ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাহকের হাতে থাকা বাড়তি সিম নিষ্ক্রিয় করার ঘোষণার বাস্তবায়ন নেই

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৭ মার্চ ২০১৮

গ্রাহকের হাতে থাকা বাড়তি সিম নিষ্ক্রিয় করার ঘোষণার বাস্তবায়ন নেই

ফিরোজ মান্না ॥ গ্রাহকের হাতে থাকা বাড়তি সিম নিষ্ক্রিয় করার ঘোষণা কোন কাজেই আসেনি। গ্রাহকরা নিজ উদ্যোগে বাড়তি সিম নিষ্ক্রিয় করার প্রয়োজনই মনে করেনি। অপারেটররাও গ্রাহকের হাতে থাকা সিম নিষ্ক্রিয় করার কোন উদ্যোগই নেয়নি। বিটিআরসি কয়েক দফা সময় বেঁধে দিয়েও কোন ফল পায়নি। সর্বশেষ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়তি সিম নিষ্ক্রিয় করার সময় বেঁধে দেয়া হয়। বিটিআরসির ঘোষণা অনুযায়ী গ্রাহকের হাতে ১৫টির বেশি মোবাইল সিম থাকতে পারবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়তি সিম-রিম নিষ্ক্রিয় না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয় বিটিআরসি। এর আগে বাড়তি সিম তুলে নেয়ার জন্য বিটিআরসি অপারেটরদের চিঠিও দিয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। বিটিআরসি গত বছরের ডিসেম্বরে বলেছিল গ্রাহকের হাতে ১৫টির বেশি সিম বা রিম থাকতে পারবে না। তখন বলা হয়েছিল ১৫টির বেশি সিম থাকলে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ উদ্যোগে অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করতে হবে। কিন্তু বিটিআরসির ওই ঘোষণা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। পরে বিটিআরসি দুই মাস সময় বাড়িয়ে দেয়। বাড়তি সময়েও অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করা হয়নি। কারণ এখনও অনেক সিম নিবন্ধন ছাড়াই ব্যবহার হচ্ছে। বিষয়টি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনও (বিটিআরসি) স্বীকার করে নিয়েছে। তাই গ্রাহকদের হাত থেকে বাড়তি সিম নিষ্ক্রিয় করার বিষয়টিও কঠিন হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে মোবাইল অপারেটরের ওপর। তারা চাইলে বাড়তি সিম গ্রাহকদের হাত থেকে তুলে নিতে পারে। মোবাইল অপারেটররা বাড়তি সিম গ্রাহকদের হাত থেকে তুলে নেয়নি। তারা নিবন্ধন ছাড়া সিম দিয়ে বড় অঙ্কের ব্যবসা করে নিচ্ছে। আবার এ সব সিম দিয়ে অপরাধী কর্মকা-ও সংঘটিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, যে কোন নির্দেশ বিটিআরসি থেকে দেয়া হলে তা অপারেটররা বাস্তবায়ন করতে গড়িমসি করে। কারণ সব বিষয়ের সঙ্গে অর্থ যুক্ত রয়েছে। তাই তারা যতক্ষণ পর্যন্ত পারে বিটিআরসির নির্দেশ অমান্য করে। এতে তাদের আর্থিক সুবিধা বাড়ে। সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসি দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটরকে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নির্দেশ দিয়েছিল গ্রাহকদের হাত থেকে ১৫ টির বেশি সিম থাকলে তা নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার জন্য। সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু বিটিআরসির এই নির্দেশ যথা সময়ে মোবাইল অপারেটররা পালন করেনি। পরে বিটিআরসি বাধ্য হয়ে আরও দুই মাস সময় বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। বাড়তি সময়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্তি সিম নিষ্ক্রিয় না করলে বিটিআরসি পরে নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অপারেটরের মাধ্যমে সেগুলোর নিবন্ধন বাতিল ও বন্ধ করে দেবে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকের প্রয়োজনীয় সিমও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে বিটিআরসির নোটিসে উল্লেখ করা হয় সে সময়। কিন্তু বিটিআরসিও তাদের উদ্যোগে বাড়তি সিম বাতিল করেনি। বিটিআরসি জানিয়েছে, গ্রাহকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে দুই মাস সময় বৃদ্ধি করে ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছিল। গ্রাহক ওই সময়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় না করলে কমিশন নির্ধারিত পদ্ধতির ভিত্তিতে তা বন্ধ করে দেবে। কোন গ্রাহকের হাতে ১৫টির বেশি মোবাইল সিম বা রিম থাকলে নিজ উদ্যোগে অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করবে। বিটিআরসি বলছে, কোন গ্রাহকের পাসপোর্ট, এনআইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা জন্ম নিবন্ধন সনদের বিপরীতে কতটি সিম রয়েছে তা দুটি পদ্ধতিতে জানা যাবে। একটি হচ্ছে ‘স্টার ১৬০০১ হ্যাশ’ (*১৬০০১#) নম্বরে ডায়াল করলে ইউএসএসডি কোডে তার কাছে এনআইডির শেষ চার ডিজিট জানতে চাওয়া হবে। তা লিখে সেন্ড করলে ফিরতি এসএমএসে জানিয়ে দেয়া হবে তার নামে থাকা সিমের সংখ্যা কয়টি। অন্যভাবে এনআইডি নম্বরের শেষ চার ডিজিট লিখে ১৬০০১ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ওই এনআইডির বিপরীতে কয়টি সিম রয়েছে তা জানতে পারবে গ্রাহক। কর্পোরেট গ্রাহকের ক্ষেত্রে সিম সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া বাস্তবসম্মত হবে না। তাই কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সিম বা রিম কেনার জন্য অনুমোদিত ব্যক্তি এ সীমার আওতামুক্ত থাকবেন। বিটিআরসি এসব কোন পদ্ধতিই অবলম্বন করেনি। তারা বাড়তি সিম বাতিলের জন্য কোন উদ্যোগই হাতে নেয়নি।
×