ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যত্র আটক ৮৩

হবিগঞ্জ ও ফরিদপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলি ॥ আহত শতাধিক

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

হবিগঞ্জ ও ফরিদপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলি ॥ আহত শতাধিক

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেয়ায় মঙ্গলবার হবিগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি বর্ষণ করা হয়। ঘটনায় আহত হয়েছে শতাধিক। পরে পুলিশ তিনজনকে আটক করে। আহতদের অনেকে সদর আধুনিক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে। সংঘর্ষের সময় সংশ্লিষ্ট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বাসাবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং এ দিন ফরিদপুরে বিএনপির কর্মসূচীতে পুলিশের হামলা লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালানো হয়। এতে সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে ১৫জন। এ সময় আটক করা হয় ২০জনকে। এ ছাড়া, একইদিন পুলিশের বিশেষ অভিযানে রাজশাহীতে বিএনপির দুই কর্মীসহ ৫১জনকে আটক করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল উত্তর প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। অন্যদিকে, চাঁদপুরে বিএনপির দুই নেতাসহ আটক করা হয়েছে ৫জনকে। -খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতা জানা গেছে, মিছিলে বাধা দেয়া নিয়ে হবিগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ ও মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সেক্রেটারি আলহাজ জি কে গউছ এবং পুলিশসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে । গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বহু নেতাকর্মী হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তা নগর এলাকা থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন একটি মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ সময় গউছের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিত-ায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। বেধে যায় তুমুল সংঘর্ষ। নেতাকর্মীরা পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ আর পুলিশ প্রথমে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল এবং পরে শটগানের গুলি ছুড়তে থাকে। এতে কোন কোন নেতাকর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং অনেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা আলহাজ জি কে গউছকে আটক করে নিয়ে যেতে চাইলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাদের চাপে মেয়রকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় অন্তত ৫০ নেতাকর্মীসহ আহত হয় শতাধিক। ফরিদপুর ॥ কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ফরিদপুরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচী করতে দেয়নি পুলিশ। এ কর্মসূচীতে বাধা দিতে গিয়ে পুলিশের মারমুখী তা-বে লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ায় সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে ১৫জন। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আহতাবস্থায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা, যুগ্ম সম্পাদক জুলফিকার হোসেন জুয়েল, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রাউফুন্নবীসহ ২০জনকে আটক করেছে। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে ফরিদপুর সুপার মার্কেট প্রাঙ্গণ, টাউন থিয়েটার হল, ডা. জাহিদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতাল, ফরিদপুর প্রেসক্লাবসহ মুজিব সড়ক এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা সাড়ে ১০টা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে। ১০টা ৫০ এর দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ একটি মিছিল নিয়ে শিশু হাসপাতালের দিক থেকে সুপার মার্কেটের সামনে আসে। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যানারসহ বিক্ষোভ কর্মসূচীর মিছিল শুরু করার উদ্যোগ নিলে বাধা দেয় পুলিশ। বিএনপির ব্যানার কেড়ে নেয় এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। পরে পুলিশ ওই মিছিলে লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট ছুড়তে শুরু করে। এতে চার পুলিশ সদস্য আহত হয়। এক পর্যায়ে মারমুখী পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা মার্কেটের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে আশ্রয় নিলে দোকানের শাটার খুলে পুলিশ লাঠিপেটা ও গ্রেফতার শুরু করে। পুলিশের বিভিন্ন দোকানের শাটার খুলে আশ্রয় নেয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করে এবং লাঠিপেটা করতে করতে তাদের গাড়িতে তোলে। রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিএনপির দুই কর্মীসহ ৫১জনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা ১৬জন, রাজপাড়া থানা ১৫জন, মতিহার থানা ১০জন, শাহ মখদুম থানা পাঁচজন এবং পুলিশের মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পাঁচজনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে ১৬জন পরোয়ানাভুক্ত আসামি এবং দুজন বিএনপি কর্মী। এ ছাড়া ১০জনকে আটক করা হয়েছে মাদকদ্রব্যসহ। আর ২৩জন আটক হয়েছে অন্যান্য অপরাধে। মঙ্গলবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। মঙ্গলবার সকালে শহরের টানবাজার মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কালাইশ্রী পাড়ায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ প্রমুখ। এ সময় বক্তারা খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানান। এ দিকে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মাহমুদ, সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আশিকুল ইসলাম সুমন ও জেলা যুবদল নেতা ওসমানসহ ৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। চাঁদপুর ॥ জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোঃ সফিকুর রহমান ভুঁইয়া ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী গোলাম মোস্তফাকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের নতুন বাজার মোড় থেকে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ তাদের আটক করে। পুলিশ জানিয়েছে, অনুমতি ছাড়া বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে পূর্বের অভিযোগ রয়েছে।
×