ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবজি ব্র্যান্ডিং

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

সবজি ব্র্যান্ডিং

শাক-সবজির দেশ বাংলাদেশ। শাক-সবজি বাঙালীর খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত। এদেশের সবজির চাহিদা বিদেশেও রয়েছে। বিশেষত প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে শুধু নয়, ইউরোপ, এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও তার চাহিদা অত্যধিক। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সেভাবে করা যাচ্ছে না। তারপরও যা রফতানি হয় সেখানেও পদে পদে বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয় রফতানিকারকদের। দীর্ঘস্থায়ী নয় এমন পচনশীল বলে সবজি রফতানির ক্ষেত্রে সতর্কতা মেনে চলতে হয়। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই পণ্য রফতানি বিস্তৃত হতে পারছে না এমনটা মনে করা হয়। যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করা হলে রফতানি ক্ষেত্রে সবজি শীর্ষ অবস্থানে যেতে পারে। পোশাক শিল্পের পরই এর স্থান হতে পারে। বিদেশে রফতানিযোগ্য সবজির কোন ব্র্যান্ডিং করা হয়নি আজও। অথচ এটা করা জরুরী। কারণ এজন্য সমস্যা বাড়ছে। এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য সমস্যা। ফলে এই খাতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। আর তা হলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও ঘটবে। বন্ধ হয়ে যাবে সবজি রফতানির মাধ্যমে রেমিটেন্স আদায়। আর সমস্যার সমাধানে যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায় তাহলে বাংলাদেশের সবজি বিদেশী বাজার দখল করে নিতে পারবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য সরকার উৎপাদন খাতে সহায়তা করে আসছে। কিন্তু রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর ব্যাপারে যথাযথ নজর দেয়া হচ্ছে না। সরকারীভাবে সারাদেশে ‘সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার ফুড সিকিউরিটি এ্যান্ড লিংকেজেস’ প্রকল্পের আওতায় বালাইমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষের জন্য যশোর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী এবং গাজীপুরের কাপাসিয়ায় প্রকল্প নেয়া হয়। এর মধ্যে ওই প্রকল্প যশোরে প্রথম চালু হওয়ার পর রীতিমতো সবজি রফতানি হচ্ছে বিদেশে। এই অঞ্চলের সদর উপজেলার ৪টি ব্লক, পাঁচটি ইউনিয়ন ও অপর একটি উপজেলার একটি ইউনিয়নে সবজি চাষ হচ্ছে। এসব এলাকার চার শ’ চাষী প্রকল্পের আওতায় কাজ করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডসের একটি দাতা সংস্থা প্রযুক্তি ও বাজারজাতকরণে সহায়তা করছে। চুক্তিবদ্ধ চাষীদের কাছ থেকে পটল, চিচিঙ্গা, কাকরোল, করলা, ঢেঁড়স ও বাঁধাকপি স্থানীয় দামের চেয়ে বেশি দামে কিনে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকার অন্যান্য রফতানিকারকের কাছেও বিক্রি করা হচ্ছে। চাষীরা স্বল্পমাত্রার কীটনাশক, বালাই দমনে বিভিন্ন ধরনের ফেরোমন ব্যবহার করে। তবে এসব ব্যবহারে উৎপাদিত সবজি ক্রয়ে বিদেশীরা এখনও আপত্তি জানায়নি। কীটনাশক একেবারেই বাদ দেয়া না গেলে বিদেশে বাজার হারাতে হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। আবার অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না যশোরের সবজি। বাজারদরের চেয়ে চুক্তিবদ্ধ চাষীদের প্রত্যেক সবজিতে কেজি প্রতি দুটাকা বেশি দেয়া হয়। তাছাড়া সংগৃহীত সবজি গ্রেডিংয়ে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাদ পড়ে। তার ওপর রয়েছে পরিবহন খরচের ব্যয়াধিক্য। আবার একটি সংঘবদ্ধ চক্র ঢাকার কাওরানবাজার থেকে কোনরকম মান ছাড়াই কম দামে সবজি কিনে বিদেশে রফতানি করছে। ফলে মানসম্পন্ন যশোরের সবজি রফতানি টিকতে পারছে না। সে কারণেই সবজি ব্র্যান্ডিং করা জরুরী হয়ে পড়েছে। মানসম্পন্ন না হওয়ায় রাশিয়া যেমন সবজি নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে তেমনি ক্রমান্বয়ে অন্যান্য দেশও এই পন্থা অবলম্বন করতে পারে। ফ্রিজিং ভ্যানের অভাবে সবজির মান টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তদুপরি পরিবহন সমস্যা। ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে সবজিবাহী গাড়ি। দিনে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারার কারণে বিমানের সিডিউল বাতিল হচ্ছে। বিদেশে দেশী সবজির বাজারের বিস্তার ঘটাতে এখনই পরিকল্পনা, নীতিমালা তৈরি করে সমস্যার সমাধান করা। এই সম্ভাবনাময় খাতকে রক্ষা ও বিস্তারে অবহেলা দেশ এবং জাতির জন্য ক্ষতিকর। সবজির ব্র্যান্ডিং দ্রুত করার পদক্ষেপ নেয়া এখন জরুরী কর্তব্য।
×