ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিপোর্টারের ডায়েরি

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৪ এপ্রিল ২০১৮

রিপোর্টারের ডায়েরি

বিড়ম্বনার একটি দিন ২৮ মার্চ বুধবার। অবশ্য সমস্যটা শুরু আগের দিন থেকেই। অফিসের আসার সময় দেখলাম বাচ্চার গা হালকা গরম। জ্বরের লক্ষণ। অথচ পরের দিন তাদের (সাদ রহমান ও তার মা ফারজানা রহমান) বাড়ি যাওয়ার দিন। সে অনুযায়ী বাসের টিকেটও নিয়েছি। আগের দিন অফিসে বসে নিউজ লিখছি। সাড়ে সাতটা বাজে। বউ ফোন দিয়ে জানাল বাচ্চার জ্বর অনেক। প্রায় একশ’ তিনের কাছাকাছি। এ অবস্থায় বাড়ি যাওয়া যাবে না। টিকেট বাতিল করতে হবেই এখনই। হানিফ কাউন্টিারে ফোন দিতে হলো। টিকেট বাতিল না করে একদিন পিছিয়ে নিলাম। যদি এর মধ্যে জ্বর সেরে যায় এই আশায়। কিন্তু হিতে বিপরীত। পরের দিন তার জ্বর আরও বেড়ে গেল। সকালে পরিস্থিতি একটু ভালো মনে হলেও দুপুরের পর আবারও ভীষণ জ্বর। জ্বর নামতে চায় না। সাবোজিটর দেয়া হলো, নাপা খাওয়ানো হলো। কিন্তু কোন কাজই হলো না। ছোট্ট মানুষ। সাড়ে তিন বছরের একটু বেশি বয়স হবে। জ্বরে কাঁপছে। কি করি বুঝে উঠতে পারছি না। এ অবস্থায় পরের দিন বাড়ি ফেরা যাবে না। কিন্তু কাউন্টারে ফোন করে টিকেট একদিন পিছিয়ে নেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়বার পেছানোর সুযোগ নেই। যাত্রা বাতিল করতে হবে। মা বলল এই মুহূর্তে বাড়ি যাওয়ার দরকার নেই। বাবুর শরীরটা সম্পূর্ণ ভাল হোক। তারপর নয় বাড়ি যাওয়া যাবে। দুপুর ২টার পর থেকে জ্বর শুরু। সন্ধ্যায় সাড়ে পাঁচটার পর জ্বর কিছুটা কম মনে হলো। মনে কিছুটা শান্তি অনুভব করছি। তারপর এই অবস্থায় বাড়ি যাওয়া যাবে না। টিকেট বাতিল করতেই হবে। বেশি জ্বরের কারণে বাবুকে রেখে অফিসে আসা সম্ভব হয়নি। ফোন করে আগেই জানিয়ে দিলাম। এবার টিকেট বাতিল করতে হবে। মন থেকে টেনশন যাচ্ছে না। সকালে জ্বর আসার আগেই মিরপুর এক নম্বরে গেছি মায়ের মোবাইল আর বাবুর খেলনা চশমাটা ঠিক করতে। চশমা সারা হলো ঠিকই। কিন্তু মোবাইল সারতেই বড় পেরেশানির মধ্যে পড়তে হলো। আমাকে প্রায় তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে বেটা মোবাইল ঠিক করছে তো করছেই। কিন্তু ঠিক হওয়ার কোন লক্ষণ নেই। বারবার তাগাদা দিচ্ছি। না পারলে ফিরিয়ে দেন। আমার সময় নেই। বেচারাও নাছোড়বান্দা। বলল, দেখছেন তো আপনারটাই ঠিক করছি। বললাম দেখছি। কিন্তু ঠিক না করতে পারলে কি করবেন। তিনঘণ্টা ব্যয় করে মোবাইলটা ফিরিয়ে দিল ঠিকই। কিন্তু যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতেই। অথচ দিতে হলো দেড়শ’ টাকা। বললাম দেখি তো কি সেরেছেন আপনি। কোন কথা বলল না। দেড়শ’ টাকা দিয়ে চলে এলাম ঠিকই। কিন্তু বিড়ম্বর যেন শেষ ছিল না। বাবুর জ্বরের কারণে এখন টিকেও বাতিল করতে হবে। অগত্য সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গেলাম টেকনিক্যাল মোড়ে হানিফ কাউন্টারে। ম্যানেজারকে বললাম ভাই টিকেট একদিন পিছিয়ে নিয়েছি। কিন্তু এরপরও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাচ্চার জ্বার বাড়ছে। জার্নি করা যাবে না। তাই টিকেট বাতিল করে দিতে হবে। পরে কোন এক সময় এসে টিকেট নিয়ে যাব। মানেজার আশ্বস্ত করে বলল. আপনার আসার প্রয়োজন ছিল না। শুধু ফোন করে জানালেই হতো। বললেন যেদিন যাবেন তার আগের দিন জানাবেন। টিকেট রেখে দেব। আশ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরলাম। টিকেট বাতিল না করলে টাকা গচ্চা দিতে হতো। ওইদিন অফিসে না গেলেও ফোনে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিলাম। সব কিছুই ঠিকঠাক মতোই হলো। কিন্তু টেনশন আর বিম্বড়নার মধ্যে দিয়ে দিনটা পার করতে হলো। রাতেও একদফা জ্বর এলো। পরের দিন থেকে জ্বরের কিছুটা উন্নতি। অবশেষে ভালোয় ভালোয় রবিবার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করল সাদ রহমান ও তার মা ফারজানা রহমান। শাহীন রহমান [email protected] বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেতে সংগ্রাম! ৩ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ২০১৭। বাংলাদেশের ফুটবলের তীর্থভূমি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। পেশাদার লীগ ফুটবলের দুটি ম্যাচ কভার করা, প্রেস রিলিজের নিউজ করা, সব নিউজ অফিসে মেইল করে পাঠানো এবং সবশেষে অফিসিয়াল কাজের প্রয়োজনে ফেসবুক ঘাঁটার পর রাত ১০টার দিকে স্টেডিয়াম থেকে বের হতে গিয়ে আমরা চার সাংবাদিক এবং বাফুফের মিডিয়া বয় সাইফুল আহমেদ আবিষ্কার করলাম স্টেডিয়াম থেকে বের হবার দুই দিকের দুটি গেটই তালাবন্ধ! ফলে মহাবিপদে পড়ে গেলাম। এখন কি করি? উপায় অবশ্য একটা আছে। স্টেডিয়ামের প্রশাসক মোবারক হোসেন লিটনকে ফোন করলেই তিনি তালা খোলার ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার- আমাদের কারুর কাছেই লিটন ভাইয়ের মোবাইল নম্বর নেই! তিনি অবশ্য খুব বেশিদিন হয়নি দায়িত্ব নিয়েছেন। এজন্যই তার নম্বরটা নেব নেব করেও নেয়া হয়নি কারুরই। অথচ আমাদের সবার কাছেই আগের প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ভাইয়ের নম্বর আছে। কিন্তু ইয়াহিয়া ভাইকে ফোন দিয়ে লাভ কি? এমনিতেই গরমের সময়। তার ওপর টেনশনে সবাই আরও বেশি ঘামছি। হঠাৎ টেনশন দূর করার উপায় পাওয়া গেল। উপায় বলল প্রথম আলোর বদিউজ্জামান মিলন। একজনের কাছে ফোন করে সে লিটন ভাইয়ের নম্বর জোগাড় করল। সবাই তাকে বাহবা দিলাম। যা হোক, বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের ‘সংগ্রাম’ শুরু হলো। বড় আশা নিয়ে ফোন দেয়া হলো লিটন ভাইকে। কিন্তু বিধিবাম, লিটন ভাই অনেক আগেই বাসায় চলে গেছেন! তারপরও তিনি আমাদের উদ্ধারের জন্য আশ^াস দিলেন। আমিও কিঞ্চিত তৎপর হলাম। পর পর দু’জনকে ফোন দিলাম। একজন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। অপরজন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। অবাক কাণ্ড- দু’জনের বক্তব্যেই দারুণ মিল। তারাও দিলেন আশ^াস। বললেন ব্যাপারটা তারা দেখছেন। কিছুটা ক্ষোভ নিয়েই তাদের বললাম, ‘পেশাদার লীগে সাংবাদিকদের প্রতি এটা কি বাফুফের চরম অপেশাদার আচরণ নয়?’ যাহোক, তিনজনকে ফোন দেয়ার পরেও কেউ আমাদের মুক্ত করতে এগিয়ে এলো না। অথচ অনেকক্ষণ কেটে গেছে। দুশ্চিন্তায় কারও মস্তিষ্কই যেন ঠিকমতো কাজ করছে না। যাহোক, সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে বাফুফের হেড অব মিডিয়া আহসান আহমেদ অমিত ভাইকে ফোন করলাম। কিন্তু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তিনি আবার এককাঠি সরেস। তার ফোনের সংযোগই পাওয়া গেল না বেশ কবার চেষ্টা করেও। এদিকে প্রথম আলোর মাসুদ মাসুদ ভাই চরম বিরক্তি প্রকাশ করছেন। তার ফোন করতেই ইচ্ছে করছিল না, আমাকে দিয়েই মূলত ফোনগুলো তিনি করান। আমাদের শেষ অস্ত্র ছিল বাফুফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাহ্উদ্দিনকে ফোন দেয়া। প্ল্যান ছিল তাকে এভাবে বলার- আমাদের এভাবে আটকে রাখার পরিণাম হবে টিভি এবং পত্রিকায় বাফুফের বিরুদ্ধে নিউজ হওয়া। তবে কপাল ভাল, এই হুমকির আর দরকার হয়নি। শেষে সাইফুল অনেক ডাকাডাকি করে এক কর্মচারীকে খুঁজে পায়। বয়স্ক, দাড়িওয়ালা মুরুব্বি। তিনিই গেটের তালা খুলে দেন। এভাবেই আধঘণ্টার রুদ্ধশ^াস ও রোমাঞ্চকর বন্দীদশা থেকে মুক্তিলাভ করি সবাই। তবে মুক্তি পাবার আগের সময়টাতে আমরা সবাই বেশ মজাও করেছি। করেছি নানান জল্পনা-কল্পনা। ‘ছুটির ঘণ্টার সিনেমার মতো করুণ পরিণতির কথা ভেবেছি। বের হবার কিছু পরিকল্পনাও করেছি। যেমন : গ্যালারি থেকে লাফিয়ে পড়ে স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়া। কিন্তু এতে মৃত্যুঝুঁকি না হলেও হাত পা ভেঙে ‘লুলা’ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকায় সে প্ল্যান বাতিল হয়ে যায়। আরেকটি প্ল্যান ছিল দড়ি সংগ্রহ করে গ্যালারি দিয়ে ঝুলে বা বেয়ে নামা। আবার বলাবলি করেছি, আমরা মুক্তি পেলে একটা মানববন্ধন করব। এবং এই আটকাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ অনশন করব। তবে যার গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, তাকে রেহাই দেয়া হবে! তখন নিশ্চয়ই ইলেকট্রনিক মিডিয়া বুম নিয়ে এসে প্রশ্ন করবে, ‘আপনাদের অনুভূতি কেমন?’ খবরের কাগজে নিশ্চয়ই শিরোনাম হবে, ‘ক্রীড়া সাংবাদিকদের সাইজ করল বাফুফে!’ অথবা ‘বাফুফের এই দায়িত্ব জ্ঞানহীনতা আর কতদিন?’ আমরা এও কল্পনা করলাম এই ঘটনার প্রতিবাদ করে সালাম মুর্শেদীকে একবার বললেই উনি সানন্দে লীগ পিছিয়ে দেবেন! কেননা কথায় কথায় সামান্য ছুতো পেলেই লীগের খেলা পেছানোতে তার জুড়ি মেলা ভার! এদিকে রাতে মেসের মিল মিস হয়ে যেতে পারে বলে আমাদের সবার চেয়ে রাশেদুল ইসলামের (প্রথম আলো অনলাইন) দুশ্চিন্ত ছিল কয়েকগুণ বেশি! তবে সে দুশ্চিন্তার অবসান হয় আধঘণ্টার মধ্যেই। আমাদেরও। বাফুফের ধমক খেয়ে স্টেডিয়ামের গেটের দারোয়ান পরদিন প্রেসবক্সে এসে কাঁচুমাচু মুখে আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল। আমরাও তাকে ক্ষমা করে দিই। নইলে বেচারার চাকরি চলে যেত যে! -রুমেল খান [email protected]
×