ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তোপের মুখে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

তোপের মুখে মিয়ানমার

মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অভিবাসীর সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ আজ বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় তুলেছে। বিষয়টি এখন জাতীয় কিংবা প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনও এই গুরুত্বপূর্ণ শরণার্থী সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কিত। কারণ গত ছয় মাস ধরে বাংলাদেশে অন্ততপক্ষে ৯ লাখ রাখাইন অঞ্চলের অধিবাসী ভিটাচ্যুত হয়ে মিয়ানমার ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। শুরু থেকেই দেশীয়-আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গণ এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং সমালোচনায় মুখর হয়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের মতো বিশ্বজনীন সংস্থা এই অমানবিক নৃশংসতার বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারকে অনাকাক্সিক্ষত সমস্যা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানায়। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সংঙ্কটটির স্থায়ী সমাধানের ওপর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কোন সুযোগই তৈরি হয়নি। ফেরত নেয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা দ্বার খুলতে না পারা মিয়ানমার এখনও রোহিঙ্গাদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করে সীমান্তের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে সমস্যা যে তিমির সেই তিমিরেই। এসব বহিরাগত রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সঙ্কটের আবর্তে হিমশিম খাচ্ছে। সবচাইতে দুঃখজনক এবং বিস্ময়কর এতে মিয়ানমারের কোন ভ্রƒক্ষেপই নেই। কোন আলোচনা, সমালোচনা এবং নিন্দাকে তোয়াক্কা না করে সে দেশের শাসক এবং সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার প্রলয়ে লিপ্ত। এই মহাদুর্যোগ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আঞ্চলিক নিরাপত্তাই শুধু বিঘিœত হবে না, বরং আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায়ও পড়বে এর বিরূপ প্রভাব। সুতরাং জাতিসংঘসহ আজ সারা বিশ্ব এই ন্যক্কারজনক ও অনভিপ্রেত বিপর্যয় ঠেকাতে সম্মিলিতভাবে জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা বিষয়ক মতবিনিময়ে মিয়ানমারের কাঠোর সমালোচনা করেছে সদস্য দেশগুলো শুধু তাই নয়, বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসাও করা হয়েছে। তারপরেও এর একটি স্থায়ী সমাধন অত্যন্ত জরুরী বলে সদস্যদের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়। সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে জাতিসংঘের কর্মকর্তা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে সঙ্কট নিরসনে কোন পদক্ষেপই ফলপ্রসূ হবে না। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনে বহিরাগত এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীদের সরেজমিনে তদন্ত করার সুযোগ দিতে হবে। কারণ ভয়াবহ এই নৃশংসতার সার্বিক অবস্থা স্পষ্ট না হলে নিরাপদে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে প্রবেশ করতেও ব্যর্থ হবে। এই দায় সম্পূর্ণ মিয়ানমারের হলেও আন্তর্জাতিক সংস্থা, এমনকি বিশ্বের অন্যান্য দেশও সংশ্লিষ্ট সরকারের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়াতে প্রস্তুত। সম্পূর্ণ নাগরিক ও মৌলিক অধিকার দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে না পারলে তাদের সেখানে পাঠানো উচিত হবে না বলে মনে করে জাতিংঘের বিভিন্ন সংস্থা। ফলে মিয়ানমার সরকারের ওপর বিভিন্ন উপায়ে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাতে তারা ভিটাচ্যুত রোহিঙ্গা অভিবাসীদের স্বদেশে নিরাপদভাবে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা অতিসত্বর তৈরি করতে পারে। সীমান্তবর্তী এলাকায় এখনও ভীতসন্ত্রস্ত রোহিঙ্গারা প্রাণভয়ে আপন জন্মভূমি ছেড়ে পালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করাও হচ্ছে। এর একটা আশু সমাধানে জাতিসংঘসহ বিশ্বের অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা সোচ্চার প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। এবার দেখার বিষয় মিয়ানমারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক চাপে তারা আদৌ বাস্তবসম্মত সমাধান দিতে পারে কিনা।
×