ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতির শাস্তি

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৩ মার্চ ২০১৮

দুর্নীতির শাস্তি

দুর্নীতি প্রত্যাশিত নয়, এটি দেশ ও জাতির জন্য মহাক্ষতিকর। বর্তমান সরকার প্রথম থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলেই বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের দুই ধাপ অগ্রগতির সংবাদ মিলেছে। শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদের অবস্থান ১৫ থেকে হয়েছে ১৭তম। সম্প্রতি একযোগে বিশ্বের ১৮০টি দেশের দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করে বার্লিনভিত্তিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। এতে দেখানো হয়, ২০১৭ অনুযায়ী ২০১৬ সালের তুলনায় বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান দুই ধাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। টিআইবি শেষ পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, দেশে দুর্নীতি কমেছে। বুধবার সংসদে সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক, উন্নত হোক। আমরা চাই না দেশকে নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলুক। কেউ দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। অপরাধী যেই হোক, শাস্তি তাকে পেতেই হবে। অপরাধে যুক্ত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।’ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন দেশ বারবার বিশ্বে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বহু অভিযোগ উঠেছে। শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুনির্দিষ্টভাবে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে যেটির রায় পেতে প্রায় এক দশক লেগে গেল। রায়ও হয়েছে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেলে গেছেন। এটি এখন স্পষ্ট যে, খালেদা জিয়ার বিচার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় বার্তা। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের আইনী, প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতি কাঠামো তুলনামূলকভাবে সুদৃঢ়তর হয়েছে এই ধারণা থেকে সূচকে বাংলাদেশের স্কোর দুই বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, ‘দুর্নীতিকে আমরা প্রশ্রয় দেই না। নিজেদের লোককেই কোন ছাড় দেই না। এমনকি আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠলে যে কোন সময় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। আদালত থেকেও ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমরা আইন মানি, কখনও নিজেদের দোষকেও ঢাকার চেষ্টা করি না।’ দুর্নীতি থাকলে উন্নয়ন যে ব্যাহত হয় এবং দেশের সত্যিকার উন্নয়ন হয় নাÑ সেকথা বলাই বাহুল্য। আমরা আগেও বলেছি গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। গণতন্ত্র বহাল থাকলে উন্নয়ন হয় দেশের, পক্ষান্তরে গণতন্ত্রবিরোধীরা ব্যাহত করে উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চারকণ্ঠ। সম্প্রতি রোমে এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি স্পষ্টভাবে আবারও দুর্নীতিবাজ এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিচার চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হতেই হবে। যারা দুর্নীতি, সন্ত্রাস করবে এবং জঙ্গীবাদে জড়াবে তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। দেশের শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এটা প্রয়োজন। আর আমরা দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। আমরা দেশকে উন্নত এবং জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাই। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ ও স্বজনপ্রীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অপসারণ করতে পারব। বর্তমান সরকার সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য দুর্নীতিবাজদের বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
×