ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অশুভ শক্তি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে এটা হোক নববর্ষের প্রতিজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

অশুভ শক্তি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে এটা হোক নববর্ষের প্রতিজ্ঞা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ-বিদেশের সকল বাঙালীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, এই নতুন বছর আমাদের জন্য শুভ ফল নিয়ে আসুক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবÑ এটাই নববর্ষে আমাদের প্রতিজ্ঞা। দেশের ঐতিহ্য, ভাষা এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাধাসৃষ্টিকারী কোন অশুভ শক্তি যাতে আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫-এর শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। ‘শুভ নববর্ষ’ বলে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। গণভবনে গান আর আপ্যায়নে উৎসবের আমেজে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়। অনুষ্ঠানে বাঙালী ঐতিহ্যপূর্ণ খাবার মিঠাই, মোয়া, মুড়ি-মুড়কি, মুড়লি, কদমা, জিলেপি প্রভৃতি দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাঙালী, বাংলাদেশ আমাদের দেশ এবং বাংলা আমার ভাষা’ বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্য আমাদের সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে। আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের ওপর আঘাত করবে এমন কাউকে ক্ষমতায় না আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপন একটি সার্বজনীন উৎসব। ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলে একাত্ম হয়ে এ উৎসবটা উদযাপন করে। এমনকি প্রবাসে বসবাসকারী বাঙালীরাও উদযাপন করে। আমাদের সরকারী, বেসরকারী পর্যায়ে, সাধারণ জনগণ-সকলেই উৎসবটা উদযাপন করে। এমনকি আমাদের একদম গ্রাম পর্যায় পর্যন্তও এ উৎসব উদযাপন হয়। কারণ এখানে সকলে খুব মন খুলে একাত্ম হয়ে উদযাপন করতে পারে। সেই সুযোগটা সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এ উৎসব উদযাপনে যত বাধাই আসুক, বাঙালী কখনও কোন বাধা মানে না। এ জাতি বাধা ভাঙতে জানে। পুরনো বছরের সমস্ত হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে নতুনভাবে আবার ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করা, হালখাতা খোলা, নতুনভাবে আবার যাত্রা শুরু করা; এটাই ছিল একটা ঐতিহ্য। শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে। সব দেশেই নববর্ষের অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র এই উপমহাদেশে শুধু বাংলাদেশ। কাজেই এখানে নববর্ষের উৎসব এক ভিন্ন মাত্রা লাভ করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি, বাংলায় হাসি, বাংলায় কাঁদি, বাংলায় জীবন চর্চা করি। তিনি বলেন, সবাই মন খুলে একাত্ম হয়ে যাতে এ উৎসব পালন করতে পারে, সেজন্য তাঁর সরকার বৈশাখী ভাতার ব্যবস্থা করেছে। সরকারী ও বেসরকারী সেক্টরে এখন এ ভাতা চালু হয়েছে। এদেশে অতীতে বর্ষবষণ উৎসবে নানারকম প্রতিবন্ধকতা থাকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশী সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ষড়যন্ত্র ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের অনেককেও বাঙালীর বর্ষবরণে বাধা প্রদান করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘১৯৯২ সালে আমরা ১৪০০ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু সেখানে তৎকালীন খালেদা জিয়া সরকার বাধা দেয়। আমরা কবি সুফিয়া কামালকে নিয়ে সেসব বাধা উপেক্ষা করে রমনা পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নতুন শতাব্দীকে বরণ করি। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ একটা ভিন্নখানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছিল। এমনকি পরাজিত শক্তি, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তাদের একটা প্রচেষ্টা ছিল, যেন বাংলাদেশ তাদের আদর্শে গড়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের ১৪০০ সাল কবিতাটির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা না বোঝে রবীন্দ্রনাথ, না বোঝে নজরুল ইসলাম। তাদের মনে তো শুধু পেয়ারে পাকিস্তান।’ প্রথমে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মুকুল বোস, সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামিম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সাম্যবাদী দলের নেতা দিলীপ বড়ুয়া তাঁর দল এবং ১৪ দলীয় জোটের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, যুব লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসেসিয়েশনের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। বক্তৃতার পরে প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত অতিথিরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা ১৪২৫ সালের নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শনিবার দেশের সকল যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ গত বছরের মতো এবারও রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে অবস্থিত শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠান। সকালে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ও সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর এ শুভেচ্ছা উপহার পৌঁছে দেন। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের মতো প্রতিটি জাতীয় দিবস ও উৎসবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করায় তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও তাঁকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া মোহাম্মদপুরে ১৩তলা বিশিষ্ট আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ নির্মাণসহ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের আবাসনের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তারা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের পরিবারের সদস্যরা জানান, আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলেই কেবল তারা যথাযথ সম্মান পান। তারা প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
×