ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বইয়ের ভুবনে শিশুপ্রহর

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বইয়ের ভুবনে শিশুপ্রহর

চলছে গাড়ি সিসিমপুরে, চলছে গাড়ি সিসিমপুরে....এই গান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ছোট্ট বাচ্চারা মঞ্চে নাচানাচি করতে থাকে। মঞ্চের চারপাশে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকা ছানাপোনাদের উল্লাস যেন তখন আর বাধ মানে না। শিশুদের আনন্দ দিতে শিশু চত্বরের মঞ্চে সিসিমপুরের বন্ধুরা তো ছিলই। ‘টুকটুকি’ ‘হালুম’, ‘সিকু’, ‘ইকড়ি’রা যখন মঞ্চে নাচ-গানে ব্যস্ত, তখন তাদের চরিত্র অনুযায়ী গান বাজানো হয়। মূলত বাচ্চাদেরকে বিনোদন দিতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সিসিমপুরের আয়োজনে শিশু চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় তাদের জন্য আনন্দ আড্ডা। ছোট্ট বন্ধুরা টেলিভিশনের পর্দার সিসিমপুর চোখের সামনে দেখছে। তাই টুকটুকি, ইকরি এবং হালুমদের দেখে আনন্দ যেন একটু বেশিই। ‘শিশুপ্রহর’। শিশুরা যেন দেখেশুনে মনের মতো বই কিনতে পারে তাই এই আয়োজন। শিশুদের কেউ এসেছে বাবার সঙ্গে, কেউ এসেছে মায়ের সঙ্গে, কেউ বড় ভাই কিংবা পরিবারের অন্য বড় কোনও সদস্যদের সঙ্গে। শিশুদের বইয়ের সমাহার নিয়ে হাজির হওয়া স্টলগুলোতে গুটি গুটি পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা, পছন্দ করছে বই। বাজেট অনুযায়ী কেনাও হচ্ছে একটি-দু’টি। পরে কোন একদিন এসে কিনবে বলে কেউ কেউ আজকের দিনটি কেবল বই দেখেই কাটিয়ে দিচ্ছে। এককথায় মেলার প্রথম শিশুপ্রহরে শিশু-কিশোরদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল একুশে গ্রন্থমেলা। শুক্রবার শত শত শিশু-কিশোর অভিভাবকদের সঙ্গে মেলায় আসে। বেলা ১১ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য শিশু-কিশোর ও অভিভাবকরা সারিবদ্ধভাবে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। দুপুর ১২টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলায় ও বাংলা একাডেমিতে বিপুল শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের সমাগম ঘটে। শিশুরা ঘুরে ঘুরে বই দেখেছে। ছবি তুলছে। খেলছে। বড়দের সঙ্গে মেলার নানা বিষয় নিয়ে শিশুরা কথাও বলছে। বই কিনে দেয়ার আবদার করেছে। অনেকে বইও কিনেছে। শুক্রবার সকাল থেকেই মেলায় আসতে থাকে বইবোঝাই করা যানবাহন। মাচা গাড়ি, ঠেলাগাড়ি, প্রাইভেট জিপসহ বিভিন্ন যানবাহনে বই আনার ধুম পড়েছে। বইবোঝাই অগণিত গাড়ি মেলার ভেতরে ঢুকে বই খালাস করতে দেখা যায়। মেলার প্রথম শিশুপ্রহরে সিসিমপুর মঞ্চে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অনীল বাশারের নতুন দুটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে মেতেছিল একদল শিশু। এটাই এবারের মেলায় প্রথম শিশুগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব। শিশুরা আনন্দে ঘুরছে, নাচছে আবার অনেকে গাইছে গান। পরে খেলাধুলা করে যোগ দেয় অনীল বাশারের দুই নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে। মেলায় ঢুকলেই ধুলোয় পা মাখামাখি হয়ে যায়। তবুও মন ভালো হয়ে যায়। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ সব আকর্ষণ কেড়ে নেয়। তাই ধুলো জড়ানো পথ মাড়িয়ে স্টলে স্টলে মণি-মাণিক্য কুড়াতে ব্যস্ত দেখা গেল ক্ষুদে পাঠকদের। বাংলা একাডেমির বইমেলাটি ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের মানুষের গভীর আবেগ, ভালোবাসা ও গ্রন্থপ্রীতি যুক্ত হয়ে মেলাটি ধীরে ধীরে বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণ আর রুচি নির্মাণের এক অনন্য প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। প্রতিবছর আবালবৃদ্ধবনিতা থেকে শুরু করে তরুণ-যুবারা বিপুল হারে এই মেলায় আসেন, বই কেনেন, বন্ধুর সান্নিধ্যে আড্ডা দেন এবং জীবনের নানা বিষয় নিয়ে আলাপচারিতায় মেতে থাকেন। আমাদের এই বইমেলাটি অন্য কোন বইমেলার মতো নয়, একেবারেই বাঙালির ভাষাপ্রীতি, ভাষার জন্য সংগ্রাম ও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মাতৃভাষার প্রতিষ্ঠার স্মারক হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক মানোন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধিতেও মেলাটির গুরুত্ব অসাধারণ। বইমেলার বৃহৎ পরিসরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে যাওয়ায় অমর একুশের স্মৃতিবাহী এই মেলাটির ঐতিহ্যের বিস্তার ঘটেছে। যে মেলা একুশের মহান ঐতিহ্যকে ধারণ করে এত বিশাল আকার ধারণ করেছে, তা এখন আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের মূল স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও সমপ্রসারিত হচ্ছে। এই স্থান থেকেই ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাঙালির মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। তাই এখানে বইমেলা সমপ্রসারিত হওয়ায় বাংলাদেশের বাঙালির জাতিসত্তার উদ্বোধনের স্মৃতিবাহী একুশের ঐতিহ্যের সঙ্গে স্বাধীনতাসংগ্রামের চেতনা যুক্ত হয়ে মেলাটি এখন নতুন আঙ্গিক, পরিসর ও মাত্রিকতায় স্থিত শুরু হওয়ার পর থেকে অমর একুশে বইমেলা আপামর বাঙালীর কাছে প্রাণজোয়ার সৃষ্টিকারী এক মেলায় পরিনত হয়েছে। পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ যেমন বাবুই পাখিকে কাছে ডেকে আনে। কৃষক যেমন ফসলের জন্য মমত্ব প্রকাশ করে। ঠিক তেমনি বাবুই পাখি আর কৃষকের মত বইপ্রেমীরাও ছুটে আসে বইমেলায়। আর ছোট্ট বইপ্রেমিরা কেউ এসেছে বাবার সঙ্গে, কেউ এসেছে মায়ের সঙ্গে, কেউ বড় ভাই কিংবা পরিবারের অন্য বড় কোনও সদস্যদের সঙ্গে নতুন বইয়ের খোঁজে তারা ঘর থেকে বের হয়। এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে বেড়ান। কারুকার্যময় প্রচ্ছদ দেখে তারা মুগ্ধ হয়। নতুন নতুন বই তাদেরকে কাছে টানে। এভাবে তারা কাটিয়ে দেয় শিশু প্রহরের পুরো সময়টা এরকমভাবেই বইপ্রেমীদের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গণ। তখন বইপোকাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে মেলার চারপাশ। কেউবা ঠু মেরে থাকেন প্রিয় লেখকের সন্ধানে। পছন্দের লেখককে দেখা মাত্র তারা ছুটে যান তাদের কাছে। সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করেন। দুই এক কপি ছবি তুলতেও ভুল করেন না। কেউবা তোলেন সেলফি। এভাবে বইপ্রেমী-দর্শনার্থী-ক্রেতা-বিক্রেতাদের কলতানে মুখর হয়ে উঠে বইমেলার আঙ্গিণা। তখন বাতাসে কেবলই উড়ে বেড়ায় নতুন বইয়ের গন্ধ। এভাবে বইমেলার আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মুখে শহীদ মিনার এঁকে দিই। প্রশ্ন শুনে পেছনে তাকাল তানহা ও মানহা। মা-বাবার সঙ্গে বইমেলায় যাচ্ছিল ওরা। টিএসসির মোড় থেকে তাদের পিছু নেন আলপনা আঁকিয়েরা। মা-বাবা বেশ খুশি মনেই রাজি হলো। তানহা জাতীয় পতাকা ও মানহা ক্রিকেট ব্যাট আর বল আঁকাল মুখে। ওরা দারুণ খুশি। আমরা নতুন আমরা কুঁড়ি, নিখিল বন নন্দনে, ওষ্ঠে রাঙ্গা হাসির রেখা জীবন জাগে স্পন্দনে... হ্যাঁ, শিশুদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে বইমেলা। শিশুপ্রহর থাকায় বড়দের ভিড় নেই, নেই ধাক্কাধাক্কি। মা, দেখ দেখ সব আমার বই। শিশু কর্নারে স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাসে কথাটা বলল নয় বছরের শিশু মিথিলা। মা রাশেদা হক তাকে নিয়ে এসেছেন মেলায়। মিথিলার সঙ্গে দেখা হলো মেলাতে ঢুকেই। বই কিনল তারা। ঢাকা প্রিপারেটরি হাই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তানিয়া ইসলাম এসেছিল মা সোমা ইসালম হাত ধরে। স্টলে সে বিভিন্ন বই হাতে নিয়ে দেখছিল। সঙ্গে থাকা তানিয়ার মামা বইটি খুলে দেখাতে চাইলে সে বিরক্ত হয়ে বলে, আমাকেই দেখতে দাও। তানিয়ার জবাব স্মরণ করিয়ে দেয় শিশুদেরও আলাদা একটা জগৎ আছে, চাহিদা আছে। প্রতিদিনই বাবা মার সাথে শিশুরা মেলায় আসে, বইয়ের জন্য বায়নাও ধরে। বাবা মা পছন্দের বই তুলে দেন তাদের হাতে। কিন্তু মেলায় শিশুদের জন্য শুক্রবার বিশেষ প্রহরের চিত্র ছিল অন্যরকম। শিশুরাই যেন মূল ক্রেতা, রঙচঙা হরেক বই থেকে তাদের চোখ যেন আর উঠতেই চায় না । সাদিয়া ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ক্লাশ সিক্সে পড়ে। স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই বাবার সঙ্গে এসেছিল অমর একুশে বইমেলায়। বলছিল মেলায় এসে অনেকগুলো বই কিনেছে সে। সাদিয়ার বাবা কাজ করেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বলছিলেন সন্তানকে বইয়ের বর্ণময় জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার চেষ্টা হিসেবে তিনি প্রতিবছরই সন্তানকে নিয়ে মেলায় আসেন। ‘ওর মধ্যে যেন সৃষ্টিশীলতার ব্যাপারটি তৈরি হয়, সেই চেষ্টা করছি’। সিলেট থেকে শিশুপ্রহরে বই কেনার জন্য দুই সন্তানকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন। তাঁর দুই সন্তান ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র রফিক ও ২য় শ্রেণীর ছাত্রী নিতু। তারা বিভিন্ন স্টল ঘুরে বই কিনল। ভাল লাগছে, শিশুপ্রহরের উদ্যোগটা ভাল, এতে বাচ্চারা স্বচ্ছন্দে বই কিনতে পারছে, দেখতে পারছে। বাবা রিয়াজ ও মা আমেনা আক্তারের সঙ্গে এসেছিল মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ৩য় শ্রেণীর ছাত্র নাঈম ও তার ছোট্ট বোন মালিহা। তারা খুব খুশি, মেলাকে নিজেদের দখলে পেয়ে দৌড়ে বেড়ায় মেলাজুড়ে। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র শরীফ এসেছে তার বাবার সাথে বই কিনতে। সে ভূতের বই ও ছবি আকার বই কিনেছে। মেলায় বাসাবো থেকে আশিকুর রহমান এসেছে তার মেয়েকে নিয়ে বই কিনতে। তিনি মেয়েকে কিনে দিয়েছেন ছড়ার বই। তিনি জানান, শুক্রবার থাকায় মেলায় এসেছেন পবিরার নিয়ে। প্রতিবছর তিনি আসেন বই মেলায়। তবে এবার এসেছেন মেয়ের জন্য বই কিনতে। শিশুদের বইয়ের কয়েকটি প্রকাশনার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিশুরা বইকেনার ব্যাপারে বেশ সতর্ক। তারা বেছে বেছে বই কিনছে। কি ধরনের শিশুরা বেশী কিনছে জানতে চাইলে তারা জানান, বিজ্ঞান বিষয়ক বই ও ভূতের বই বেশীর ভাগ শিশুদের পছন্দ। এছাড়াও রূপকথা, গল্প ও ছড়ার বই শিশুদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। তবে শিশুপ্রহরের শুরুতে মেলায় তেমন ভিড় ছিল না। দুপুরের দিকে ছোট্ট বন্ধুদের বেশি আসতে দেখা যায়। যাচাইবাছাই করে যারা বই কিনতে চান, তাদের জন্য ছিল বেশ চমৎকার ও ছিমছাম পরিবেশ। যারা বই কেনার পরিকল্পনা করে এসেছিলেন, তারা বেশ স্বস্তিতেই দেখেশুনে, নেড়েচেড়ে, এমনকি বইটির কিছু অংশ পাঠ করে কেনার সুযোগ পেয়েছেন। শিশুদের জগত বড়দের চেয়ে আলাদাই শুধু নয়, অনেক অনেক রঙিন আর প্রাণবন্তও। বিশ্বের ও বাংলা ভাষার অনেক শিশুসাহিত্যিক এই রংদার জগতটাকে ফুটিয়ে তুলেছেন আকর্ষণীয় করে। মজার মজার গল্প, ছড়া, রূপকথা দিয়ে তারা তৈরি করেছেন অন্যরকম এক ভুবন। কাজটা কিন্তু খুব সহজ নয়। সাধারণভাবে যেসব লেখা শিশুদের উপযোগী করে লেখা হয় তাকেই শিশুসাহিত্য বলে। মজার মজার গল্প, ছড়া, রূপকথা ইত্যাদি শিশুসাহিত্যের কয়েকটি দিক। অনেকে মনে করে শিশুদের জন্য লেখা এমন আর কঠিন কী কাজ! সত্যি বলতে কী, শিশুসাহিত্য রচনা করা অত সোজা নয়। কারণ শিশুদের রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বৈচিত্রময় ভুবন। এই ভুবন বড়দের চেয়ে আলাদাই শুধু নয়, অনেক অনেক রঙিন আর প্রাণবন্ত। শিশুদের ভুবনকে স্পর্শ করার জন্য সবচেয়ে আগে যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে একটি শিশুসুলভ সুন্দর মন। তাই দেখা যায়, পৃথিবীতে হাজার হাজার লেখক থাকলেও তার মধ্যে অমর শিশুসাহিত্যিক হাতেগোনা কয়েকজন। শিশুদের কল্পনার রসে সিক্ত করতে রূপকথার জুড়ি নেই। রূপকথা শিশুদের ভাবতে শেখায়, স্বপ্ন দেখতে শেখায়। যে জাতির কোন স্বপ্ন নেই সে জাতি কখনো উন্নতির শিখরে আরোহনের চিন্তা করতে পারে না। রূপকথা শিশু মনে স্বপ্নের ডানা মেলে উড়তে হাতছানি দেয়। বিশ্বনন্দিত শিশুসাহিত্যিকেরা এ কারণে রূপকথার জাল বুনে শিশুদের নিয়ে গেছে এক স্বপ্নরাজ্যে। ভাবতে শিখিয়েছেন জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখতে আর উজ্জ্বল ভবিষ্যত বির্নিমানের অভিযাত্রায় শামিল হতে। তাই রূপকথার সঙ্গে সঙ্গে এর বুনন শিল্পীরাও আজীবন বেঁেচ আছেন পাঠকের মনের মনিকোঠায়। মেলায় এমন আরও অনেক খুদে পাঠক রয়েছে যাদের অক্ষরজ্ঞান নেই। তবে তারাও মনোযোগ দিয়ে বই দেখছে। পছন্দ হলেই কিনবে। কারণ তাদের খুব ভালো করেই জানা আছে, মা-বাবারা বই থেকে পড়ে শোনাবেন গল্প। কখনও ছুটেছে কার্টুন আর কমিকসের খোঁজে, কখনও নেড়েচেড়ে দেখেছে ছবির বইগুলো। সমান তালেই চাহিদা রয়েছে দেশীয় কিছু গল্পের বইয়ের। রূপকথার বইয়ে আঁকিবুঁকি তাদের দৃষ্টি কাড়ছে। শিশুদের বইয়ের সমাহার নিয়ে হাজির হওয়া স্টলগুলোতে গুটি গুটি পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা, পছন্দ করছে বই। বাজেট অনুযায়ী কেনাও হচ্ছে একটি-দু’টি। ফেব্রুয়ারির প্রতি শুক্র ও শনিবার যেহেতু শিশু প্রহর তাই অনেকে আজকের দিনটি কেবল বই দেখেই কাটিয়ে দিচ্ছে। আবার হাজির হয়ে কিনবে পরের শিশুপ্রহরে। এ যেন বইয়ের ভুবনে শিশুপ্রহরের কলতান। শীতের শেষে বসন্তের আগমনের নীরব প্রস্তুতি শুরু প্রকৃতিতে। আর এ সময়েই মহান ভাষা আন্দোলনের চিরগৌরবময় স্মৃতি ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ জাতি মনে-মানসে আপন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুরাগে দীপ্ত হয়ে ওঠে। এসব উদ্যোগের মাঝেই বিরাট একটি স্থান দখল করে আছে অমর একুশে বইমেলা আর বইমেলায় শিশুদের জন্য শিশুপ্রহর। আজকের শিশুর মাঝেই ঘুমিয়ে রয়েছে নিউটন, আইনস্টাইন, টলস্টয়, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মতো বিশ্ব প্রতিভা। তাই শিশুদের ফুলের মতো বিকশিত করতে বইমেলার শিশুপ্রহর খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখছে এ কথা বলা মোটেই অত্যুক্তি হবে না। জীবনকে ফুলের মতো বিকশিত করার জন্য চাই সঠিক দিকনির্দেশনা। বই শিশু-কিশোরদের জন্য ঠিক এ কাজটি করতে পারে। বইমেলা শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে আরও সহায়ক হবে সকলের এটাই প্রত্যাশা। পূরণ হোক জাতি বিকাশের এই প্রত্যাশা। ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারী পার হলে ভাঙে এ মিলন মেলা। বইমেলা আমাদের অন্তরে যে বন্ধন তৈরি করে তা ভাঙে না কখনই। দেশের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে। অনুপ্রেরণা জোগায়। বাঙালী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ‘অমর একুশে বইমেলা’ আবার কবে ফিরে আসবে এই অপেক্ষায়। সত্যিকার অর্থে বইয়ের ভাষা লেখক যেমন বুঝে শুনে হৃদয় দিয়ে লেখেন, সেভাবে পাঠককের বুঝে শুনে হৃদয় দিয়ে পড়তে হবে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা পাঠকদের সেই শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাতে পারবে,সব অন্ধকার দূর হবে বইয়ের স্পর্শে। [email protected]
×