ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওপার থেকে আসছে বড় চালান

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চাঁপাইয়ে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা ফের সক্রিয়

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চাঁপাইয়ে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা ফের সক্রিয়

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ॥ জেলার ১৮ পয়েন্টে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি এবার ভারতীয় সীমান্তে সক্রিয় অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অস্ত্র নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে চলে আসছে। লক্ষ্য একটাই। প্রতিযোগিতার বাজার ধরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তে অবস্থানকারী অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছে এতদিন অনেক ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে নগদ মূল্যে অস্ত্র নিয়ে আসতে হতো। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ভারতীয় অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অস্ত্রের চালান নিজেরাই বহন করে নিয়ে আসছে। সেই সঙ্গে বাকিতে মিলছে এই সব সেফ অস্ত্র। শুধু ভারতীয় অস্ত্র চোরাকারবারিদের এখানে আশ্রয় দিয়ে পয়সা না মেটানো পর্যন্ত রাখতে হচ্ছে। নতুন বছরে ৫২ অস্ত্রের বড় বড় চালান শিবগঞ্জ সীমান্তে প্রবেশ করলেও মাত্র গোটা তিনেক আইন প্রয়োগকারীদের হাতে ধরা পড়েছে। বাকি চালানগুলো নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোদাগাড়ী সীমান্ত পথে প্রায় সহস্রাধিক অস্ত্রের চালান প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এইসব অস্ত্রের অর্ডার পেয়েছে ভারতীয় অস্ত্র চোরাকারবারিরা। সূত্র আরও নিশ্চিত করেছে হঠাৎ করে সাম্প্রতিককালে পূর্বের চালান ছাপিয়ে আরও শতাধিক নতুন চালানের অর্ডার পেয়েছে ভারতীয় অস্ত্র চোরাকারবারিরা। আর এই অর্ডার মিলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও গোদাগাড়ী অস্ত্র চোরাকারবারিদের মাধ্যমে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ অস্ত্র ব্যবসায়ী মিলন সিংহ গত মাসের ৩১ জানুয়ারি শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কাপড়টোলা গ্রামে সাতটি বিদেশী পিস্তল, ১৪ ম্যাগজিন, ৪৭ রাউন্ড গুলিসহ এখানে আসে। কিন্তু র‌্যাব তাকে আটক করে অস্ত্রসহ। তার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মালদহের বৈষ্টব নগরের সুখদেবপুরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জনৈক মুখপাত্র বলছেন আগে একসঙ্গে দুটি থেকে তিনটি অস্ত্র ধরা পড়ত। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে অস্ত্রের বড় চালান ধরা পড়ছে। অনুরূপভাবে শিবগঞ্জের আজমতপুর সীমান্তের হুদমা পাড়া গ্রামে ৬ পিস্তল, ১৬ রাউন্ড গুলি ও ৪ ম্যাগজিন মজুদ করেছিল আনারুল ইসলাম। কিন্তু ১০ ফেব্রুয়ারি বিজিবি এইসব অস্ত্রের চালান আটক করে। গ্রেফতার করে আনারুলকে। আনারুল দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রের চোরাচালান করে আসছিল। একই রাতে আরও ৫ চালান পার হয়ে গেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর আগে চাকপাড়া সীমান্তে বিজিবি দুটি পিস্তল, চারটি রিভলবার, ৪ ম্যাগজিন, ১৮ রাউন্ড গুলিসহ মনজু মিঞা নামে এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এই সীমান্ত হতে বিজিবি ৯ আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। বিজিবি নামো চাকপাড়ার আব্দুল মান্নানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ঘরের মধ্য থেকে আটটি রিভলবার, ১ পিস্তুল, ১৫ রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিন উদ্ধার করে। বাড়ির মালিক ও তার ছেলে সাদেকুল পালিয়ে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক কর্নেল রাশেদ জানান, আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্তে অস্ত্র আসছে। এসব অস্ত্র চাঁপাই সীমান্ত পথে আসলেও পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই ধরনের অস্ত্রের চালান মাঝে মধ্যেই ধরা পড়লেও বন্ধ হচ্ছেনা অস্ত্র আসা। গত ৩১ জানুয়ারি অস্ত্র উদ্ধার পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে একই দাবি করেছেন র‌্যাব-৫ এর ক্যাম্প কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ সাঈদ আব্দুল্লাহ আল মুরাদ। তিনি জানান, আটক ব্যক্তিদের জবানবন্দী থেকে বেরিয়ে এসেছে নির্বাচন সামনে রেখে অস্ত্রের চোরাচালান বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, আটক অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি অস্ত্র সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। তবে বিজিবি জানায়, সীমান্তে অস্ত্রের চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে বিএসএফকে। বিএসএফ তাদের পদক্ষেপের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি। বিজিবির ভাষ্য জনবল সঙ্কটের কারণে সামাল দিতে পারছেনা প্রহরীরা। চাঁপাই সীমান্ত দিয়ে আসা অস্ত্রের মধ্যে ১১০ অস্ত্র আটক করেছে আইন প্রয়োগকারীরা। তার মধ্যে ২৫ অস্ত্র উদ্ধার করেছে বিজিবি। ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে প্রবেশ বেড়ে গেছে। চাঁপাই সদর, গোদাগাড়ী, শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট সীমান্তে গত জানুয়ারি মাসে ৬৭ জন বড় মাপের অস্ত্র ব্যবসায়ী প্রবেশ করেছে। তারা এই অনুপ্রবেশের সময়ে বড় বড় অস্ত্রের চালান নিয়ে আসে। একই সঙ্গে তারা দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করে বাংলাদেশে। বিশেষ করে শিবগঞ্জ অঞ্চলের ৭ ইউনিয়নের অবস্থান একেবারে সীমান্ত ঘেঁষে। সেই সব ইউনিয়নের প্রায় দুই ডজনের অধিক বড় মাপের অস্ত্র ব্যবসায়ী তাদের সঙ্গ ও আশ্রয় দিয়ে অস্ত্র বিক্রির কয়েক কোটি টাকা তুলে দিয়েছে। ভারতীয় অস্ত্র চোরাকারবারিরা নিশ্চিত করেছে তাদের পাঠানো অস্ত্র কোনভাবেই ঝুঁকির মধ্যে থাকবেনা। পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ভবিষ্যতে এখানে পাঠাবে তা নিশ্চিত করে গেছে। এইসব বিস্ফোরকের সিংহভাগ গান পাউডার বলে জানা গেছে। হঠাৎ করে অস্ত্রের চালান বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সংসদ নির্বাচন। এ ছাড়াও বিএনপি নেত্রী জেলে যাওয়ার পর বেড়েছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আসা। অনেকের ধারণা ভারতে পালিয়ে থাকা জামায়াত, শিবির ও বিএনপি কর্মীরা জঙ্গীদের মদদে বাংলাদেশে অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলছে। তারা বিরোধী পক্ষের আন্দোলনের অপেক্ষায় রয়েছে। এখানে যে কোন ধরনের আন্দোলন বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেই মজুদ অস্ত্র ও বিস্ফোরক বের করে কাজে লাগাবে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে জঙ্গীরা এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া বিরোধী পক্ষের তরুণদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এইসব প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নাশকতা সৃষ্টি করা।
×