ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর-বেনাপোল সড়ক

অবশেষে গাছ রেখেই টেন্ডার

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৭ এপ্রিল ২০১৮

অবশেষে গাছ রেখেই টেন্ডার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ অবশেষে গাছ রেখেই ২ লেনের যশোর-বেনাপোল সড়ক নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ খুলনা জোনাল অফিস থেকে ৩শ’ ৩০ কোটি টাকার এ টেন্ডার আহ্বান করা হলো। সড়কটি এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করার উপযোগী করতে এবং আন্তর্জাতিক মানের স্থলবন্দরটিতে যানবাহনের ব্যাপক চাপের বিষয়টি বিবেচনা করে ছয় লেন সময়ের দাবি বলে সংসদীয় উপকমিটি মতামত দিলেও শেষমেশ তা ধোপে টেকেনি। ২ লেনের জন্য আহ্বান করা টেন্ডারে ইতোমধ্যে দেশের বড় বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে শুরু করেছে। অনেকে টেন্ডার জমাও দিয়েছেন। আগামী মাস থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। একই সঙ্গে আপাতত চলাচলের জন্য সংস্কারে যে ২৭ কোটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তাও বাতিল করা হয়েছে। বেনাপোল আন্তর্জাতিক মানের স্থলবন্দর। এখানে আমদানি-রফতানি অন্য সব বন্দর থেকে কয়েকগুণ বেশি। আর সড়কটিতে যানবাহনের চাপ দেশের অন্য সড়ক-মহাসড়কের তুলনায় সর্বাপেক্ষা বেশি। দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি গত কয়েক বছর বেহালদশায় রূপ নেয়ায় সরকার গত বছরের ২১ মার্চ ৩শ’ ২৯ কোটি টাকার এই প্রকল্প হাতে নেয়। আর সড়কের দু’পাশের গাছ কেটে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়। যানবাহনের চাপ সামলাতে ২৪ ফিট প্রস্থের রাস্তাটি ৪০ দশমিক ৩৫ ফিট চওড়া করার সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত হয়। প্রকল্প পাশ হলে, যখন সম্প্রসারণ কাজ শুরু হবে, তখন হঠাৎ গাছ কাটার পক্ষে-বিপক্ষে মতামত তৈরি হয় যশোরে। প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক ও কয়েক হাজার অন্যান্য পরিবহন আসা-যাওয়া করা সড়কটি এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করতে এবং দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের অতীব প্রয়োজনীয় এ সড়কটি সম্প্রসারণ করা ছাড়া বিকল্প নেই বলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মতামত ওঠে। হঠাৎ একটি পক্ষ প্রাচীন এসব গাছ রেখে রোড সম্প্রসারণের দাবি তোলেন। এমনকি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দোহাই দিয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। গত ১৮ জানুয়ারি উচ্চ আদালত ৬ মাসের জন্য গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশনা দেন। আর এতে যশোর-বেনাপোল রোড সম্প্রসারণ কাজ ঝুলে যায়। এরপর বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান ও নির্মাণ দ্রুত করতে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় ৩ নম্বর উপকমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। গত ২৩ মার্চ কমিটির প্রধান কিশোরগঞ্জ ৪ আসনের এমপি রেজোয়ান আহমেদ তৌফিকের নেতৃত্বে কমিটির সদস্য পিরোজপুরের সংসদ সদস্য এম এ আওয়াল, পঞ্চগড়ের সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান ও ঝিকরগাছা-চৌগাছা আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম এ সড়ক পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তারা যশোরের সচেতন নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় বলেন, যশোর বেনাপোল মহাসড়কটি ছয় লেন করা এখন সময়ের দাবি। সময়ের প্রয়োজনে গাছ কেটে হলেও সড়কটি অধিকতর প্রশস্ত করার বাস্তবতা এসে গেছে। সড়কটি এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করার উপযোগী করতে এবং আন্তর্জাতিক মানের স্থল বন্দরটিতে যানবাহনের ব্যাপক চাপের বিষয়টি বিবেচনা করে ছয় লেন করা উচিত। কিন্তু ওই টিম ঢাকায় যাওয়ার কয়েকদিন পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় ৪ কিংবা ৬ লেন নয়, গাছ রেখেই হবে ২ লেন। রাস্তার ৩১২টি গাছ রেখেই যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক প্রশস্ত হবে। মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটার যেখানে গাছ নেই, সেখানে ৪০ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে। আর যেখানে গাছ আছে সেখানে গাছ রেখে যতদূর সম্ভব প্রশস্ত করা হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ১ এপ্রিল টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আর টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে সড়ক ও জনপথের জোনাল অফিস খুলনা থেকে। এ টেন্ডার অন লাইনে আহ্বান করা হয়নি। সরাসরি দরপত্র জমা দিতে হবে নির্ধারিত বাক্সে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ও যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী যশোর বেনাপোল মহাসড়কের গাছ রেখে উন্নতমানের ২ লেন করার নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে। টেন্ডার কার্যক্রমও এগিয়ে চলেছে। যেখানে গাছ নেই সেখানে ৪০ ফিট পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্ত করা হবে। আর যেখানে গাছ আছে, সেখানে গাছ রেখে রাস্তার কাজ চলবে। নির্মাণ কাজে কোন রকম অস্বচ্ছতা বরদাস্ত করা হবে না। সড়ক ও জনপথ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম জানিয়েছেন, এপ্রিলের শুরুতেই যশোর-বেনাপোল সড়কের ৩শ’ ৩০ কোটি টাকার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্রে সাড়া মেলাও শুরু হয়েছে। অনেক ঠিকাদার দরপত্র কিনেছেন এবং জমাও দিচ্ছেন। আগামী মে মাসের প্রথম থেকেই টেন্ডার কার্যক্রম শেষ করে মির্মাণ কাজের দিকে এগুনো হবে। ২ লেন হলেও সড়কটি হাইওয়ে স্ট্যান্ডার্ড করা হবে।
×