ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস বিকৃতি রোধে বাংলাদেশে আইন চায় নির্মূল কমিটি

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১১ এপ্রিল ২০১৮

ইতিহাস বিকৃতি রোধে বাংলাদেশে আইন চায় নির্মূল কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন সময় নানাভাবে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কিংবা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখনো ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চলমান আছে। তাই ইতিহাস বিকৃতি রুখে দিতে ইউরোপীয় দেশের মতো বাংলাদেশেও আইন চায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। মঙ্গলবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধে আইন চাই’ শীর্ষক সেমিনারে আইনের বিষয়ে জোরালো দাবি জানানো হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শক্তি ছাড়া বাংলাদেশে কারও অস্তিত্ব থাকার কোন সুযোগ নেই। এই জায়গাটিতে আপোষ করার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশে ক্ষমতায় যে থাকবে তাকেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হতে হবে, যে বিরোধীদলে থাকবে তাকেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হতে হবে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতাতেও থাকতে হবে, বিরোধীদলেও থাকতে হবে। যারা এদেশের রাজনীতি করবেন, যারাই এদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেবেন, তাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার সুযোগ নেই। মন্ত্রী বলেন, আমরাতো ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পেয়েই নানাভাবে প্রস্তুতি নিলাম। ভাষণেতো বলেই দিলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ ঘরে তুলতে, যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে। আমরা কালুরঘাটের ঘোষণা কখনও শুনি নাই। আমরা বেতারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছি। এসব দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। এসব নিয়ে বিতর্ক করার কোন সুযোগ নেই। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এটার মূলতো সেই ৭ই মার্চ। মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমি জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা মনে করি না। কেন না অনেকেই এ নিয়ে অনেক গ্রন্থ লিখেছেন। যুদ্ধে সবার বিস্তারিত থাকলেও জিয়া কোথায় কিভাবে যুদ্ধ করলেন তার কিছুই পাওয়া যায় না। আাইন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আইনতো করাই যায় এর পাশাপাশি তরুণদের সচেতন করে তুলতে হবে। মূল প্রবন্ধে নির্মূল কমিটির সভাপতি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, ৭১ এর গণহত্যা এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি এমন ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক কথা বলছে যা বাংলাদেশের স্বাধীন সার্বভৌম সত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। শাহরিয়ার কবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপির অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য ইতিহাস বিকৃতি বললে যথেষ্ট হবে না। বিএনপির এসব বক্তব্য বাংলাদেশকে সুদূরপ্রসারী জামায়াতি পরিকল্পনা। গণহারে যে মিথ্যাচার হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। স্বাধীনতাপত্র অস্বীকার করা মানে আন্তর্জাতিক আইনে স্বাধীনতা যুদ্ধকে অস্বীকার করা। শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ইউরোপীয় অনেক দেশে এটি একটি শক্ত আইন। এটি ২৬টি দেশে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য আমরা সরকারকে বলছি আইন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, একটি খুশির খবর হচ্ছে আইন কমিশন আমাদের সঙ্গে বসে একটি খসড়া করেছি যা এখন আইন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। তা এখন পাস করতে হবে। সাবেক বিচারপতি এএইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, মৌলবাদীদের গভীর যড়যন্ত্র সত্ত্বেও মঙ্গল শোভাযাত্রা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। মুজিবনগর সরকার যদি না থাকতো তাহলে ভারত-ভুটান আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসারে বাংলাদেকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি পেত না। এজন্য স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি পরিবারের সদস্য কুলাঙ্গার লন্ডনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। অশিক্ষিত মায়ের অশিক্ষিত ছেলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে। এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ। এই কুলাঙ্গারের মা খালেদা জিয়া বলেছেন ত্রিশ লাখ শহীদ হননি। জিয়াউর রহমানও স্বাধীনতাবিরোধী কাজ করেছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশু পার্ক করে মুক্তিযুদ্ধকে পাকিস্তানের পরাজয় চিহ্ন মুছে দিতে চেয়েছিলেন। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে কটাক্ষ করলেন যদিও মামলা হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে আইনটি খুবই দরকার। যাতে আর কোন কুলাঙ্গার এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, আমরা প্রতিবছরই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছি। আমাদের মনস্তাত্ত্বিকে ডুকিয়ে দেয়া হয়েছে বিএনপি একটি বিরোধী দল কিন্তু না, তারা একটি পাকিস্তানী দল। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে এ প্রজন্মের সম্মুখ ধারণা নেই। মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, জিয়া নিজেও কখনও স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন দাবি করেননি, কারণ তাহলে তাকে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হতে হতো। কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। এখন যা হচ্ছে, তা আইন না থাকার কারণেই। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন তারা বাংলাদেশেরও বিরোধিতা করেন। এ দেশে তাদের নির্বাচন করতে দেয়া উচিত কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গণহত্যার একটি অনন্য দলিল। আমরা গণহত্যাকারীদেরকে নানাভাবে পুনর্বাসন করতেও দেখেছি। যারা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচার হওয়া উচিত। এই অপরাধের কোন ক্ষমা হতে পারে না। যারা ইতিহাস বিকৃতি করেছেন তারা এখনও করছেন এজন্যই এই আইনটি হওয়া জরুরী। যাতে আমরা আরও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি। সাবেক বিচারপতি নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হুদার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। এ সময় নিমূর্ল কমিটির অন্যরাসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
×