৎস নিয়েও রয়েছে নানাবিধ প্রশ্ন। শাস্তিপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফত করার দাবিও অব্যাহত রয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। এটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য দাবি। দেশবিরোধী কর্মকা-ে তাদের সে সম্পদ যে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার’ প্রকল্প গ্রহণ করে গোলাম আযম নামক যুদ্ধাপরাধীদের প্রধান নেতা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেছেন। যা এদেশে জামায়াত-শিবির পুনর্গঠনে সহায়ক শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সুফল বিনষ্টেও ‘অবদান’ রেখেছে। যুদ্ধকালে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদর, আল শামসরা এ দেশে গণহত্যা ও সীমাহীন নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়েছে শুধু নয়, লাখ লাখ মানুষের সহায়-সম্পদ লুটেও ছিল তাদের ভূমিকা। পাকিস্তানী হানাদারদের চোখ ও কান হিসেবে ব্যবহৃত রাজাকার আলবদররা ছিল নৃশংসতায় পারদর্শী। লাখ লাখ বাঙালী হত্যাকা- এবং নিগৃহীত হওয়ার নেপথ্যে ছিল তাদের কদর্য সহিংস ভূমিকা। স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীদের একটি বিশাল অংশই আত্মগোপন এবং পালিয়ে পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যে চলে যায়। যাদের বেশির ভাগই জামায়াতি। সে অবস্থায়ও তারা বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যায়। তাদের লুণ্ঠিত সম্পদ এবং বিদেশী সমর্থকদের কাছ থেকে পাওয়া আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশবিরোধী কর্মকা-ে দু’হাতে অর্থ ব্যয় করে। যার এক বড় অংশ সন্ত্রাসী ও জঙ্গী কর্মকা-ে যে ব্যয় করা হয় তা আটক জঙ্গীরাও স্বীকার করেছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সহযোগীরা বিনিয়োগ করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বীমা গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এরা গড়ে তুলেছে যেসব প্রতিষ্ঠান, তা সবই বাংলাদেশবিরোধী এবং পাকিস্তানের প্রতি সমমর্মী হিসেবে কর্মকা- চালিয়ে আসছে। তাদের অর্থবলের কাছে অনেক কিছুই অসহায় হয়ে পড়ে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে, এর বিরোধিতায় তারা ব্যাপক অর্থ ব্যয় করে। যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী হলো মৃত্যুদ-ে দ-িত মীর কাসেম আলীর। তারই পৃষ্ঠপোষকতায় যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত দেশে অবস্থান দৃঢ় করতে পেরেছে। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির দোসররা এতো বিত্ত-বৈভবের মালিক হলো কী করে, সেসব খতিয়ে দেখা হয়নি কখনও। বরং তাদের অর্থের কাছে নতজানু হতে বাধ্য হয়েছে স্বাধীনতার চেতনাধারীরা। মুক্তিযুদ্ধের ৩৯ বছর পর ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু হয়। বিচারের গোড়া থেকেই দ-িতদের সম্পদ বাজেয়াফতের দাবি ওঠে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অদ্যাবধি একত্রিশটি মামলায় বিচার শেষ হয়েছে। আপীল বিভাগে চূড়ান্ত রায় আসার পর ছয় অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত না করায় দেশে-বিদেশে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান শুধু নয়, বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেও সহযোগিরা সচেষ্ট। এসব যুদ্ধাপরাধী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ আয়ের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ক্ষমতার সুযোগ সম্পদ ও অর্থের পাহাড় গড়েছে। বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসার মালিকানা নিয়ে হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে জামায়াতের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের। কারাগারে যাওয়া যুদ্ধাপরাধীদের ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে যেসব সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে তা হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে এ হিসেব কেবল তাদের নিজেদের নামে ঘোষিত সম্পদের। কিভাবে এতো বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছে, তাদের অর্জিত অর্থ কোথায়, কিভাবে ব্যয়িত হচ্ছে, তা এখনও অজানা রয়েছে। তারা এই বিত্তবৈভব মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের লক্ষ্যে ব্যবহার করেছে, এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ ভ-ুল করতে এবং লবিস্ট নিয়োগে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের স্বজনরা যে এখনও আন্দোলন ও হম্বিতম্বি করছে তা এই বিত্তবৈভবের দাপটেই। জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ দেশবিরোধী বিভিন্ন কর্মকা-ে এই সম্পদের একটি অংশ ব্যয় হয়। তাদের রেখে যাওয়া বিপুল পরিমাণ সম্পদও সন্ত্রাস জঙ্গীবাদে এখনও ব্যবহার হচ্ছে, আগামীতে হবে। অনেকদিন ধরেই তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের দাবি উঠেছে এবং এই দাবির প্রতি মুক্তিকামী দেশবাসীর সমর্থন রয়েছে। দেশ থেকে জঙ্গীবাদের শিকড় উৎপাটনে শাস্তিপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফত করার উদ্যোগ যেমন নেয়া প্রয়োজন, তেমনি যুদ্ধাপরাধীদের পরিচালিত বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সম্পদও বাজেয়াফত করা সঙ্গত। তাদের শিকড়বাকড় উৎপাটন করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ না নেয়ার কারণে তারা স্বাধীনতার পর নানা কৌশলে দেশবিরোধী কর্মকা- চালানোর সুযোগ পেয়েছে। ভবিষ্যতের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের আর্থিক সামর্থ্যও ভেঙ্গে দেয়া দায়িত্ব ও কর্তব্য এই জাতির। ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল, যুগোশ্লাভিয়া ও রুয়ান্ডায় যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াফত করার বিধান তাদের আইনেই রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে তা করা হয়নি। ২০০২ সালের পহেলা জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া ‘রোম স্ট্যাটিউট অব দি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট’-এর ৭৯ অনুচ্ছেদে একটি ট্রাস্ট গঠনের বিধান রয়েছে। যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াফত করে বা আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আরোপ করে ওইসব অর্থ ট্রাস্টের তহবিলে জমা করে তা দিয়ে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার কথা বলা আছে। বাংলাদেশ এই রোম স্ট্যাটিউটে ১৯৯৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সই করেছে। পরে ২০১০ সালের ২৩ মার্চ অনুমোদন করে ওই বছরের পহেলা জুন থেকে কার্যকর করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কথামালার ফুলঝুরি ছড়ানো হলেও বাস্তবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। দাবি যারা উত্থাপন করছেন, তাদের যুক্তি বেশ জোরালো। সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই সম্পদ বাজেয়াফত আইন করার দাবি রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ও শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে। এদের সম্পত্তি বাজেয়াফত আইন করেই কার্যকর করা উচিত। নৈতিক কারণ এবং এসব সম্পদ জঙ্গী ও দেশবিরোধী কাজে ব্যয় হওয়ার আশঙ্কা থেকেই পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। বাজেয়াফত করা সম্পত্তি যুদ্ধের সময় যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের উত্তরসূরিদের কল্যাণে নিয়োজিত করা প্রয়োজন। যদিও এরই মধ্যে দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী নিজামী ও সাঈদীর কিছু সম্পদ বাজেয়াফত করা হয়েছে বিশেষত এদের নামে বেগম জিয়ার সরকার যে প্লট বরাদ্দ করেছিল। যুদ্ধাপরাধীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াফত করা এখন সময়ের দাবি। নির্বাচনের আগে সরকার এই পদক্ষেপ নেবে, এমনটা দেশবাসী চায়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিপদন্মুক্ত রাখার স্বার্থে দেশদ্রোহী নরকের কীটদের বিরুদ্ধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবেই সময় সুযোগ বুঝে, এমনটাই মনে করা হয়। তাদের অর্থের উৎস ধ্বংস করা না হলে লাখ লাখ মীর কাসেম, মুজাহিদ তৈরি হতেই থাকবে। সরকার দ্রুত আইন প্রণয়নে এগিয়ে আসতে পারে। কারণ দেশবাসী এর বিরোধী নয়। একাত্তরে বহু পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। ব্যক্তি আমাদের পরিবার ও। বাবা তার দুই পুত্রকে নিয়ে। মা আরেক দুই পুত্রকে নিয়ে। দুই বোন আত্মীয়ের বাড়িতে থেকেছি একাত্তরে। স্বাধীনতার পর পরিবারটি আর এক সঙ্গে হতে পারেনি। এভাবে বহু পরিবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তারা আর্থিক অনুদান এত বছর পর হয়তো চাইছে না। কিন্তু বহু পরিবার আছে এখনও স্বনির্ভর হতে পারেনি। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদগুলো থেকে বিষাক্ত নিশ্বাস বেরোয়। সে বিষ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। এই বিষকে দমন করার পথ ও পন্থা থেকে সরে যাওয়া যাবে না। গেলে জাতির পায়ে কুড়াল মারা হবে।
×