ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখ বরণে উপচেপড়া ভিড়

বিপণিবিতান, বুটিক হাউসে পোশাক কেনার ধুম

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

বিপণিবিতান, বুটিক হাউসে পোশাক কেনার ধুম

এম শাহজাহান ॥ বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ ঘিরে সাদা-লালের পোশাক শাড়ি-পাঞ্জাবি কেনার ধুম পড়েছে। সারাদেশে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার রাজধানীর পোশাক মার্কেটগুলোতে সকাল থেকে ছিল উপচেপড়া ভিড়। গরমের কথা মাথায় রেখে সুতির আরামদায়ক পোশাক তৈরি করেছে বুটিকের দোকানগুলো। নক্সায় ছিল লোকজ ঐতিহ্যের প্রাধান্য। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে শিশুদের পোশাক। পুরান ঢাকার র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিটের শো-রুমগুলোতে সকাল থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হওয়ায় খুশি বিক্রেতারা। এছাড়া শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, গাউসিয়া, বেইলী রোড, নিউমার্কেট এবং মিরপুরের বেনারশি পল্লীতে শেষ দিনে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসব দোকানে মেয়েদের শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, টপস, কুর্তি, ফতুয়া এবং এর সঙ্গে মিলিয়ে প্যান্ট, ঢোল পায়জামা, পালাজ্জো বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন বয়সী ছেলেদের পাঞ্জাবি-পায়জামা, ফতুয়া, টি-শার্ট, কিশোরদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কিশোরীদের ফ্রক, সালোয়ার-কামিজ বিক্রি হতে দেখা যায়। এসব পোশাকে সাদা জমিনের ওপর লালের প্রাধান্য ছিল। তবে সাদা-হলুদ, সাদা-নীল, সাদা-বেগুনি পোশাকও ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া দেশীয় বুটিকের দোকানগুলোর মধ্যে কে ক্রাফট, নিপুণ, অঞ্জন’স, বিশ্ব রং ও বাংলার মেলায় ক্রেতাসমাগম দেখা গেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় মহিলাদের পাশাপাশি চাকরিজীবী পুরুষ ক্রেতাদের দেখা গেছে মার্কেটগুলোতে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের চৌধুরী কিরণ জনকণ্ঠকে বলেন, শেষ মুহূর্তে বৈশাখী পোশাকের কেনাকাটা বেড়েছে। এ মাসের শুরু থেকেই দোকান ও শো-রুমগুলোতে বৈশাখী পোশাক উঠানো হয়। বিক্রি-বাট্টাও ভাল হচ্ছে। তিনি বলেন, শব-ই-বরাত ও রোজা সামনে রেখে ঈদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। আশা করছি, আগামী কয়েক মাস পোশাকের ব্যবসা ভাল হবে। এদিকে, বৈশাখী পোশাকের দাম নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা ছিল বলে জানান বিক্রেতারা। এবার শাড়ির দাম রাখা হয়েছে ৮শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। থ্রি-পিস দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা। বয়সভেদে বাচ্চাদের পোশাকের দাম ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিটের গ্রামীণ ইউনো ক্লোর বিক্রেতা ফারজানা সাথী জনকণ্ঠকে বলেন, এবার বৈশাখী কেনাকাটা ভাল হয়েছে। নতুন পোশাক যা উঠানো হয়েছিল তার অধিকাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। বেইলী রোডের ক্রে ক্রাফটের দোকানে পোশাক কিনছিলেন আকতার হোসেন। তিনি বলেন, নিজের ও তার ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কিনেছেন। শোরুমগুলোর পাশাপাশি নানান ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছে রাজধানীর বিপণিবিতানগুলো। বিক্রিও ভাল হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার বুটিক ও ফ্যাশন হাউস রয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ, সদরঘাট, জিঞ্জিরা এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি করা হয়েছে বৈশাখী পোশাক। লাল-সাদার পাশাপাশি এখন কালারফুল ও আরামদায়ক পোশাকের দিকেই মানুষের ঝোঁক বেশি। তাই ডিজাইনাররাও এসব দিক মাথায় রেখে বেছে নিয়েছে সুতি, তাঁত, হাফসিল্ক, টাঙ্গাইল, জামদানি এসব কাপড়। এরইমধ্যে গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই বৈশাখী আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। বৈশাখ ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বৈসাবি, বিজু অনুষ্ঠান। এত জন-জীবনেও যেন নতুন মাত্রা যোগ করছে। এছাড়া পোশাকের পাশাপাশি ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যও বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। বৈশাখী ঝড়ো অফার দিয়ে অনেকে ডিসকাউন্টে পণ্য বিক্রি করছে। পান্থপথের আকতার ফার্নিচারের বিক্রেতা রায়হান জানান, বৈশাখ সামনে রেখে ফার্নিচার বিক্রি বেড়েছে। টিভি, ফ্রিজ এবং ওভেনের মতো ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের বিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া খাদ্যপণ্যের বিশেষ করে মিষ্টি ও দই ধুমছে বিক্রি হচ্ছে। মগবাজারের বনফুলের বিক্রেতা মামুন জানালেন, গত দু’দিন ধরে তাদের মিষ্টি ও দই বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। ওই দোকানে মিষ্টি কিনছিলেন কামরুল হাসান। তিনি জানান, পহেলা বৈশাখে মিষ্টি ও দই দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হবে।
×