ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাটের পলিব্যাগ

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পাটের পলিব্যাগ

গত মাসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় এবং চলতি মাসে একুশের বইমেলায় সীমিত আকারে হলেও পাটের পলিব্যাগ ব্যবহারের প্রবণতা দেখে আমরা আশাবাদী হতে পারি। নতুন কিছু গ্রহণে প্রাথমিকভাবে সামান্য অমনোযোগ বা অনাগ্রহ থাকতে পারে। তবে ধীরে ধীরে তা গ্রহণযোগ্যতা পায়। পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প পচনশীল পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাই। পাটের সূক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে বিজ্ঞানীরা এ ব্যাগ তৈরি করেছেন। এটি দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হাল্কা, পাতলা ও টেকসই। এটি মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হওয়ার শঙ্কা নেই। পলিথিনের বিকল্প পচনশীল পলিব্যাগ তৈরির প্রকল্প উদ্বোধন হয়েছিল কয়েক মাস আগে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) তত্ত্বাবধানে পাটের পলিব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের নির্দেশ দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। নতুন করে আরও ১১টি পণ্য তালিকায় যুক্ত হওয়ায় ১৭টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী পণ্যের ওজন ২০ কেজির বেশি হলে প্রযোজ্য হচ্ছে এই নিয়ম। সোনালি আঁশ পাটের উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহার উৎসাহিত এবং জনপ্রিয় করতে পাট চাষীদের সোনালি স্বপ্নপূরণে জোরদার পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। বর্তমান সরকার কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, পাটজাত পণ্য রফতানি ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন বর্জন ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পাটকে বিশ্ব বাজারে তুলে ধরতে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এ ১৩৫ প্রকার পাটপণ্যের স্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ ও উচ্চমূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারকোল, ভিসকস, পাটপাতার পানীয়সহ নতুন নতুন বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশকে একসময় সোনালি আঁশের দেশ বলা হতো। এর কারণ বাংলাদেশের পাটের বিশ্বময় সুখ্যাতি। এছাড়া বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ আসত পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে। পরবর্তীকালে কৃত্রিম তন্তুর প্রচলন হওয়ায় পাটপণ্যের চাহিদা হ্রাস পায় মারাত্মকভাবে। সোনালি আঁশ পরিণত হয় চাষির গলার ফাঁসে। পাট খাতের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে কিছু কিছু সাফল্য এসেছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে পাটের প্রয়োজন পড়ছে। পাটের ব্যবহার সংক্রান্ত আইন কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় গ্রহণ করতে যাচ্ছে নানা পদক্ষেপ। যে সব প্রতিষ্ঠান পাটের ব্যাগ ব্যবহার করবে না, সেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংকঋণও পাবে না। আমদানি-রফতানি সনদ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র, ব্যবসায় পরিচালনার লাইসেন্স ইত্যাদি পেতে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করার পূর্বশর্ত মেনে নিতে হবে। বিষয়টি পাটের চাষ বাড়ানোর জন্য প্রেরণাদায়ক। পলিথিনসহ অন্যান্য কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অন্যদিকে পাটের ব্যাগ এবং পাটজাত পলিব্যাগ পরিবেশবান্ধব। জনসচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে এবং বাজারে সাশ্রয়ী দামে ছোট ছোট ব্যাগ সুলভ হলে মানুষ নিত্য প্রয়োজনে আগের মতো পাটের ব্যাগ ব্যবহার করবে বলে আশা করা যায়।
×