ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির  উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ॥ রাষ্ট্রপতি

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখে বর্তমান সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ এর পথচিত্র অনুসরণ করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে চলেছে। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন যুদ্ধে জয়লাভের জন্য কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন অপরিহার্য। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণে কৃষির ভূমিকা আজও মুখ্য। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরিতা মোকাবেলা করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ধান, গম, ভুট্টা, সবজি, মাছ মাংস ডিম ও দুধ উৎপাদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলেছে। এটি সম্ভব হয়েছে সরকারের বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন উপলক্ষে আজকের এই আনন্দঘন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত। সমাবর্তন একটি প্রতীকী অনুষ্ঠান। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক সাধনা ও সিদ্ধির সঙ্গে সমাজের আশা-আকাক্সক্ষার মেলবন্ধন ঘটে থাকে। সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষাজীবন শেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদপত্র গ্রহণের মাধ্যমে নবীন গ্র্যাজুয়েটদের সামনে খুলে যায় বৃহত্তর কর্মজীবনের প্রশস্ত পথ। সমাবর্তনের মাধ্যমে তাদের এই অগ্রাভিযানে যুক্ত জাতির শুভ কামনা। সমাবর্তনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি সদ্য সনদপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েট ও তাদের অভিভাবক এবং সেই সঙ্গে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতিসত্তার যে স্ফুরণ ঘটেছিল, তা দু’দশক ধরে নানা আন্দোলন সংগ্রাম, চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাস্তব রূপ লাভ করে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞের পৌরোহিত্যে ছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালী জাতিসত্তার উন্মেষ ও বিকাশকে অবারিত করে। রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু এবং ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কৃষিখাতে আজ যে অভাবনীয় সাফল্য দৃশ্যমান, এর পেছনে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন আমাদের কৃষিবিদগণ। নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে তারা পরিবেশ উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ সব পর্যায়ে তা দ্রুত হস্তান্তর ও বিস্তারেও ভূমিকা রাখছেন। কৃষিতে উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে কৃষকপর্যায়ে কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া পচনশীল কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ ও বহুমুখীকরণেও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। মোঃ আবদুল হামিদ আরও বলেন, ‘বর্তমান যুগ হচ্ছে বিশ্বায়ন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির যুগ। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে তার আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে টিকে থাকতে হলে তার স্থানিক, জাতিক ও বৈশ্বিক অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। এটি সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব প্রাতিষ্ঠানিক উপযোগিতা, মান ও আন্তর্জাতিক চারিত্র্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে। এখানকার শিক্ষা কারিকুলাম নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়ে থাকে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, “এবার লাঙ্গলের জোয়াল কাঁধে পড়বে। এতদিন বাবার টাকায় চলেছো এখন আর তা চলবে না, এবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সময় স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “সময় স্বল্পতার কারণে বেশি কিছু বলার নেই। তার ওপর গ্র্যাজুয়েটদের মুখও দেখতে পারছি না। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা ৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন মাঠে স্থাপিত মঞ্চে সমাবর্তনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমাবর্তন বক্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাস উদ্দিন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন।
×