ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উন্মাদের পাঠক্রম

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

উন্মাদের পাঠক্রম

উন্মাদনার মাত্রা বেড়ে গেলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেতে বাধ্য। উন্মাদের আচরণ তখন এমনই মাত্রা পায় যে, আবোল-তাবোল ও প্রলাপ বাক্য ক্রমশ নির্গত হতে থাকে। কি বলতে কি বলে ফেলা হয়, তার পূর্ব ধারণা থাকে না অনেক ক্ষেত্রেই। তাই প্রায়শই দেখা যায়, তিনি কথায় কথায় সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যেমন বিষোদগার করে থাকেন, তেমনি তারা যে তার বশংবদ এমন ভাষ্যও তুলে ধরেন। এই তিনটি বিভাগকে বিতর্কিত করে তোলার জন্য নানা সময় নানান অযৌক্তিক বয়ান দিয়ে আসছেন। বিষয়টি খুব হাল্কাভাবে নেয়ার কারণ নেই। সচেতনভাবেই তিনি তা করেন, কিন্তু বাহ্যিকভাবে মনে হতে পারে, এ হচ্ছে বাংলা ভাষার কবি জয় গোস্বামীর কাব্য ‘উন্মাদের পাঠক্রম’ যেন। অযথাই তিনি এই তিন বিভাগকে নিয়ে কথা বলেন তা নয়। তিনি এ সবই করে থাকেন ষড়যন্ত্রীগন্ধী মনের তাড়নায়। তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে এই তিন বিভাগকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ ও বশংবাদ করে রেখেছিলেন এখন সব হারিয়েও সেই ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। তার এই ভাষ্য যে দেশ ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার নামান্তর তা তিনিও বোঝেন। বোঝেন না প্রতিপক্ষ রাজনীতিকরা। তাই তারা হাল্কাচালে বিষয়টিকে উড়িয়ে দেন। বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার প্রণোদনায় তিনি আবারও ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে বিভোর হয়ে হুমকি-ধমকি দিতেও কসুর করছেন না। বিএনপি নেত্রী দলের বর্ধিত সভায় মন খুলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সদর্পে বলেছেনও বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন আছে, পুলিশ আছে, সশস্ত্র বাহিনী আছে। কাজেই বিএনপির কোন ভয় নেই। ভয়টা আওয়ামী লীগের। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রের এই তিনটি বিভাগ কিভাবে থাকতে পারে তার মাজেজা জানেন তিনি। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি এই তিন বিভাগে তার দলীয় পোষ্যদের যোগ্যতা বিচার না করেই নিয়োগ দিয়েছিলেন। যারা তার বদান্যতায় চাকরি পেয়েছে দলীয়করণের ধারাবাহিকতায়, কিন্তু চাকরি পাওয়ার পর তারা তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীতে পরিণত হয়েছেন। দলীয় লেজুড় হওয়ার বিধিবিধান তাদের চাকরির শর্তাবলীতে না থাকলেও বিএনপি নেত্রী তাদের নিজ দলের সঙ্গে এখনও সম্পৃক্ত করে রাখতে চান। বেগম জিয়ার অধীনেই যদি তারা থাকবেন তবে দেশও তো তারই পরিচালনার কথা। ক্ষমতা ও সংসদ থেকে বহু দূর-দূরত্বে থাকার পরও তিনি এমন দাবি করছেন ভিত্তিহীনভাবে তা নয়। অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী যদি বিএনপি নেত্রীর অধীনে হয়ে থাকে তবে দেশ চলছে কীভাবে? মৌলিক প্রশ্ন অবশ্যই। সাংসদ খ. ম জাহাঙ্গীর প্রশ্ন উত্থাপন করে সংসদে বলেছিলেন, সবাই যদি ওনার সঙ্গে থাকে, তবে আমরা কোথায়? অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকার চলছে কীভাবে। আর সবই যদি বিএনপির সঙ্গে থাকে তবে প্রিজনভ্যানে হামলা, রাইফেল ভেঙ্গে ফেলা, পুলিশের ওপর হামলা করার যে দৃশ্য গণমাধ্যমে এসেছে তা কি ‘নিজেরা নিজেরা খেলি’ বলে তিনি প্রমাণ করতে চান? উদ্ভট মনে হলেও ভুলে গেলে চলবে না। অতীতেও তিনি সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখল করার জন্য ডাক দিয়েছিলেন। নব্বই দশকে বায়তুল মোকাররমের জনসভায় দাঁড়িয়ে তিনি এই অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী আহ্বান জানাতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন না। ২০১৩ সালের ২৩ মার্চ তিনি বগুড়ায় গিয়ে সেনাবাহিনীর উদ্দেশে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। এমনটাই বলেছিলেন, দেশে কোন বিশৃঙ্খলা হলে সেনাবাহিনী বসে থাকবে না। তারা সময়মতো দায়িত্ব পালন করবে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনী। কিন্তু ক্ষমতা দখলকারী জান্তা শাসক জিয়া ও এরশাদ সেনাবাহিনীকে যেভাবে ব্যবহার করেছে বিএনপিও সেভাবে বারবার গর্বের প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তিনি নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগ বিচারিক ক্ষমতা প্রদানের দাবি করে বিতর্কিত স্থানে তাদের ঠেলে দিতে চান। আমাদের সংবিধানে সেনাবাহিনীর কর্মপরিধি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিচারিক ক্ষমতা প্রদান সংবিধানসম্মত নয়। উন্মাদনার শেষ স্তরে এসে অলীক স্বপ্নদ্রষ্টা বিএনপি নেত্রী যা পাঠ করছেন তা অত্যন্ত গর্হিত, নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বৈকি।
×