ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক লুৎফুন নাহার কবির মনি

জলবায়ু পরিবর্তনে ॥ পাখি ও ব্যাঙের প্রভাব

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮

জলবায়ু পরিবর্তনে ॥ পাখি ও ব্যাঙের প্রভাব

আমাদের দেশে শীত মৌসুমে প্রচুর অতিথি পাখি আসে। এরা আসে শীত প্রধান দেশ হতে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য এবং বংশবৃদ্ধির জন্য। কিন্তু যত্রতত্র অতিথি পাখি নিধনের কারণে এবং এদেশে পাখি আসা আগের চেয়ে কমে গেছে। কারণ মানুষের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে অতিথি পাখিরা এই দেশে নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না। শুধু অতিথি পাখি নয় দেশীয় পাখির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ফলে পাখিসহ অনেক প্রাণীও আজ বিলুপ্তির পথে। অনেক প্রাণী সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একটা বৃক্ষে অনেক প্রাণী বসবাস করে। একসময় ঢাকা শহরে প্রচুর বৃক্ষ, পাখি এবং পুকুর-জলাশয় দেখা যেত। বর্ষাকালে প্রচুর মাছ, ব্যাঙ ও ব্যাঙের বাচ্চা ভেসে উঠত। ঢাকা শহরের জলাশয়গুলো রক্ষা এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা প্রয়োজন। পাখি সবচেয়ে বেশি কীটপতঙ্গ খায়। এমনকি ব্যাঙও ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলী উদ্ভিদকে রক্ষা করে। এ জন্য অতিথি পাখি ও অন্যান্য পাখি শিকার করা সম্পূর্ণ নিষেধ হওয়া উচিত। অতিথি পাখি নির্বিচারে মারা পড়ার কারণে ভ্রমণকারী পাখি আসার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ওরা দিক পরিবর্তন করে অন্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছে। ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরাগায়নে সহায়তাকারী মৌমাছি ও উপকারী পতঙ্গও মারা যায় এবং কীটনাশকে যে ক্ষতিকারক ডিটিটি থাকে তা সবজি, ফল ও ফসলের ভেতর ঢুকে ফুড চেইনের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে মারাত্মক ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি করে। এগুলো বায়ু, পানি ও মাটি দূষণ করছে। ফলে মাছ উৎপাদন ও পানিতে প্লাঙ্কটনও কমে যাচ্ছে। কারখানার বর্জ্য অংশ, পলিথিন মাটি ও পানি দূষণ বৃদ্ধি করছে। ভবিষ্যতে উদ্ভিদের সংখ্যাও এতে কমে যাবে। ব্যাঙ ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে। ব্যাঙের অভাবে খাদ্যশৃঙ্খলাও বিঘিœত হচ্ছে। এমনকি ব্যাঙের অভাবের কারণে ছাত্রছাত্রীরা ব্যবহারিক ক্লাসে ব্যাঙের ব্যবচ্ছেদ করতে পারছে না। উন্নত দেশে কীটনাশকের ব্যবহার বলতে গেলে একদমই হয় না। কৃষি জমিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারই বেশি ব্যবহার হয়। খাদ্যচক্রে কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। কীটনাশকের কারণে ব্যাঙের প্রজননে সমস্যা হচ্ছে। পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টির পাশাপাশি কৃত্রিম উপায়ে মাছের মতো হ্যাচারিতে ব্যাঙের চাষও বাড়ানো উচিত। স্বল্পমূল্যে কৃষকদের ব্যাঙ বিতরণ করা উচিত। জলাশয় সৃষ্টি এবং হাজামজা পুকুরগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন। ফুল যেমন সুন্দর বিভিন্ন রঙিন পাখিও ফুলের মতো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মনে আনন্দ দেয়। যেমন- বক, চিল, মাছরাঙা, গাঙচিল। বড় বড় বৃক্ষে পাখি পরাগায়নেও সহয়তা করে। পাখি বৃক্ষে বসবাসকারী ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে উপকার সাধন করে। তেমনি একটা ব্যাঙ তার শরীরের ওজনের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ কীটপতঙ্গ খেয়ে অনেক উপকার করে থাকে। কোন কোন বৃক্ষের বংশবৃদ্ধি পাখি, যেমন বাদুর ছাড়া হয় না। তাদের পরিপাকতন্ত্রে বীজের শক্ত খোলস নরম হয়ে যায়। ফলে মলত্যাগ করলে যে বীজ বেরিয়ে আসে তা মাটিতে পড়ে সহজেই অঙ্কুরোদগম হয়। শীত প্রধান দেশের মাটিতে সহজে উদ্ভিদ জন্মায় না বলে তারা উদ্ভিদের প্রতি খুবই যত্মবান। শীতের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য গ্রীনহাউজ ব্যবহার করে। গ্রেট ব্রিটেনে বাগান করা, গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক। আমাদের দেশের মাটি এত বেশি উর্বর যে বর্ষাকলে গাছের বীজ মাটিতে পড়লে সহজেই অঙ্কুরোদগম হয়ে যায়। কৃত্রিম গাছের বংশবৃদ্ধিও করা যায়। প্রাকৃতিক খাদ্যশৃঙ্খল রক্ষা করলে সবুজ বৃক্ষ অক্সিজেন দিয়ে পরিবেশ দূষণমুক্ত ও শীতল রাখে। প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। তাই জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে রক্ষা করেতে পাখির অভয়ারণ্য ও ব্যাঙের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রয়োজন। ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে তার বাগানে পাখির জন্য ঘরও তৈরি করে । বড় বড় বৃক্ষের উঁচু ডালে পাখির জন্য একটি মাটির হাঁড়িতে খাবার ভর্তি করে রাখে। ধান, গম, টাঙিয়ে রাখলে প্রচুর পাখি এসে খাবার খায় এবং এ বৃক্ষেই বসবাস শুরু করে। ডিম পেড়ে বংশ বৃদ্ধি শুরু করে। এই প্রক্রিয়া গ্রাম-গঞ্জে সবাই যদি শুরু করে তবে পাখির বংশ বৃদ্ধির হার দ্রুত বেড়ে যাবে।
×