ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে ফের দুই পুলিশের অবৈধ অনুপ্রবেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শাহজালালে ফের দুই পুলিশের অবৈধ  অনুপ্রবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই পুলিশের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এতে অভিযুক্ত দুজন ক্ষমা প্রার্থনা করায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বিস্মিত বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। গত সপ্তাহে একই ধরনের অপরাধে একজন কাস্টমস কর্মকর্তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অপর একজন দারগার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও অভিযুক্তদ্বয়ের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালে পুলিশের এএসপি আরিফুল ইসলাম একজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রবেশ গেটে কর্তব্যরত আনসার তাদের পরিচয় পত্র দেখতে চাইলে আরিফুল নিজের ইউনিফর্মের দিকে তাকানোর ইশারা দিয়ে অনেকটা জোর করেই ভেতরে ঢুকে যান। এ সময় আনসার আর-টি মারফত এ সংবাদ ছড়িয়ে দিলে নিরাপত্তাকর্মীরা আরিফুলকে ধরার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। এরপর তিনি দ্রুতগতিতে ভেতর দিয়ে আন্তর্জাতিক টার্মিনালের গ্রিন চ্যানেল দিয়ে সরাসরি চলে যান এ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন সেকশনে। সেখান থেকে আরও দ্রুতগতিতে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় ওঠে বোর্ডিং ব্রিজ হয়ে ওসি ইমিগ্রেশনের রুমে গিয়ে আশ্রয় নেন। এবং তিনি নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা চালান। এদিকে সারা বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। কোথাও না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দরের সিসিটিভির ফুটেজের মাধ্যমে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। বিমানবন্দরের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন তাদের ধরার জন্য ওসি ইমিগ্রেশনের রুমে চড়াও হন। তিনি অবৈধভাবে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে কেন রেড-এরিয়ায় প্রবেশ করেছেন প্রশ্ন করলে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এ সময় তাদের সঙ্গে চলে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বাকবিত-া। একপর্যায়ে অভিযুক্ত পুলিশদ্বয় জানান, তারা ইন্টারপোলের প্রতিনিধিদের প্রটোকল করার জন্য জরুরী ভিত্তিতে বিমানবন্দর প্রবেশ করেছেন। এবং তাদের পাস রয়েছে। উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন পরে খোঁজ নিয়ে দেখতে পান- তাদের ৫ জন পুলিশের নামে পাস ইস্যু করা আছে ৬নং স্টাফ গেটে- যার প্রবেশাধিকার শুধু কনকর্স হল পর্যন্ত। এ পাশ দিয়ে কিছুতেই ওই এরিয়ায় প্রবেশ করার সুযোগ নেই। তারপরও অভিযুক্তরা শুধু পুলিশের ইউনিফর্মের জোরে আনসারের বাধা উপেক্ষা করে নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করে ইমিগ্রেশন ও বোডির্ং ব্রিজ এরিয়ায় প্রবেশ করেন। সূত্র জানায়, রেড জোন এরিয়ায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করার বিষয়ে এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরত আশরাফ সিভিল এভিয়েশনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করায় আর কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে মামীকে সী অফ করতে গিয়ে আশিকুর রহমান নামের এক দারগা থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইটের ভেতরে চলে যান। এ নিয়ে হুলস্থূল পড়ে গেলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার ২৪ ঘণ্টা পর তহুরা বেগম নামের এক সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা মেয়াদোত্তীর্ণ আইডি কার্ড ব্যবহার করে অবৈধভাবে বোর্ডিং ব্রিজ পর্যন্ত ঢুকে পড়ায় তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয় এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় । কিন্তু রববার এ দুজন পুলিশের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভের সঞ্চার করে নিরাপত্তাকর্মীদের মাঝে। এ বিষয়ে শাহজালালের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, এর আগেও সুজাত নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা একইভাবে স্টাফ গেট ব্যবহার করে ইমিগ্রেশন এরিয়ায় প্রবেশ করেন। তারও আগে একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হাজীদের গেট দিয়ে ৪ জন বহিরাগতকে ইমিগ্রেশন পয়েন্টে নিয়ে যায়। ইমিগ্রেশনে কর্মরত ব্যক্তিরা প্রায়ই অবৈধভাবে বিমানবন্দরের রেড এরিয়ায় প্রবেশ করছেন। কেন হঠাৎ এত অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে জানতে চাইলে একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি রয়েছে। বিশেষ করে মাস চারেক আগে চেক-ইন পরবর্তী ইমিগ্রেশন স্টাফ গেট থেকে সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী প্রত্যাহার করে নেয়ায় এখন শুধু ইমিগ্রেশনের একজন দারগা ডিউটি করে। এরপর থেকেই পুলিশের লোকজন অবাধে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত প্রবেশ করছে। এই গেটে যদি সিভিল এভিয়েশনের একজন নিরাপত্তা অপারেটর থাকত- তাহলে তিনি পুলিশকেও বাধা দিতেন।
×