ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সেলফি কালচার

বিবর্ণ হবে না টুকরো যতো স্মৃতি, থাকবে মণিকোঠায়

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

বিবর্ণ হবে না টুকরো যতো স্মৃতি, থাকবে মণিকোঠায়

সমুদ্র হক ॥ সেল্ফি। এ যুগের আলোচিত শব্দ। তরুণ-তরুণীদের কাছে তো খুবই প্রিয়। শিশুরা বেশ মজা পায়। মধ্য বয়সীরাও বা কম কিসে! সেল্ফি মুখে এলেই হাতে আসতে চায় স্মার্ট ফোন। হাতে নিয়ে ওপরে ধরে ভিউ ফাইন্ডারে এক ঝলক দেখে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ছুঁয়ে দিলেই হলো। চিরদিনের জন্য স্মার্ট ফোনে রয়ে গেল প্রীতিকর সুখময় ছবি। আর হৃদয়ের এ্যালবামে তো রইলোই। এখন ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা না হলেও চলে। স্মার্ট ফোনেই স্থির ও ভিডিও ছবি তোলার ব্যবস্থা আছে। যখন মন চায় তখনই ছবি তোলা যায় ঘরে বাইরে। নিজেই নিজের ছবি, স্বজন বন্ধুদের সঙ্গে নিজের ছবি নেয়া যায় সেল্ফিতে। ভিডিও চিত্রে ধারণ করা যায় নিজেকে নিয়ে। এই কথাগুলো এখন সকলেই জানে। কোন অনুষ্ঠানে গেলে, ভ্রমণে গেলে, পরিচিতজনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেল্ফি যেন না তুললেই নয়। এভাবে সেল্ফি দিনে দিনে ‘রিয়েল লাইফ রিলেশনশিপে’ পরিণত হয়েছে। বিশ্বে প্রথম সেল্ফি তোলেন মার্কিন আলোকচিত্রী রবার্ট কর্নিলিয়াস ১৮৩৯ সালে। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে পোর্টেবল কোডাক ব্রাউনি বক্স ক্যামেরা বাজারে আসার পর ফটোগ্রাফিতে আত্মপ্রকৃতি তোলা জনপ্রিয়তা পায়। সেল্ফি শব্দটি ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ান অনলাইনে প্রথম ব্যবহার হয়। ফেসবুকের আগের সময়টায় মাইস্পেস যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ফেসবুকে সেল্ফি বিশ্বকাঁপানো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে সেল্ফিতে মেয়েরা এগিয়ে আছে। তবে ছেলেমেয়ে উভয়ের কাছেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে সমাজের সর্বস্তরে সেল্ফির গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। স্মার্টফোন ও ক্যামেরা প্রস্তুতকারী কোম্পানি স্যামসাংয়ের এক জরিপে বলা হয়েছে : ১৮ থেকে ২৬ বছর বয়সীদের তোলা সেল্ফির ৪০ শতাংশই যোগাযোগ মাধ্যমে যাচ্ছে। নিজেকে সুন্দরভাবে প্রদর্শনের মাধ্যমে অন্যকে আকৃষ্ট করতে সেল্ফি তোলা হচ্ছে বেশি। যার সেলফি যত বেশি আকর্ষণীয় সেই সেল্ফি তত বেশি উন্নত। সেলফির অর্থ আত্মপ্রকৃতি, আলোকচিত্র, দল অলোকচিত্র। যা সাধারণত ডিজিটাল বা ক্যামেরা ফোনে নেয়া। সেল্ফি এতটাই জনপ্রিয় যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ করে ফেসবুকে শেয়ার না করলে যেন অতৃপ্তই রয়ে যায়। সেল্ফি শব্দটি এসেছে ইংরেজী সেলফিস থেকে। ২০১৩ সালে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির অনলাইন ভার্সনে সেল্ফি শব্দটি নতুন সংযোজিত হয়। ওই অভিধানের মতে : সেল্ফি হলো একটি ছবি (আলোকচিত্র) যা নিজের তোলা নিজের প্রতিকৃতি, বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিকৃতি। যা সাধারণত স্মার্টফোন বা ওয়েবক্যামে ধারণকৃত এবং যে কোন সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করা হয়। ২০১৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে ‘সেলফি’ শব্দটি বছরের আলোচিত সেরা দশটি শব্দের অন্যতম বিবেচিত হয়। এর পর সেল্ফির ল্যান্ডস্লাইড ভিক্টরি। নিকট অতীতে ছবি তোলার আগে একটি শব্দ ছিল সেলফ টাইমার। অর্থাৎ স্ট্যান্ডে ক্যামেরা রেখে সামনে এক বা একাধিকজনকে বসিয়ে চিত্রগ্রাহক ক্যামেরার সেলফ টাইমার ক্লিক করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে পড়তেন। এই ছিল নিকট অতীতের সেলফি। ছবি তোলা বা ফটোগ্রাফি কেমন ছিল নিকট অতীতে! -প্রজন্ম এই ইতিহাস শুনলে অবাক হয়ে যায়ে। যারা মধ্যবয়সী তাদের স্মৃতিতে ভেসে আসে সাদাকালো ছবি তোলার সেই দিনগুলো। গত শতকের আশির দশকেও একটি ফিল্মে ১২টি সাদাকালো ছবি তোলার ক্যামেরা ছিল। ৩৫ মিলিমিটারের ফিল্মে ৩৬টি ছবি তোলা হতো। সাদাকালো ছবির পর এলো রঙিন ফিল্মে ছবি। ছবি তোলার পর কোন ফটো স্টুডিওতে গিয়ে প্রসেস ও প্রিন্ট করা হতো অন্ধকার কক্ষে। যাদের ক্যামেরা ছিল না তারা ফটো স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তুলত। ছবি তোলার পর তা সরবরাহ দেয়া হতো দুই থেকে তিন দিন পর। এগুলো ছিল স্থির চিত্র। ফিল্মে চলমান ছবি ছিল ব্যয়বহুল। দরকার হতো মুভি ক্যামেরা। ছবি তোলার সেই দিনগুলো আজ শুধুই অতীত। একবিংশ শতকে স্মার্ট ক্যামেরা ফোন এখন তরুণ-তরুণী মধ্যবয়সীদের হাতে। এখন আর ফিল্ম প্রসেস প্রিন্টেরও দরকার নেই। স্মার্ট ফোনে স্থির ও ভিডিও ছবি তোলার সঙ্গেই তা লাইভ দেখা যায়। সেল (মোবাইল) ফোন ছাড়া জীবন চলে না। সেলফি ছবি ধরে রাখছে জীবনের আনন্দের স্মৃতিময় অধ্যায়। মানুষের জীবনের একেকটি সময় একেকটি অধ্যায়। সেই অধ্যায়ে রয়ে যায় কত স্মৃতি। সেল্ফি ধরে রাখে সেইসব স্মৃতিকে। সেল্ফি যেন ব্যক্তি জীবনের ইতিহাসের পাতা। যে পাতা আবির মেখে রং ছড়ায়। যেন বিবর্ণ হতে দেবে না মণিকোঠায়।
×