ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢেলে সাজানো হচ্ছে উত্তরা গণভবন

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১২ মার্চ ২০১৮

ঢেলে সাজানো হচ্ছে উত্তরা গণভবন

কালিসাস রায়, নাটোর থেকে ॥ রানী ভবানী, বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা, কবি জীবনানন্দ দাসের বনলতার শহর নাটোর। উত্তরবঙ্গের ছোট্ট এই শহর ঐতিহাসিকভাবেই বিখ্যাত। সতের শতকে উত্তরা গণভবনের রাজপ্রাসাদ পরবর্তীতে পূর্ব-পাকিস্তানের গবর্নর হাউসে এবং স্বাধীনতার পরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অভাবে দীর্ঘদিন অবহেলিত থেকে গেছে উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ এই জেলা। কিন্তু নাটোরবাসীর দাবি অনুযায়ী নাটোরকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের উদ্যেগে নাটোরের ঐতিহাসিক উত্তরা গণভবনকেন্দ্রিক নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাল্টে গেছে এর চিত্র। এর মধ্যে উত্তরাগণভবনের ৮০ভাগ স্থান দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্তকরণ, পুরাকীর্তি সংগ্রহশালা, মিনি চিড়িয়াখানা নির্মাণ, পরিষ্কার পরিছন্নতা অভিযান, বৃক্ষরোপণসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নাটোরবাসীর মধ্যে উন্নয়নের আশার সঞ্চার করেছে। জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, নাটোর একটি সম্পদশালী, সুন্দর ও অনেক সম্ভাবনাময় একটি জায়গা। এখানে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে অনেক উন্নয়ন করা যেতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে উত্তরা গণভবনকেন্দ্রিক নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য মোহাম্মদ শফিউল আলম নাটোরে আসার পরে তার কাছে উত্তরা গণভবনের ভেতরে ও বাহিরে নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। যদি প্রকল্প পাওয়া যায় তবে নাটোরের পর্যটন শিল্পে যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হবে। পাল্টে যাবে নাটোরের চিত্র। জেলা প্রশাসন প্রস্তাবিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিপুল অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। সরেজমিনে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, গ্র্যান্ড মাদার হাউস উদ্ধার করে দর্শকদের জন্য পরিপাটি করে সাজান হয়েছে। লেকের ঘাটে বসার নতুন কিছু জায়গা করা হয়েছে। ল্যাডিস পার্কে যেখানে রানি অবসর সময় কাটাতেন, সেখানে পশুপাখির খাঁচা ঠিক করা হয়েছে। খাঁচায় দুটি হরিণ। পাশের খাঁচায় ময়ূর রাখা হয়েছে। জঙ্গলাকীর্ণ রানিঘাট ও রানিমহল, পুকুর পরিষ্কার করে নতুন করে রাস্তা বানিয়েছেন। রানিরঘাট মেরামত করেছেন। এগুলোর ভেতরে আগে ঢোকার উপায় ছিল না। এলাকায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে মূল্যবান জিনিসপত্র যেমন, বাক্স, রাম দা, সিন্দুক, রাজা-রানির ছবিসহ অনেক কিছু। রাজকুমারী ইন্দু প্রভার ব্যক্তিগত একটি ট্রাঙ্ক মিলেছে যাতে রাজকুমারী ইন্দু প্রভা ও মহেন্দ্র’র প্রেমের কাহিনী সম্বলিত চিঠি, ডায়েরি, কবিতার পা-ুলিপি, লেখার কাজে ব্যবহৃত দোয়াত-কালি এখনও অবিকল অবস্থায় আছে। সবই এখন স্থান পাচ্ছে নতুন উদ্বোধনকৃত সংগ্রহশালায়। সব কিছুই সাজান হচ্ছে নতুন করে। জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, তারা রাজকুমারী ইন্দু প্রভা রচিত কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের উদ্যোগ নেবেন। তবে শতবর্ষী কাগজ হাতে ধরতে গেলেই ভেঙ্গে যাচ্ছে। একধরনের ‘মেটেরিয়াল’ পাওয়া যায়, সেটা দিয়ে ধরলে নষ্ট হয় না। এগুলো জোগাড় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কারণে অল্প কিছু চিঠি ও কবিতা আপাতত উন্মুক্ত করা হবে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াজাত করে উন্মুক্ত করা হবে। গত ৯ মার্চ মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম উত্তরা গণভবনের গ্র্যান্ডমাদার হাউস লেক, রাণীমহল, হরিণচূড়া ও আম্রকাননসহ ৮০ ভাগ জায়গা উন্মুক্ত করেন এবং সংগ্রহশালা ও মিনি চিড়িয়াখানার উদ্বোধন করেন। ১৯৫৬ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের সদস্যরা ভারতে চলে যান। ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজবাড়িটিকে উত্তরা গণভবন ঘোষণা করেন। তখন থেকে এর পরিচর্যা করত গণপূর্ত বিভাগ। কয়েকবার এখানে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে।
×