ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পণ্যের বহুমুখিতা...

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৭ এপ্রিল ২০১৮

পণ্যের বহুমুখিতা...

রফতানি বহুমুখীকরণের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে, চাহিদা অনুযায়ী নতুন পণ্য উৎপাদন এবং নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিভিন্ন দেশের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তির আত্মীকরণ এবং পণ্যের মানোন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী। এই লক্ষ্যে দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে সব জেলা-উপজেলায় এসএমই পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করার কথাও তিনি বলেছেন। যাতে কেন্দ্রগুলো এ শিল্পের প্রসারে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে কাজ করতে পারে। দেশে শিল্প বিকাশে এটি একটি ভাল পদক্ষেপ সন্দেহ নেই। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ব্যবসাসংক্রান্ত পরামর্শ ও সেবা পাওয়ার বিষয়টি সহজ হবে। আসলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এসএমই হলো অর্থনীতির প্রাণস্বরূপ। এটা আজ প্রমাণিত- যেসব দেশের এসএমই যত ভাল সেই সব দেশ ততই এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকেই একসময় সেসব দেশে বড় শিল্প গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশে যদি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকশিত হয়, তাহলে একটা সময় এখানেও বড় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। আশার কথা দেশে এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ আশাব্যঞ্জক। দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ শিল্পই এখাতের অন্তর্ভুক্ত। জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ। কাজেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই আমাদের। সে ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পণ্যের বাজার অনুসন্ধান এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে হবে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি পণ্যের ওপর রফতানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আমাদের এখন রফতানি বহুমুখীকরণের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। চাহিদা দেখে নতুন পণ্য উৎপাদন এবং নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এ কথা সত্য যে, এ খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ধরনের অবদান রাখছে। ভূমিকা রাখছে নারীর ক্ষমতায়নেও। শুধু তাই নয়, এ শিল্প প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নেও বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এক সময় যেসব যন্ত্রপাতি মেশিনারিজ ছিল শতভাগ আমদানিনির্ভর, তা আজ এ দেশেই তৈরি হচ্ছে। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা হচ্ছে। পোলট্রি শিল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের খামার, হস্তশিল্প, প্যাকেজিং শিল্প ইত্যাদির বিকাশ দ্রুত ঘটছে। বর্তমানে এসব শিল্প সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশীয় প্রযুক্তির ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ উদ্ভাবন, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বদলে দিচ্ছে অর্থনীতির দৃশ্যপট। বাংলাদেশের কুটির শিল্পের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। একসময় এ দেশে তৈরি হতো বিখ্যাত মসলিন বস্ত্র। মসলিনের বিলুপ্তি ঘটলেও ঐতিহ্যবাহী জামদানি, নকশি কাঁথা, শীতল পাটি, বেত ও বাঁশের সামগ্রী এখনও বহন করছে ঐতিহ্য। বাংলাদেশে তৈরি মেশিনারিজ এখন চীন-ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্ববাজারে পৌঁছে গেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে ঢাকার ধোলাইখালের মোটর পার্টস ও মেশিনারিজ শিল্প। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বহুমুখী শিল্পাঞ্চল ছাড়াও অনেক স্থানেই আমাদের মনোযোগের আড়ালে গড়ে উঠছে একেকটি যুগান্তকারী শিল্প-কারখানা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এসব হাল্কা ও মাঝারি শিল্পের আরও বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠেছে- এর পেছনে এ খাতের ভূমিকা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার জাতীয় শিল্পনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে শিল্প উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গণ্য করছে। আমাদের বিশ্বাস এ খাতের উদ্যোক্তাদের সার্বিকভাবে সহায়তা করতে সরকার সর্বতোভাবে এগিয়ে আসবে।
×