ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যে ড্র জয়তুল্য

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

যে ড্র জয়তুল্য

ত্রিদেশীয় কাপে সীমিত ওভারের ম্যাচে শ্রীলঙ্কা যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তাতে তাদেরকে হেলাফেলা করার কোন কারণ ছিল না। তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৫০০ অতিক্রম করলে অনেকেই নিশ্চিন্ত বোধ করেছিলেন। কিন্তু ক্রিকেটে এভাবে নিশ্চিত হওয়া অনেক সময় নির্বুদ্ধিতাই হয়ে দাঁড়ায়। শ্রীলঙ্কা ব্যাট করতে এসে ৭০০ ছাড়াল। এ ছিল অভাবনীয়, অস্বস্তিকর। শুধু টাইগারদের জন্য নয়, দেশের ক্রিকেটপ্রেমী কোটি দর্শকের জন্যও। তাই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দল হেরে যায় কিনা এমন একটা আশঙ্কা চোখ রাঙাচ্ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত মুমিনুল-মাহমুদুল্লাহদের দৃঢ়তায় খেলার ফল অমীমাংসিত থেকেছে। অর্থাৎ ম্যাচ ড্র হয়েছে। তবু এ ড্র যেন জয়ের মতোই। টাইগারদের দেহভাষায়ও সেটিই ফুটে উঠল। সিরিজের প্রথম টেস্টে ড্র মেনে নিয়েছে দুই দল। পঞ্চম দিনের ১৭টি ওভার তাই অব্যবহৃত থাকল। সামনের টেস্টে বাংলাদেশ ভাল করুক এটাই সবার প্রত্যাশা। আর ভাল করতে গেলে যে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা নিতে হবে- সেটাও জানা কথা। দেশবাসী খেলোয়াড়দের দিকে তাকিয়ে রয়েছে অনেক আশা নিয়ে। তাদের মনোবল ধৈর্যটাই আসল। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশ আগে অনেকবার জিতেছে। তাই আগামীতে জয় অধরা হবে না। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুমিনুল গড়েছেন ইতিহাস। টেস্টে এ পর্যন্ত ৮৭ ক্রিকেটার বাংলাদেশের সাদা জার্সি গায়ে তুলেছেন। তাদের মধ্যে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি তুলে নিলেন মুমিনুল। ভীষণ চাপের মধ্যে মুমিনুলের গড়া এই কীর্তি নেই শচীন টেন্ডুলকরেরও! এই টেস্ট তাঁকে দুহাত ভরে দিয়েছে। তাঁর অসাধারণ এই ইনিংসে ব্যক্তিগত রেকর্ডের পাতা সমৃদ্ধ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এটি ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে। রেকর্ডের চেয়েও এই সেঞ্চুরির মহিমা এটিই। তাঁর এই ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছেন ১৭৪ বলে, ৫টি চার ও ২ ছক্কায়। সাকিববিহীন বাংলাদেশ দল কিছুটা কম শক্তিমান হলেও গভীর মনোসংযোগ ও মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে দলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছেন খেলোয়াড়রা। তাদের সাধুবাদ জানাতে হবে। আমরা আগেও বলেছি, বাইরের দুনিয়া বাংলাদেশকে যে কয়টি ইতিবাচক অর্জনের জন্য চিনছে তার ভেতর প্রথম সারিতে রয়েছে ক্রিকেট। মেধা ও প্রতিভা যদি ঈশ্বর প্রদত্ত বলে মেনেও নিই, তারপরও থাকে তার চর্চা, অনুশীলন ও সাধনার বিষয়টি। আমরা আগেও বলেছি বাঙালীর ক্রিকেটমেধা চাপা পড়ে ছিল পাকিস্তান নামক অভব্য, বাঙালীবিদ্বেষী রাষ্ট্রের কাছে। স্বাধীনতার সুন্দরতম ফসলের একটি আমাদের ক্রিকেট। আমাদের ছেলেরা বিশ্বক্রিকেটে নিজেদের জাদু দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলাÑ এমন কথা বরাবরই বলা হয়ে থাকে। হ্যাঁ, অনিশ্চয়তা আছে বটে। সেটি ব্যতিক্রম হিসেবেই চিহ্নিত। অঘটন বার বার ঘটে না। ক্রিকেটশক্তির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এই অঘটনের মাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। সীমিত ওভারের ম্যাচে এই উপমহাদেশ, তথা গোটা ক্রিকেটবিশ্বেরই দুই সুপার পাওয়ার পাকিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে বিগত বছরগুলোয় সিরিজ জয়ের মাধ্যমে দুনিয়াকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বর্তমানে ক্রিকেটে নতুন পরাশক্তির নাম বাংলাদেশ। এখন টেস্ট ম্যাচেও এগিয়ে যাওয়ার পালা। সেজন্যে শক্তিমান টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে আরও বেশি বেশি ম্যাচ খেলার যে বিকল্প নেই সেকথা বলাই বাহুল্য।
×