ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে ইউএস বাংলা কার্যালয়

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৩ মার্চ ২০১৮

স্বজনদের কান্নায় ভারি  হয়ে ওঠে ইউএস  বাংলা কার্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (টিআইএ) দুর্ঘটনার শিকার বেসরকারী বিমান ইউএস বাংলার আরোহীদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে রাজধানীর বারিধারা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় ও তার আশপাশ। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছেন তাদের স্বজনরা। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই একের পর এক আরোহীদের স্বজনরা আসতে থাকেন। এসেই কান্নায় ভেঙ্গে পরেছেন তাদের স্বজনরা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট চীফ হিসেবে কর্মরত রাজধানীর দক্ষিণখানের বাসিন্দা উম্মে সালমা ও একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান নাজিয়া আফরিন চৌধুরী সরকারী তিনদিনের দাফতরিক সফরে (অফিসিয়াল ট্রিপে) সোমবার ইউএস বাংলার বিমানে তারা কাঠমান্ডু যান। এর কিছুক্ষণ পরই বিমান দুর্ঘটনার খবর পান তাদের স্বজনরা। সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে আসেন উম্মে সালমার বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ। বোনের জন্য আহাজারি করতে থাকেন আর কান্নায় ভেঙে পরছেন। মূলত বোনকে জীবিত ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় তিনি। শোক যেন তাকে অনেকটা নির্বাক করে দিয়েছে। তাদের কোন খবরই তিনি পাচ্ছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তাহিরা তানভীর শশী ও ডাঃ রেজোয়ানুল হক শাওন দম্পতি মার্চে আগাম বিবাহবার্ষিকী পালনের জন্য নেপাল যাচ্ছিলেন। উভয়েই দুর্ঘটনার শিকার, তার স্বামী বর্তমানে নেপালের একটি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন আর শশী সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোন সঠিক খবর পাচ্ছেন না বলে তার স্বজন তানিয়া শেখ তানহা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন। তানহা বলেন, এই দম্পতির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। ডাঃ রেজওয়ান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউিটে কর্মরত। উত্তরার উত্তরখানের বাসিন্দা কবির হোসেন সহযোগী দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে ওই ফ্লাইটে কাঠমান্ডু যান। বাবার খোঁজে আসা ছেলে শাওন বারিধারার অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, বাবার মোবাইল ফোন থেকে আমাকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, তিনি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওই খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বারিধারার অফিসে আসি। শাওন তার বাবার জন্য সবাইকে দোয়া করতে বলেন। এই ড্যাশ উড়োজাহাজটিতে মোট যাত্রী ছিলেন ৬৭ জন, এর মধ্যে ৩২ জন বাংলাদেশী। যাত্রীদের মধ্যে দুটি শিশুও রয়েছে। এই ফ্লাইটেই প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারী সংস্থায় জনসংযোগ শাখার দায়িত্ব পালনকারী যাত্রী ছিলেন সানজিদা বিপাশা, রফিক জামান রিমু ও তাদের ছয় বছর বয়সী ছেলে অনিরুদ্ধ। বিপাশার ভাই শাহরিয়ার মিঠুন সাংবাদিকদের বলেন, বেলা সাড়ে ১২টায় বোনের পরিবারের সাবইকে তুলে দেয়ার সময় সর্বশেষ কথা হয়। এরপর দুর্ঘটনার খবর শুনছি। আমরা খুবই আপসেট। কিছুই বলতে পারছি না। এছাড়া টাঙ্গাইলের বাসিন্দা রাজশাহীর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় রুয়েটের সিএসই বিভাগের প্রভাষক ইমরানা কবির হাসি ও তার স্বামী রকিবুল হাসানও ছিলেন তার সঙ্গে। তিনি যাত্রা শুরুর আগে ফেসবুকে লিখেছেন-‘ভ্যাকেশন স্টার্টস নাউ’। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে হাসি ও রকিবুলের স্বজনরা রয়েছেন উদ্বেগের মধ্যে। তার কোন খবর তারা পাচ্ছেন না। গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও কলেজ ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পিয়াস রায়ও এই ফ্লাইটে ছিলেন। যাত্রা শুরুর একটি ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘টাটা মাই কান্ট্রি, ফর ফাইভ ডেজ। হেইলিং টু দ্য ল্যান্ড অফ দ্য এভারেস্ট’। গাজীপুরের বাসিন্দা অ্যানি প্রিয়ক বন্ধুসহ সপরিবারে এই ফ্লাইটে ছিলেন। যাত্রাকালে এয়ারপোর্ট থেকে তার ফেসবুকে ছবিও পোস্ট করেন। তাদের বন্ধু ফরহাদ খান সাংবাদিকদের বলেন, শ্রীপুরের নগর হাওলা গ্রামের পেশায় আলোকচিত্রী প্রিয়কের সঙ্গে তার ব্যবসায়ী বন্ধু মেহেদী হাসান দম্পতিও এই ফ্লাইটে ছিলেন। ফরহাদ বলেন, ফারুকের (প্রিয়ক) সঙ্গে তার স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানি (২৫), তাদের ৩ বছর বয়সী একমাত্র সন্তান এবং মেহেদী হাসান অমি (৩৩) ও তার স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা (২৫) ছিলেন। এদের মধ্যে কামরুন্নাহার স্বর্ণা, ইমরানা কবির হাসি আহত অবস্থায় কাঠমান্ডুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ইউএস বাংলার কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে।
×