ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিপণিবিতান, বুটিক হাউসে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১১ এপ্রিল ২০১৮

বিপণিবিতান, বুটিক হাউসে উপচেপড়া ভিড়

রহিম শেখ ॥ আসছে পহেলা বৈশাখ। এই উৎসবকে বর্ণিল করতে রাজধানীর বিপণিবিতান ও বুটিক হাউসে এখন ক্রেতার ভিড় চোখে পড়ার মতো। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্রেতারা ছুটেছেন দোকানে দোকানে। বিকেলের দিকে ক্রেতার বাড়তি চাপে বসুন্ধরা, যমুনাসহ বড় বড় মার্কেটের সামনে ছিল দীর্ঘ যানজট। নগরীর অন্য সব শপিংমলেও ছিল বৈশাখী কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতাদের ভিড়। দিনভর ভ্যাপসা গরম আর দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে মিরপুর ১ ও ২ এবং বেইলি রোডের দোকানপাটে বৈশাখী কেনাকাটায় শামিল হয়েছিলেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর বৈশাখেই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। তাই এত ভিড়। এদিকে ফুটপাথও ছেয়ে গেছে বৈশাখী সামগ্রী ও রকমারি পোশাকে। একদিকে চৈত্র মাসের গরম, অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার চিরচেনা যানজট। তারপরও প্রখর রোদ উপেক্ষা করে বৈশাখের কেনাকাটা সারতে ক্রেতারা ছুটেছেন শপিংমল, মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে। এদিন বৈশাখের অনুষঙ্গ শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতোয়া কিনতে বুটিক হাউসে ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। রাজধানীর পোশাকের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড়, লাল সাদা পোশাকের বিচ্ছুরণ-বুঝতে কষ্ট হয় না বৈশাখী আয়োজনে ভরে উঠেছে বুটিক হাউসগুলো। নতুন ডিজাইন, রঙের নিরীক্ষা সবকিছুই চোখে পড়ছে এবারের বৈশাখী পোশাকের আয়োজনে। কয়েক বছর ধরেই ঈদ বা পূজার পরই বৈশাখ যেন সার্বজনীন উৎসবের আমেজ নিয়ে উপস্থিত হয় জাতির সামনে। বাঙালীর নববর্ষ তাই দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর শোরুমগুলোর দিকে সবারই এ সময় অন্যরকম আগ্রহ থাকে। পহেলা বৈশাখে শাড়ি বা পাঞ্জাবি যাই হোক না কেন ক্রেতার প্রথম আকর্ষণ থাকে লাল সাদা কম্বিনেশনের দিকে। আর সাদা বা ঘিয়ে গরদে টকটকে লাল পাড়ের শাড়ি পরা যেন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। আর ছেলেদের জন্য গিলে করা সিল্কের পাঞ্জাবি। তবে হাল ফ্যাশনে শুধু সাদা লালে আটকে নেই পোশাকের রং। বরং বাঙালী ঐতিহ্যের রঙের বাইরে গিয়ে উৎসবকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন রংকেই বেছে নিচ্ছেন ক্রেতারা। অঞ্জনসের স্বত্বাধিকারী শাহীন আহমেদ বলেন, বৈশাখে এখন প্রতিটি ফ্যাশন হাউস নতুন নতুন থিম নিয়ে কাজ করে থাকে। তবে ফোক মোটিফ বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির ৭ম তলায় রয়েছে দেশের নাম ১০টি ফ্যাশন হাউস। যা ‘দেশীদশ’ নামে পরিচিত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিপুণ, কে-ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, রং, বাংলার মেলা, সাদাকালো, বিবিয়ানা, দেশাল, নগরদোলা ও সৃষ্টি। বৈশাখের রং লাল-সাদা পোশাকের প্রাধান্য দেশীদশের সবগুলোতেই। তবে অন্য রঙের পোশাকও বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। সকাল ১০টা থেকেই দেশীদশে ছিল ক্রেতাদের সমাগম। তবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে ভিড় আরও বাড়ে। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে কথা বলার ফুরসতও ছিল না দোকানের বিক্রয়কর্মীদের। দেশীদশের প্রতিটি শোরুমেই ছোট থেকে বড় সব বয়সী ক্রেতার সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। বিক্রেতারা ক্রেতাদের পছন্দ ও চাহিদামতো পোশাক দেখাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবু শেষ পর্যন্ত ক্রেতারা পছন্দসই পোশাক খুঁজে পাচ্ছেন দেখে স্বস্তিবোধ করছেন তারা। রঙের বসুন্ধরা সিটি শাখার ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বললেন, পহেলা এপ্রিল থেকেই বৈশাখের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। এবার পোশাকে লাল-সাদার পাশাপাশি সবুজ, নীল, মেরুন রং প্রাধান্য পেয়েছে। নক্সায় বাংলার লোকজ বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ধানম-ির সায়েন্স ল্যাবরেটরির আড়ং আউটলেটের সুপারভাইজার রেহানা আক্তার বললেন, বৈশাখে এখন আর শুধু লাল-সাদা রঙের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না; তাই আমরা অরেঞ্জ, হলুদ, নীলসহ অন্য রংগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। শাড়ির দাম পড়ছে ৬ থেকে ২২ হাজার টাকা। পাঞ্জাবির দাম পড়ছে ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে। আর সিল্কের পাঞ্জবি পাওয়া যাচ্ছে ২৫০০ থেকে ৭০০০ টাকায়। পহেলা বৈশাখের দিন নতুন পাঞ্জাবি পরে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাবিব। তার কাছে পাঞ্জাবি কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে ফয়সাল বলেন, আমি প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখে পাঞ্জাবি কিনে থাকি। গত বছর একটি পঞ্জাবি কিনেছিলাম ১১শ’ টাকা দিয়ে, এ বছর একই কাপড়ের পাঞ্জাবি কিনলাম ২ হাজার টাকায়। দাম একটু বেশি হলেও এবার ডিজাইনে নতুনত্ব আছে। কর্ণফুলী শপিং কমপ্লেক্সের পাঞ্জাবি ও ফতুয়া বিক্রেতা বিল্লাল হোসেন ও শামসুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমাদের বিক্রি বেড়েছে। এবার বৈশাখী কাপড়েও বিশেষ নতুনত্ব এসেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরা শপিংমলসহ বিভিন্ন বিপণিবিতান ও বুটিক হাউজ ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখী কেনাকাটায় শামিল হতে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ছিল উপচেপড়া ভিড়। ভ্যাপসা গরম আর যানজট ঠেলেই মঙ্গলবার দুপুরে ধানম-ির বাসিন্দা আওয়াল খন্দকার ও তার স্ত্রী ফারহানা সুলতানাকে নিয়ে শাড়ি কিনতে এসেছেন বসুন্ধরা শপিংমলে। তিনি বললেন, গত কয়েকদিন ধরেই নগরীতে প্রচ- গরম অনুভব করছি। পাশাপাশি দীর্ঘ জ্যাম তো আছেই। গত কয়েকদিন এই অবস্থা দেখে অবশেষে কেনাকাটা করতে চলেই আসলাম। বিশেষ করে বৈশাখ বলে কথা। নতুন ও রঙিন পোশাক কেনাটা উৎসব পালনের জন্য যেন একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিন রাজধানীর বেইলি রোডেও ছিল ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। এ বছর বিক্রি ভাল হয়েছে বলে জানালেন কালারস এ্যান্ড প্যাটার্নের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি বললেন, কালারস যাত্রা শুরু থেকেই ক্রেতাদের কাছ থেকে খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি। মঙ্গলবার আজিজ সুপার মার্কেট, মিরপুর রোড ও মিরপুর ১ ও ২ নম্বরের দেশীয় বুটিক হাউসগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় ছিল ঠাসা। শুধু বিত্তবানরা নন, বৈশাখের কেনাকাটা করছেন নিম্ন আয়ের ক্রেতারাও। ফার্মগেট, গুলিস্তান, মতিঝিল ও নিউমার্কেটের ফুটপাথে বিশেষ করে শিশুদের লাল-সাদা শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতোয়া বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।
×