ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্সপেক্টর জালাল হত্যায় অভিযুক্ত দুই খুনী এখনও অধরা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৭ মার্চ ২০১৮

ইন্সপেক্টর জালাল হত্যায় অভিযুক্ত দুই খুনী  এখনও অধরা

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগে ডিবির ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিন হত্যাকা-ের অভিযুক্ত দুই খুনী কামাল ও মানিকসহ অন্য খুনীরা এখনও অধরা। হত্যাকা-ের প্রধান আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাসান তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে দুটি গুলি করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানিয়েছে নিহতের স্ত্রী তানিয়া। জবানবন্দীতে তানিয়া বলেছে, গুলি লাগার পর জালাল উদ্দিন চিৎকার করে বলে ‘স্যার, আমাকে বাঁচান’। এরপর হাসান ও তার বন্ধু কামাল ও মানিকসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। হত্যাকা-ের তিন দিনের মাথায় হাসান বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও হত্যাকা-ের অন্য সহযোগীরা এখনও অধরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তদন্তে এই খবর পাওয়া গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইন্সপেক্টর জালাল হত্যাকা-ের আসামিরা রাজধানী ঢাকার গ্রিলকাটা চোরের সিন্ডিকেটের সদস্য। বহুতল ভবনের যে কোন তলায় ওঠে জানালার গ্রিল কেটে কক্ষে প্রবেশ করে মূল্যবান ধন-সম্পদ, স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে কেটে পড়তে পারদর্শী এই গ্রিলকাটা চোরের সিন্ডিকেট। গ্রিলকাটা চোরের সিন্ডিকেট এতই ভয়ঙ্কর প্রকৃতির যে তারা চুরি করার সময়ে বাড়ির কেউ আঁচ পেয়ে ধরতে গেলে খুন করতেও দ্বিধা করে না। এই গ্রিলকাটা চোরের সিন্ডিকেটের হাতেই খুন হন ডিবির ইন্সপেক্টর জালালউদ্দিন ওরফে জাহাঙ্গীর। ডিবির ইন্সপেক্টর জালালকে গুলি করে হত্যা করার পর তিন দিনের মাথায় প্রধান আসামি হাসান বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও তার সহযোগীরা এখনও অধরা। গ্রিলকাটা চোরের সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখনও অধরা থাকায় রাজধানীতে বসবাসকারীদের জন্য এক আতঙ্ক। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই পুলিশ সার্জেন্টের চুরি হয়ে যাওয়া রিভলবার উদ্ধার করতে গিয়ে হাসানের নেতৃত্বে গ্রিলকাটা চোর সিন্ডিকেটের সদস্যদের গুলিতে নিহত হয় ডিবির ইন্সপেক্টর জালাল। পুলিশ অভিযানের সময়ে তারা রাজধানীর মধ্য পীরেরবাগের বাড়ির ছাদে গোপন বৈঠক করছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হাসান গুলি করে হত্যা করে ডিবির ইন্সপেক্টরকে। হত্যাকা-ের তিন দিনের মাথায় হাসান বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও তার সহযোগীরা এখনও অধরা। তবে যারা এখনও অধরা তাদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের ৬০ ফুট ভাঙ্গা ব্রিজের কাছে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাসানের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা কেউ তার খোঁজ নিতে মর্গে যায়নি। বন্দুকযুদ্ধে হাসানের সহযোগী মানিক ও কামালসহ অন্যদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। গত ১১ জানুয়ারি মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের একটি বাসার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে দুই সার্জেন্ট মামুনুর রশীদ ও সোহেল রানার ব্যবহার করা সরকারী দুটি অস্ত্র চুরি হয়। এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর চুরি হওয়া ওই পিস্তল দুটি উদ্ধার করতে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগ। গত ১৯ মার্চ রাতে পীরেরবাগের ১০৫১ এ নম্বর বাড়ির দোতলার ছাদের টিনশেড বাসায় যান পরিদর্শক জালাল উদ্দিন ওরফে জাহাঙ্গীর। কিন্তু অভিযান চালানোর আগে বাসাটি রেকি করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তিনি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বন্দুকযুদ্ধে হাসানের সহকারীদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তার সঙ্গে আর কারা ছিল তাদের শনাক্তের পর গ্রেফতার করা হবে। নিহত হাসানের অন্যতম সহযোগী মানিক ও কামালের বিষয়েও তারা কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। পরিদর্শক জালাল হত্যাকা-ের সময় মানিক ওই বাসার ছাদে একসঙ্গে বসেছিল। এছাড়া তাদের আরও কয়েকজন সহযোগী আছে। তারা মূলত সংঘবদ্ধভাবে বিভিন্ন বাসার গ্রিল কেটে চুরি করত। গ্রিলকাটা চোরের সিন্ডিকেট হলেও তারা মোবাইল ফোনও চুরি করত। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাসানের বাবা মৃত আব্দুল মান্নান, মায়ের নাম রহিমা বেগম। তাদের গ্রাম ভোলা সদরের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাপতা ফলপান বাড়িতে। প্রায় ৩০ বছর ধরে তার পরিবারের সদস্যরা উত্তর পীরেরবাগের কামালের দোকানের মোড় এলাকার একটি বাসায় থাকত। সেখানেই হাসানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই সে চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় একাধিক চুরির মামলা রয়েছে। মূলত মিরপুর ও এর আশপাশের এলাকায় হাসান গ্রিল কেটে চুরি ও ছিনতাই করত। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাসানের লাশের কাছ থেকে দুই সার্জেন্টের চুরি হওয়া সরকারী অস্ত্র দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে আরেকটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়। গ্রিলকাটা চোরের সব সদস্যদের ধরতেই অভিযান চালানো হচ্ছে। যেভাবে খুন হন ইন্সপেক্টর জালাল ॥ ডিবির ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিনকে কীভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল বন্দুকযুদ্ধে নিহত খুনী হাসানের স্ত্রী তানিয়ার ১৬৪ ধারা জবানবন্দীতে এ বর্ণনা উঠে এসেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ২২ মার্চ সাক্ষী হিসেবে এই জবানবন্দী দেন তানিয়া। তানিয়া জবানবন্দীতে বলেছেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টায় আমি দুই মেয়েসহ নিজ ঘরে ঘুমাতে যাই। আমাদের ভাড়া বাসাটা দুইতলা বিল্ডিংয়ের ছাদের ওপর টিনশেড। এ সময় আমার স্বামী হাসান (২৬) ও তার বন্ধু মানিক (২২) ঘরের বাইরে ছাদের ওপর মাদুর বিছিয়ে বসে ছিল। এর কিছু সময় পর কুকুরের ডাক শব্দ শুনতে পাই। আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখি আমার স্বামী ও তার বন্ধু মানিক ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে, একজন লোককে লক্ষ্য করে আমার স্বামীর হাতে থাকা কালো রংয়ের পিস্তল দিয়ে গুলি করছে। গুলি লাগার পর গুলিবিদ্ধ লোকটি বলেন, ‘স্যার, আমাকে বাঁচান’। আমি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের ভেতরে চলে যাই। ওই সময় আরও কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনি। আমার স্বামী হাসান ও তার বন্ধু মানিক ছাদের দক্ষিণ পাশ দিয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায়। পরে জানতে পারি হাসান যে লোকটিকে গুলি করেছে তিনি পুলিশের লোক এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন।
×