ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

টেকনাফে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর তান্ডব

শতাধিক পরিবারের নির্ঘুম রাত

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

শতাধিক পরিবারের নির্ঘুম রাত

এইচ এম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ টেকনাফের বহুল আলোচিত অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা ডাকাত ও ভয়ঙ্কর জঙ্গী আবদুল হাকিমের সেকেন্ড ইন কমান্ড রোহিঙ্গা জঙ্গী নুর হাফেজ সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হোয়াইক্যং নয়াবাজার এলাকায় একের পর এক ত্রাস সৃষ্টি করে চলছে। সশস্ত্র পাহারা বসিয়ে নিরীহ লোকজনকে রাতে অবরুদ্ধ করে রাখায় নয়াবাজার এলাকার শতাধিক পরিবারের সদস্য নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশ্য পুলিশও এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ আড়াল হয়ে পড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। পুলিশ চলে গেলে সন্ত্রাসীরা ফের তৎপর হয়ে ওঠে। নুর হাফেজের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ ডজনাধিক মামলা থাকার পরেও পুলিশ গ্রেফতার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। পুলিশ বলছে, ওই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৪ সালে মিয়ানমার মংডু কোয়ারবিল এলাকার দিল মোহাম্মদ শানুর পুত্র বার্মাইয়া নুর হাফেজ পালিয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং বিজিবি চেকপোস্ট সংলগ্ন রোহিঙ্গা টালে আশ্রয় নেয়। পরে আস্তানা গেড়ে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে। সম্পর্ক গড়ে তোলে ভয়ঙ্কর জঙ্গী হাকিম ডাকাতের সঙ্গে। পরে নয়াবাজার পূর্বপাড়ার আবদুল মজিদের বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং সেখানে গড়ে তুলে বসতবাড়ি। সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অল্পদিনে পরিচিতি পাওয়ায় নুর হাফেজকে বিভিন্ন ব্যক্তি সন্ত্রাসী কর্মকা-ে তাকে ভাড়ায় নিয়ে যায়। অভিযোগে জানা যায়, বার্মাইয়া নুর হাফেজ সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পাশাপাশি ডাকাতি, ইয়াবা কারবার, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের মতো ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ তার শিকার হন নয়াবাজার পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়ার জলিল আহমদের ছেলে আবদুল গাফ্ফারের পরিবার। স্থানীয় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিনের মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে ভাড়া করে গিয়াস উদ্দিনরা। ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় গাফ্ফারের ছোট ভাই তাজ মোহাম্মদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত তাজ মোহাম্মদকে প্রত্যক্ষদর্শীরা উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এদিকে, কুপিয়ে আহত করার পরও ক্ষান্ত না হয়ে বার্মাইয়া নুর হাফেজসহ তার সশস্ত্র বাহিনী ওইদিন রাতে দ্বিতীয় দফায় আবদুল গাফ্ফারের বাড়ির সামনে গিয়ে ফাঁকাগুলি বর্ষণ করে, বাড়ির গ্লাস ভাংচুরসহ এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। গত ২১ এপ্রিল রাতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নুর হাফেজ ভাড়া করা একদল রোহিঙ্গা নিয়ে আবদুল গাফ্ফারের বাড়িসহ পুরো এলাকা ঘিরে সশস্ত্র পাহারা বসায়। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার মানুষ অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় ঘটনাটি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। টেকনাফ থানার ওসি রণজিত কুমার বড়ুয়াকে এলাকাবাসী ঘটনাটি অবহিত করলে তিনি তাৎক্ষণিক পুলিশ প্রেরণ করেন। হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি শাহজাহান, টেকনাফ থানার স্পেশাল ফোর্সসহ একদল পুলিশ ওই এলাকায় সকাল পর্যন্ত অবস্থান ও টহল দেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে বড় ধরনের সংঘাত থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করে। তবে, এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরপরই ২২ এপ্রিল নুর হাফেজের নেতৃত্বে ১৫-২০ সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাকে জড়ো করা হয় এবং নয়াবাজার পূর্বপাশের ব্রিজের পাশে অবস্থান নিয়ে ফাঁকাগুলি বর্ষণের মাধ্যমে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এতে আহত তাজ মোহাম্মদ ও আবদুল গাফ্ফারের পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। এ ধরনের সশস্ত্র পাহারা বসিয়ে জনগণকে অবরুদ্ধ করে রাখা ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়ার কারণে এলাকার শতাধিক পরিবারের সদস্যরা ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
×