ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

যশোরের আমজাদ মোল্লাসহ ৫ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

যশোরের আমজাদ মোল্লাসহ ৫ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যশোরের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ (৭৭) পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটি তদন্ত সংস্থার ৬৩তম প্রতিবেদন। সোমবার ধানম-ি কার্যালয়ে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা, আটক ও শারীরিক নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চার অভিযোগ আনা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সংস্থাটির আরেক সমন্বয়ক সানাউল হক। সানাউল হক বলেন ছয় খ-ের প্রতিবেদনের আসামিদের বিরুদ্ধে আটক, নির্যাতন, হত্যার চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। মঙ্গলবারই এ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে দাখিল করা হবে। আসামিদের মধ্যে আমজাদ হোসেন মোল্লা (৭৭) গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকিরা পলাতক। আমজাদ হোসেন মোল্লার বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া থানার প্রেমচারা গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। বাকি চারজন পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতারের স্বার্থে পলাতকদের নাম প্রকাশ করেনি তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় এক বছর পর চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। মামলাটি তদন্ত করেছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ আঃ রাজ্জাক খান। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার এটি ৬৩তম প্রতিবেদন। আসামিদের বিরুদ্ধে যশোরের বাঘারপাড়া থানার ২ নম্বর বান্দবিলা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর, পাইদঘাট ও প্রেমচারা গ্রামের বিভিন্ন স্থানে আটক, শারীরিক নির্যাতন ও ছয়জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ছয় খ-ের প্রতিবেদনের প্রতিটির পৃষ্ঠা ৬০ করে। দালিলিক প্রমাণ হিসেবে যশোর জেলা প্রশাসকের পাঠানো বাঘারপাড়া উপজেলার রাজাকারদের তালিকা যুক্ত করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে যে চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো। অভিযোগ-১: মুক্তিযুদ্ধের বছর ৩ ভাদ্র দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাঘারপাড়া থানার উত্তর চাঁদপুর গ্রামের মোঃ ময়েনউদ্দিন ওরফে ময়নাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায় আসামি মোঃ আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা। সেখানে তিনদিন আটক রেখে নির্যাতন করে ৬ ভাদ্র দুপুর ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে আসামি মোঃ আমজাদ হোসেন মোল্লা গুলি করে হত্যা করে ময়নাকে। অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই দুপুর ১টার দিকে আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা বাঘারপাড়া খাজুরা বাজার থেকে ডাঃ নওফেল উদ্দিন বিশ্বাসকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরদিন দুপুর ১২টায় থানা সদরের মহিরাম গ্রামের মাঠে গুলি করে করে হত্যা করে। অভিযোগ-৩: আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা ১৯৭১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ৮-৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী সুরত আলী বিশ্বাস, মোক্তার বিশ্বাসকে তাদের বাড়ি থেকে ধরে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে তিনদিন নির্যাতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ কুয়ায় ফেলে দেয়। অভিযোগ-৪: মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের পার করে দেয়ার কারণে মাগুরার শালিখা থানার সীমাখালী বাজার ঘাটের মাঝি রজব আলী বিশ্বাসকে ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা ধরে নিয়ে যায়। পরে প্রেমচারা গ্রামের চিনারাশি আম বাগানে নিয়ে রজব আলী বিশ্বাসকে জবাই করে হত্যা করে।
×