ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইউনিসেফ প্রতিবেদন

বাল্যবিবাহ রোধে ঢাকার ভূমিকা প্রশংসিত

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৫ মার্চ ২০১৮

বাল্যবিবাহ রোধে ঢাকার ভূমিকা প্রশংসিত

সমুদ্র হক ॥ বাল্যবিবাহ রোধে বাংলাদেশের বর্তমান ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে। এ বছর প্রকাশিত ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে বাল্যবিবাহের হার কমেছে। তবে নিরাপদ নয়। এখনও বিশ্বের প্রতি পাঁচজন কিশোরীর মধ্যে একজনের বিয়ে হয় ১৮ বছরের কম বয়সে। ইউনিসেফ আশা করে ২০৩০ সালের মধ্যে এই হার শূন্যের কোঠায় নেয়া সম্ভব হবে। বাল্যবিবাহ রোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। যেখানে বাল্যবিবাহের হার ১০ শতাংশ কমেছে। যদিও বাল্যবিবাহ রোধে বাংলাদেশের অগ্রগতি সামান্য তবে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর অবস্থান এবং সাধারণের মধ্যে সচেতনতা বেড়ে যাওয়ায় নিত্যদিনই মাঠ পর্যায়ে বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে দেয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের চিত্র বলে দেয় : বর্তমানে স্কুল শিক্ষার্থীরাই সহপাঠীদের বিয়ে বন্ধে প্রশাসনকে সহায়তা করছে। জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জনে বাল্যবিবাহ ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে : উচ্চ মাধ্যমিক থেকে উচ্চতর পর্যায়ে নারী শিক্ষার হার যেখানে বেশি সেখানে বাল্যবিবাহের হার অনেক কম। নারী শিক্ষিত হওয়ার পর কখন বিয়ে করবে এই সিদ্ধান্ত সে নিতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নারীকে যত বেশি শিক্ষিত করা হচ্ছে বাল্যবিবাহ তত কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নারীদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। বগুড়ার এক সেমিনারে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) জেন্ডার এক্সপার্ট বিথীকা হাসান বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। নারী নির্যাতন ও সহিংসতার অন্যতম একটি কারণ : বালিকার বধূ হওয়া। বাল্যবিবাহ যত দ্রুত রোধ করা যাবে নারী নির্যাতনের মাত্রা অনেক কমে আসবে। এমনটি বলছেন সুধীজন। সুধীজনেরা মনে করেন, যে বালিকার বিয়ে রোধ করা গেল তার নিরাপত্তার জন্য সেফ হোম বা এ ধরনের সামজিক ব্যবস্থা থাকা দরকার। যাতে সে নিরাপত্তা পেয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে। এমনও দেখা গেছে বাল্যবিবাহ রোধ করার কিছুদিন পর সেই বালিকাকে অন্য স্থানে কোন আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে বিয়ে দেয়া হয়েছে। বাল্যবিবাহ রোধে অন্তত ৩৭টি সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, শীঘ্রই এ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সকল পদক্ষেপ নেয়া হবে। জনসংখ্যায় টিনএজের (১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী) সংখ্যা আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাল্যবিবাহ হার কমে একটি পর্যায়ে স্থিতি হয়ে থাকছে। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্সের (বিবিএস) এক জরিপে বলা হয়েছে ২০০৬ সালে দেশে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৭৪ শতাংশ, ২০১৩ সালে তা নেমে দাঁড়ায় ৫২ শতাংশে। ইউনিসেফের চলতি এক জরিপে দেখানো হয়েছে ১৮ বছরের নিচে বালিকাদের বিয়ের হার ৫০ শতাংশ। এসব কিশোরী ও বালিকাদের বিয়ের সময় কোন মতামতই নেয়া হয় না। উভয় পক্ষের অভিভভাবকদের সম্মতিতেই জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন জন্ম সনদ দেখা ও পরীক্ষা করা হয় না। তবে হালে শহর এলাকায় এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। শহরের বিয়ে নিবন্ধকগন (কাজী হিসাবে যাদের অধিক পরিচিতি) এখন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ দেখতে চাইছেন। সূত্রের খবর, বাল্যবিবাহ রোধে যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হচ্ছে তার মধ্যে আছে: নিবন্ধনে (রেজিস্ট্রেশন বা কাবিননামা) বর কনের ছবি সংযোজন বাধ্যতামূলক থাকবে। বিয়ের দিনক্ষণ, বর কনের বয়সের ক্ষেত্রে দিন মাস বছর, উল্লেখ থাকতে হবে। সঙ্গে এনআইডি, জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি ও তার নম্বর কাবিননামায় থাকবে। কাজী ও মৌলভি (যিনি বিয়ে পড়ান) তাদের নাম ঠিকানা পূর্ণভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। আইনী পদক্ষেপের পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক বহুমুখী কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। জেলা ও উপজেলায় যারা বিয়ে পড়িয়ে থাকেন তাদের প্রশাসনের নিবন্ধন থাকতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে ভুল তারিখের বা ভুয়া জন্ম সনদ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। দরিদ্র পরিবারের বাল্যবিবাহ রোধে কিশোরী ও বালিকাদের সুরক্ষা প্রদানে সমাজসেবা অধিদফতরকে দায়িত্ব দেয়া হবে। এসব সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধে তথ্য চিত্র, নাটিকা, বিয়ে নিবন্ধনের বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান বানিয়ে তা বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। খোঁজ খবর করে জানা যায়, বাল্যবিবাহ বোধে প্রশাসন, মহিলা বিষয়ক অধিদফতর, সমাজ কল্যাণ বিভাগ শিশু একাডেমি এবং বেসরকারী সংস্থার (এনজিও) যে জোরাল ভূমিকা পালন করার কথা তা হয় না। ওয়ার্কশপ, সেমিনার, কোন স্কুলে গিয়ে মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মাঠ পর্যায়ে কাজীদের কাছে গিয়ে খোঁজ খবর করা, কোন এলাকায় কতজন কিশোরী ও বালিকা আছে তাদের সন্ধান এবং অবস্থান, কিভাবে অভিভাবকগণ মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন ও কেন দিচ্ছেন সেই প্রবণতা রোধে কার্যকর কোন মটিভেশন নেই।
×