ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের সামগ্রী কেনাকাটা ছাড়াও নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগের তালিকা করা হচ্ছে

পাঁচ সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু ইসির

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১০ মার্চ ২০১৮

 পাঁচ সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু ইসির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পাশাপাশি ও জাতীয় নির্বাচনের জন্য ঘর গোছাতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এখন থেকেই ভোটের সামগ্রী কেনাকাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশপাশি রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসারদের তালিকা প্রস্ততির কাজ তারা শুরু করেছে। এছাড়াও রমজানের আগেই তারা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কাজ শেষ করতে চায়। এ নির্বাচনের জন্যও তারা স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। এ বছরই অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় নির্বাচন। আইন অনুযায়ী আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই একাদশ জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। যদিও এ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ইসির পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে জানা গেছে, ডিসেম্বর ধরেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। শুত্রবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারির প্রথমদিকে অনুষ্ঠিত হবে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগেই ইসিকে আরও পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। ইতোমধ্যে সিটি নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতিতেও রয়েছে নির্বাচন কমিশন। জানা গেছে গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে ৪ সেপ্টেম্বর, খুলনার ২৫ সেপ্টেম্বর, রাজশাহীর ৫ অক্টোবর, সিলেটের ৮ অক্টোবর ও বরিশালের ২৪ অক্টোবর। মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় আইন অনুযায়ী রাজশাহীতে ৯ এপ্রিল থেকে ৫ অক্টোবর, খুলনায় ৩০ মার্চ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর, বরিশালে ২৭ এপ্রিল থেকে ২৩ অক্টোবর, সিলেটে ১৩ মার্চ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর এবং গাজীপুরে ৮ মার্চ থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জানা গেছে, এ বছর জাতীয় নির্বাচন থাকায় নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে সিটি নির্বাচন করতে চায় ইসি। এদিকে গাজীপুর, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও রাজশাহীসহ এই পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করতে কোন জটিলতা আছে কিনা তা জানতে চেয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির যুগ্ম-সচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। জানা গেছে, সিটি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণার পর যাতে কোন ধরনের জটিলতার মধ্যে পড়তে না হয় এ কারণে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে এসব নির্বাচনে কোন জটিলতা আছে কিনা। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্বাচনের সিগন্যাল দেয়া হলে এসব সিটিতে নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। জানা গেছে, সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে থাকলেও ইসির ভাবনায় রয়েছে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিও। এজন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেও তারা ঘর গোছাতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে তারা নির্বাচনী কেনাকাটা শুরু করেছে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়নের কাজও শুরু করে দিয়েছে তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে একাদশ সংসদ, পাঁচ সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী সামগ্রী কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ইসিতে। এ লক্ষ্যে কেবল কাগজ কেনার জন্যই নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে ৩৫ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতরের বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিসের উপ-পরিচালক ছরোয়ার হোসেন। ইসির প্রস্তুতিমূলক এক চিঠিতে সম্প্রতি অধিদফতরকে বলা হয়, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসব নির্বাচন হলেও তিন ভোট সামনে রেখে এ বছরের এপ্রিল থেকে নবেম্বরের মধ্যে সব কাগজ সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অধিদফতর জানায়, অর্থ পেলে সব কার্যক্রম নেয়া হবে। জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ প্রয়োজন হবে, যা জুনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। পিপিআর মেনে মালামাল সংগ্রহে কয়েক মাস সময় লাগে বলে অধিদফতর থেকে ইসিকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন শুরুর ৫-৬ মাস আগেই কাগজ সংগ্রহের যাবতীয় কার্যক্রম নিতে হবে। সেক্ষেত্রে একাদশ সংসদ নির্বাচনের মুদ্রণ কাজ শুরুর অন্তত তিন মাস আগে কাগজের মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতর বলেছে, ইসি ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে কাগজ সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করেছে। কিন্তু অর্থ না পাওয়া পর্যন্ত অধিদফতর টেন্ডারে যেতে পারে না। এ অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে আগামী বছরের মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে। এ বছরের ডিসেম্বর থেকে মুদ্রণ কাজ শুরুর সম্ভাব্য সময় ঠিক করেছে ইসি। এ নির্বাচনে ১ লাখ ২০ হাজার রিম কাগজ দরকার হবে। সেক্ষেত্রে নবেম্বরের মধ্যে মজুদ নিশ্চিত করতে চায় অধিদফতর। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন পরিচালনা খাতে বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের পারিশ্রমিক, নির্বাচনী মালামাল (স্ট্যাম্প প্যাড, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, আম কাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি ইত্যাদি) কেনায় ব্যয় হবে। এছাড়াও ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, নির্দেশিকা, ম্যানুয়াল, মনিটরিং সেল, প্রচার, ভোটকেন্দ্র-ভোটকক্ষ নির্মাণ, কক্ষ সংস্কার, ভোটকেন্দ্রের বেষ্টনী নির্মাণ, ভোটকেন্দ্রের মনিহারি দ্রব্য কেনা, পরিবহন খরচ, কর্মকর্তাদের ডাক, তার, বার্তাবাহক, জ্বালানিসহ বিভিন্ন নির্বাচনী সামগ্রী কেনায় অর্থ ব্যয় হবে। রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে নির্বাচনী ফলাফল আদান-প্রদান, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও মামলা পরিচালনা, বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জ্বালানি খরচ, সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের যাতায়াত খাতে ব্যয় করা হবে। এদিকে ভোটার মাল ক্রয়ের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসি। জানা গেছে, ইতোমধ্যে ইসির পক্ষ থেকে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন বিভাগ, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সারাদেশে তৈরি করা হবে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র। আর একাজে নিয়োজিত থাকবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে। এ কারণে এখন থেকেই তাদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
×