ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ বাড়ছে শব্দদূষণ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১ মার্চ ২০১৮

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ বাড়ছে শব্দদূষণ

রাজধানীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে প্রায় দুই গুণ বেশি মাত্রায় শব্দদূষণ হচ্ছে। ঢাকা শহরের প্রায় শতভাগ অধিবাসীই শব্দদূষণের শিকার। যথাযথ আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় এই শব্দদূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। ‘বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার’ (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রা অনুযায়ী, সাধারণভাবে ৪০ থেকে ৪৫ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ ভাল শুনতে পারে মানুষ। এর চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাসসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। ঢাকায় অতিমাত্রায় শব্দদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী হাইড্রোলিক হর্ন। সম্প্রতি উচ্চ আদালত এক আদেশে ঢাকা মহানগরে সব ধরনের যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া হাইড্রোলিক হর্নের আমদানি এবং বাজারে এখনও যেসব হাইড্রোলিক হর্ন আছে তা জব্দ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কে মানে কার কথা! ‘কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ অবস্থা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ‘শব্দদূষণ বিধিমালা- ২০০৬’ যেন থেকেও নেই। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে এখনও যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার চলছে। সাধারণ হর্নের তুলনায় হাইড্রোলিক হর্নের শব্দের মাত্রা কয়েকগুণ বেশি। এখনও রাজধানীতে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের মতো প্রভৃতি ভারি যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার চলছে। বিভিন্ন যানবাহন শহর ও মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় মানুষ অতিমাত্রার শব্দে ঘুম থেকে আঁতকে উঠছে। হর্ন রাস্তার পাশে থাকা হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুরুতর শব্দদূষণ ঘটাচ্ছে। হাইড্রোলিক হর্ন এক কিলোমিটার দূর থেকেও শব্দদূষণ করে। নিষিদ্ধ হলেও চোরাই পথে অনেক ব্যবসায়ী এই হর্ন আমদানি করছে। পরিবেশ অধিদফতরের এক জরিপেও উঠে এসেছে, রাজধানীতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে দুই গুণ বেশি মাত্রার শব্দদূষণ হচ্ছে। শব্দদূষণের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি ব্যাপক। আকস্মিক শব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশী সঙ্কুচিত করে পরিপাকতন্ত্রে বিঘœ ঘটায়। দীর্ঘদিন উচ্চশব্দের মধ্যে থাকলে বধির হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। শব্দদূষণে শ্রবণশক্তি হ্রাস ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ মানুষের মাথাধরা, পেপটিক আলসারের মতো রোগসহ শিরা ও স্থায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়া নিয়ম লঙ্ঘন করে হাসপাতাল ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে গাড়ির হর্ন বাজানো হচ্ছে। নিষিদ্ধ হলেও শব্দদূষণ রোধে ‘মোটরযান অধ্যাদেশ আইন’, ‘পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ আইন’ ও ‘ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ অধ্যাদেশ- ১৯৭৬’ এ কারাদ- ও অর্থদ-ের বিধান থাকলেও এসব আইন প্রয়োগের হার খুবই সীমিত। ফলে বন্ধ হচ্ছে না শব্দদূষণ। শব্দদূষণ রোধে সবার আগে দরকার জনসচেতনতা বাড়ানো। হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান বাড়াতে হবে। মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক এই শব্দদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতর থেকে কার্যকর ও ধারাবাহিক অভিযান চালাতে হবে। সুন্দর ও নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য শব্দদূষণ নামক ব্যাধির প্রতিকার করতেই হবে। সূত্রাপুর, ঢাকা থেকে
×