ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মীর আবদুল আলীম

অভিমত ॥ এই ধরনের অপরাধ কেন বাড়ছে!

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

অভিমত ॥ এই ধরনের অপরাধ কেন বাড়ছে!

দেশে কোন কোন ক্ষেত্রে মনুষ্যত্ব যেন বিপন্ন। মানুষের ভেতরকার বিবেক বোধ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ কেমন যেন নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছে। কখনও বিবেক বুদ্ধি, পরকীয়া; কখনও অর্থের তাড়নায় অহমিকাচ্ছন্ন মানুষগুলো কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে। খুনের পর লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলা, নিজ সন্তানকে পুড়িয়ে মারা, নিজ সন্তানের হাতে মা-বাবা খুন হওয়ার, শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুন এমন ঘটনা প্রায় দেখা যায়। যদিও এসব ঘটনা নতুন নয়, ক্রমেই যেন বাড়ছে। পরকীয়ার জেরে গর্ভধারিণী মায়ের হাতে প্রিয়সন্তান খুনের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধও ঘটছে। প্রেম ও পরকীয়ার মোহে নিজ শিশুকে পুড়িয়ে মারতেও দ্বিধা করছে না গর্ভধারিণী মা। দাম্পত্য কলহের জেরে স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে। তুচ্ছ ঘটনার জের ধরেই একের পর এক ঘটছে প্রাণসংহারের মতো ঘটনা। দুর্বৃত্ত বা সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি কোন কোন পরিবারে আপন মানুষটির কাছেই আরেকজন সদস্য ক্রমশ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। প্রাণ হারাচ্ছে। হঠাৎ করে সামাজিক অপরাধের এই বৃদ্ধিতে মানুষ উদ্বিগ্ন। নয় বছরের শিশু নুদরাত। পৃথিবী কী বোঝার আগে সব ছেড়ে চলে যেতে হলো তাকে। গত ১০ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। চট্টগ্রামের সার্সন রোড এলাকায় নুদরাতকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এভাবেই অঙ্কুরেই বিলীন হয় নুদরাতের স্বপ্ন। ১৭ মার্চ তাহেরপুরে সাত বছরের এক শিশুকে মাটিতে আছড়ে ফেলে কাস্তে (ধান কাটার কাঁচি) দিয়ে হাতের তিনটি আঙুল কেটে দিয়েছেন অদুদ নামে এক ব্যক্তি। মোবাইল চুরির অভিযোগে নরসিংদীর শিবপুরে আজিজা আক্তার (১৪) নামে এক কিশোরীকে গাছের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। ১৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে আড়াইহাজারে পরপুরুষের সঙ্গে মায়ের অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় দুই সন্তানকে মা ও তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া বড় ছেলে হৃদয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় ছোট ছেলে জিহাদ। এমন নিষ্ঠুর ঘটনা আদিম বর্বরতাকেও হার মানায়। চট্টগ্রাম মহানগরীতে নিজের বাবার বিরুদ্ধে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৬ মার্চ এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাবাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। তার আগের মাসে ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সার্সন রোডের পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে নয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর কুপিয়ে হত্যা করা হয়। শিশুটিকে ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপানো হয়। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে পারিবারিক অস্থিরতা। স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যার ঘটনা যেমন ঘটছে, ঠিক তেমনিভাবে পাষণ্ড স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যার মতো ঘটনাও। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১৮৭ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। নিষ্ঠুর বর্বরতার শিকার হচ্ছে শিশু ও নারী। বাড়ছে ধর্ষণের মতো অনৈতিক কর্মকা-। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়ে উল্টো ভিকটিম ও তার পরিবারই পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে। সমাজে এই ধরনের অপরাধ খুবই মর্মান্তিক ও বিভীষিকাময়। এ অপরাধ সভ্য সমাজে কাছে কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের বর্বরতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সমাজকে আরও সচেতন হতে হবে। প্রশ্ন উঠেছে, সমাজে নিষ্ঠুরতার ব্যারোমিটার কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনীর নিশ্চয়ই এসব বিষয় অজানা নয়। দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকল্পে এ ধরনের মামলার আসামিদের দ্রুত এবং উপযুক্ত বিচার হওয়া জরুরী। না হলে এই জাতীয় অপরাধ থেকে সমাজকে মুক্তি দেয়া সম্ভব নয়। লেখক : সাংবাদিক [email protected]
×