ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিভুজ প্রেমের বলি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৭ মার্চ ২০১৮

ত্রিভুজ প্রেমের বলি

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ ত্রিভুজ প্রেমের বলি হলো কলেজ ছাত্র রওনক হাসান রনো। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারের হোলি উৎসবে ডেকে নিয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নিহতের সাবেক প্রেমিকাসহ ৫জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, লিজা আক্তার ওরফে মাইসা আলম, রিয়াজ আলম ওরফে ফারহান, ফাহিম আহমেদ ওরফে আব্রো, ইয়াসিন আলী ও আল আমিন ওরফে ফারাবী খান। তাদের কাছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার ইব্রাহিম খান এসব তথ্য জানান। নিহত রওনক আজিমপুর নিউ পল্টন লাইন স্কুল এ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। তার বাবার নাম শহীদ মিয়া। তার বাড়ি কামরাঙ্গীরচরে। সংবাদ সম্মেলনে লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার ইব্রাহিম খান জানান, প্রেমের ঘটনার জের ধরে রওনককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। রওনকের সঙ্গে মাইসা নামের এক তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক ছিন্ন করে রওনক তুহু নামের আরেক তরুণীকে পছন্দ করতে থাকে। তুহুর সঙ্গে আরেক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই ছেলে বিষয়টি জানার পর রওনকের মধ্যে ফেসবুকে কথা-কাটাকাটি ও একজন অন্যজনকে হুমকির ঘটনা ঘটে। এরপরই রওনককে খুন করার পরিকল্পনা নেয় সাবেক প্রেমিকাসহ ওই ছেলে। ডিসি ইব্রাহিম খান জানান, পূর্ব পরিকল্পনা মতো সাবেক প্রেমিক মাইসার কল পেয়ে ১ মার্চ রওনক কামরাঙ্গীরচরের বাসা থেকে কলাবাগানে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হয়। রওনক পৌঁছানোর আগেই ওই ছেলে লক্ষ্মীবাজারে কেএফসির সামনে তারা একত্রিত হয় খুনের পরিকল্পনা করে। ছুরি সরবরাহ করে। রওনক বন্ধুদের সঙ্গে শাঁখারীবাজার শনি মন্দিরের সামনে গেলে মাইসা তাকে একপাশে ডেকে নিয়ে যায়। তখন রওনককে ঘিরে ফেলে ২০ থেকে ২৫ জন ও এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। এক সময় এদের মধ্যে কয়েকজন রওনককে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে রওনককে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। খুনের পর তদন্ত শুরু হয়। প্রায় ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ, সিসিটিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এরপর শুরু হয় গ্রেফতার অভিযান। সোমবার রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিহতের সাবেক প্রেমিকাসহ ওই পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। লালবাগ বিভাগের ডিসি জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ফারহান নিজেই ছুরিকাঘাত করেছে। মূল পরিকল্পনাকারীসহ জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে রওনকের বর্তমান প্রেমিকার কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ওই মেয়েকে নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। কিন্তু ওই দিন মেয়েটির সঙ্গে তাদের কারও যোগাযোগ হয়নি। কথোপকথনের কোন রেকর্ড পাওয়া যায়নি। সে ঢাকার বাইরে ছিল। ইব্রাহিম খান জানান, রওনক, মাইসা, তুহু কিংবা এই বন্ধুমহলের কেউ কোন নির্দিষ্ট এলাকা কিংবা একই প্রতিষ্ঠানের নয়। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়। নির্দিষ্ট সময়ে তারা একসঙ্গে মিলিত হয়। এদের মধ্যে কলেজ ছাত্র যেমন রয়েছে। তেমনি ফলের দোকানিও রয়েছে। উঠতি বয়সীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে তাদের পরিবারকে আরও সচেতন হওয়া উচিত উল্লেখ করে ডিসি ইব্রাহিম জানান, তারা কোথায় কী করছে। কোথায় যাচ্ছে এসব বিষয়ে পরিবারের আরও নজরদারি বাড়ানো উচিত। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আগে মাইশার সঙ্গে রওনকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরপর ফেসবুকে কয়েক মাস আগে মিরপুরের একটি স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী তুহু আশফিয়া ইসলাম ওরফে পলির সঙ্গে রওনকের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছু দিন যেতে না যেতেই তুহু তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। বয়স না হওয়ায় তিন বছর পর তাদের বিয়ের বিষয়ে দুই পরিবারের মধ্যে স্ট্যাম্পে চুক্তি হয়। এরপরও তুহু রওনক রনোকে নানাভাবে বিয়ের চাপ দিতে থাকে। তুহুর বাবা-মা বিষয়টি জেনে তাকে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে পাঠিয়ে দেয়। ফলে তুহুর সঙ্গে রওনকের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এটি জানতে পেরে মাইসা আবার রওনকের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। তাদের মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা হতে থাকে। মাইসার ফোনেই বন্ধুদের নিয়ে হোলি উৎসবে গিয়ে রনো খুন হয়। মামলার বাদী নিহতের রওনকের মা ২২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেত্রী হেনা বেগম জানান, তার ছেলে হত্যার সঙ্গে পলি ও মাইসার হাত রয়েছে। বন্ধুদের দিয়ে তারা রওনককে খুন করিয়েছে।
×