ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যু- সমাধানের পথ কি সুদূর পরাহত?

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা ইস্যু- সমাধানের পথ কি সুদূর পরাহত?

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ কী হবে রোহিঙ্গা ইস্যুর? বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে আদৌ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে কিনা? প্রত্যাবাসন না হলে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী পুুরুষ ও শিশুদের অবস্থা কি হবে? ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ভারে সেখানকার স্থানীয়দের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে তা ভবিষ্যতে আদৌ পূরণ হবে কিনা? বাংলাদেশে আশ্রিত হয়ে রোহিঙ্গারা দিন দিন যেভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠছে তা সামাল দেয়া যাবে কিনাÑ এসবসহ নানা প্রশ্নে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে বেড়েই চলেছে। অপরদিকে, রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগিতায় যেসব বেসরকারী সংস্থা ও এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ীভাবে কর্মতৎপরতা চালানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে তাতে প্রতীয়মান হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুটি দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং এর পূর্ণ সমাধান আদৌ হবে কিনা তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, টেকনাফ ও উখিয়ার ১২টি অস্থায়ী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে যত্রতত্র চলাচল করার সুযোগ পাওয়ায় বহুমুখী সমস্যার কবলে পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। উখিয়ার কুতুপালং থেকে টেকনাফের নয়াপাড়া ও শামলাপুর পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে রোহিঙ্গাদের ১২টি আশ্রয় শিবির। ওসব শিবিরের আশপাশের এলাকায় রয়েছে অসংখ্য বাজার। ওসব বাজারে গিয়ে দেখা করার উদ্দেশ্যে বসে থাকে প্রত্যাবাসনে ষড়যন্ত্রকারী পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা। মুঠোফোনে ডাক দিয়ে ডেকে নিয়ে আসা হয় রোহিঙ্গা মাঝিদের। ইতিপূর্বে সরাসরি ক্যাম্প অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ত পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা। প্রশাসনের লোকজন একটু নড়েচড়ে বসছে দেখে তারা এখন বাইরে থেকে প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতর কমপক্ষে ৪-৫টি করে অস্থায়ী ছোট ছোট বাজার গড়ে উঠেছে। ওই বাজারে একেকটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে ৪-৫ জন করে রোহিঙ্গা কিশোর। ক্যাম্প এলাকায় ত্রাণ দিচ্ছে প্রশাসনের লোকজন। চিকিৎসা সেবাও মিলছে সেখানে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও মিলছে। রোহিঙ্গাদের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া আসা করার কারণে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন বিরোধী হয়ে উঠছে। এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে যাওয়া আসা করতে প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজনের তোয়াক্কাও করছে না রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার ডাক্তারের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পালিয়ে যাচ্ছে বলেও জোরালো অভিযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যেতে না দেয়ার জন্য প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে। অভিযোগে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা নগদ টাকার আশায় পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের আহ্বানে ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে রাতের বেলায় ক্যাম্প অভ্যন্তরে সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের টহল ও সশস্ত্র মহড়া চলছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রত্যাবাসনে অনুৎসাহিত করতে এবং সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভীতির মধ্যে রাখতে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা অস্ত্র হাতে ক্যাম্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ রযেছে। ইতিপূর্বে অস্ত্রসহ একাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় লোকবল কম হওয়ায় রাতের বেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিপূর্ণ পাহারা দেয়া কঠিন ব্যাপার। তাছাড়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেগোনা লোকজন যেন অসহায়। রাতে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা ঘুরে বেড়ায় বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, এদেশীয় নাগরিক দাবিদার বহু পুরনো রোহিঙ্গা নেতা প্রত্যাবাসনের বিরোধী করে তুলছে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের। রোহিঙ্গারা এদেশে স্থায়ী হলে তাদের লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। বিদেশী অর্থ এনে তার বড় অংশ পকেটস্থ করার সুযোগ থাকবে অবারিত। মূলত এ কারণেই তারা সাধারণ রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে না যেতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে চলেছে। স্থানীয়দের মতে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হোক বা দীর্ঘায়িত হোক উস্কানিদাতা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বহুমুখী সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ যখন প্রত্যাবাসন প্রশ্নে চুক্তি করেছিল তখন রোহিঙ্গাদের অনেকেই নিজ দেশে ফিরে যেতে উৎসাহী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশের মুখে প্রত্যাবাসন প্রশ্নে না শব্দটিই বেরিয়ে আসছে। রাখাইনে মসজিদ ভাঙ্গার গুজব ॥ রাখাইনের মংডু শহরের জামবইন্নার লামার বাজার এলাকার দীর্ঘদিনের বড় একটি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রিত ক্যাম্পে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।
×