ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় অর্ধেক বোরো ধান এখনও পানির নিচে, দিশেহারা কৃষক

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ মে ২০১৮

নওগাঁয় অর্ধেক বোরো ধান এখনও পানির নিচে, দিশেহারা কৃষক

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ আবাদ উদ্বৃত্ত উত্তরের নওগাঁ জেলায় এখনও প্রায় অর্ধেক জমির বোরো ধান কাটা হয়নি। কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টির কারণে নিচু এলাকার জমির ধান তলিয়ে গেছে। মাঠের ধান ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকের যেন চিন্তার শেষ নেই। এর মাঝে দেখা দিয়েছে কামলা সঙ্কট। ধান কাটার মজুরি হিসাব ৬শ’ টাকা দিন আবার তিনবেলা খাবার দিয়েও মিলছে না ধান কাটার কামলা। আবার কোথাও কোথাও ৬ হাজার টাকা বিঘা চুক্তিতেও গৃহস্থরা ধান কাটতে লাগিয়েছে কামলাদের। তবুও সব ধান ঘরে উঠেনি এখনও। ভাগ। জেলার নি¤œাঞ্চলের জমির ধান গাছ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এবং মোটা অঙ্কের মজুরি দিয়েও ধান ঘরে তুলতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪৯ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যেই ধান কাটা হয়েছে প্রায় ৬০ ভাগ। বৈরী আবহাওয়ার কারণে নওগাঁয় কৃষকদের স্বপ্ন বর্তমানে তলিয়ে আছে পানির নিচে। পরপর কয়েক দিন জেলার বিভিন্ন উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে মাঠে রোপণকৃত ইরি-বোরো ধান ও আমসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ঝড়ো হাওয়ার কারণে প্রায় প্রতিটি মাঠের আধাপাকা ও পাকা ইরি-বোরো ধান জমিতেই নুইয়ে পড়ায় আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন পার করছিলেন জেলার কৃষকরা। কয়েকদিন থেকে জেলার বিভিন্ন মাঠে পাকা ধান কাটতে শুরু করেছিলেন কৃষকরা। এরই মধ্যে গত দুদিন ধরে কয়েক দফায় বৃষ্টি হওয়ায় জেলার বিভিন্ন মাঠে থাকা বিশেষ করে মাঠের নিচু জমিগুলোর কাঁচা, আধাপাকা ও পাকা ধান ইতোমধ্যেই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে অনেক কৃষকরা পানির নিচে তলিয়ে থাকা কাচা, আধাপাকা ধানই কেটে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ব্যাপারে সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের প্রতাপদহ গ্রামের কৃষক শ্রীধন ম-ল জানান, কয়েকদিনের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষেতের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হযেছে। জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম, ভান্ডারপুর গ্রামের আবুল কালামসহ উপজেলার শালবাড়ি ও মইজোড়া গ্রামের কয়েকজন কৃষক বলেন, ইতোপূর্বেই ঝড়ো হাওয়ার কারণে আমাদের রোপণকৃত বোরো ধান গাছ কাঁচা ও আধাপাকা অবস্থায় মাঠের জমিতে নুইয়ে (শুয়ে) পড়েছে। তারা আরও বলেন, ধানগাছ নুইয়ে পড়ার পরও আমাদের মনে বিশ্বাস ছিল বিঘাপ্রতি ফলনে ২/৩ মণ ধান কম হতে পারে। কারণ নুইয়ে পড়ায় চিটার পরিমাণ বাড়বে এবং ধানের ফলন কম হবে এতেও আমরা হতাশ হইনি। কিন্তু গত দুদিন ধরে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে ধান। আর এজন্য আধাপাকা ধানই কেটে নিতে বাধ্য হচ্ছি। তারা অভিযোগ আকারে জানান, একদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে আধাপাকা ধান কেটে লোকসান গুনছি অন্যদিকে আমাদের আধাপাকা ধানগুলো ক্রেতারা নিতে না চাওয়াই পানির দরে মাত্র সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা দরে প্রতি মণ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। কৃষকদের আরও অভিযোগ, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন বির্পযয় হওয়ায় একদিকে লোকসান হচ্ছে অন্যদিকে বাজারে ধানের দাম খুবই কম হওয়ায় জেলার কৃষকরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। জেলার রানীনগর উপজেলার আবাদপুকুর হাট ও মহাদেবপুর উপজেরার মাতাজী হাটে আড়তদার সমিতির নামে ক্রেতারা সিন্ডিকেট করে কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করছে। এদিকে জেলার কয়েকটি মাঠ সরজমিনে ঘুরে মাঠের পর মাঠ পাকা ও আধাপাকা ধান নুইয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আর নুইয়ে পড়ার কারণে প্রতি বিঘা জমিতেই ধানের ফলন কিছুটা হলেও কম হবে বলেই কৃষকরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি বাজারে ধানের মূল্য না বাড়ানো হলে জেলার কৃষকরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পরবেন বলেও সাধারণ কৃষকরা মনে করছেন।
×