ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আদেশ প্রত্যাহারের প্রস্তাব

কোটায় জনবল নিয়োগ নিয়ে হিমশিম পিএসসি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

কোটায় জনবল নিয়োগ নিয়ে হিমশিম পিএসসি

তপন বিশ্বাস ॥ জনপ্রশাসনে বিভিন্ন ক্যাডার পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় জনবল নিয়োগ নিয়ে জটিলতায় পড়ছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। শুধু ৩৬তম বিসিএসে যোগ্যপ্রার্থীর অভাবে কৃষি, শিক্ষা, মৎস্য ক্যাডারে ৩৬৬টি পদে কোন জনবল নিয়োগ দিতে পারেনি সংস্থাটি। ৩৭তম বিসিএসে পেশাগত ও কারিগরি পদে ডাক্তার, কৃষি, প্রকৌশলী, মৎস্য, পশুপালন ও শিক্ষক পদে ৭৬১টি পদও যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মুক্তিযোদ্ধা কোটার যোগ্যপ্রার্থীর যে সঙ্কট তা কিন্তু নয়। বরং মেধা, মহিলা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও জেলা কোটায়ও যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কোটায় জনবল নিয়োগ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সরকারী এ সংস্থা। জটিলতা থেকে উত্তরণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দারস্ত হয়েছে পিএসসি। পিএসসি এই ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে। অর্থাৎ কোন ক্যাডারে কিংবা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে জনবল নিয়োগে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে তা সংরক্ষণ করার যে শর্ত রয়েছে তা তুলে দেয়ার প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। ২০১০ সালে সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদগুলো সংরক্ষণের আদেশ জারি করে। সরকারী কর্মকমিশন সূত্র জানায়, ৩৬তম বিসিএসে বিভিন্ন কোটায় কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারের পদসমূহ যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদ সংরক্ষণ সংক্রান্ত সার্কুলারের বিধান এককালীন শিথিল করা প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু তখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কোন আদেশ নির্দেশ না দিয়ে পদ সংরক্ষণ করতে বলা হয়। ফলে কোটাসহ ৪২৭টি পদে কোন জনবল নিয়োগ দেয়া পিএসির পক্ষে সম্ভব হয়নি। ৩৬তম বিসিএসের ৩৬৬ পদের সঙ্গে ৩৭তম বিসিএসের কোটার পদগুলো যোগ করে নিয়োগের কথা বলছে সরকারী কর্মকমিশন। পিএসসির কর্মকর্তারা জানান, বিসিএস পরীক্ষাসমূহে সাধারণ ক্যাডারসমূহের ক্ষেত্রে শূন্য পদের চেয়ে কৃতকার্য প্রার্থী বেশি থাকায় সাধারণ ক্যাডারের মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা, ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী কোটায় কোন পদ খালি থাকে না। পক্ষান্তরে কারিগরি ও পেশাগত কাডারের অর্থাৎ ডাক্তার, কৃষি, মৎস্য, লাইভস্টক, প্রকৌশলী এবং শিক্ষকসহ মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা ও ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী কোটায় প্রাপ্ত পদের চেয়ে কৃতকার্য প্রার্থীর সংখ্যা কম। প্রার্থীর অভাবে উল্লিখিত কোটার পদসমূহ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উত্তীর্ণ প্রার্থী কম থাকায় মেধা কোটার পদগুলোও পূরণ করা সম্ভব হয় না। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদ সংরক্ষণে সরকারী সিদ্ধান্ত থাকায় কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারের মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদগুলো অপূরণকৃত পদসমূহ সাধারণ প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থান করা মেধাবীর মধ্যে থেকে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কর্মকর্তারা বলছেন, ৩৭তম বিসিএসে সর্বমোট ক্যাডার পদ ১ হাজার ২২৬টি। তার মধ্যে ৩৭তম বিসিএসে কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারের অর্থাৎ ডাক্তার, প্রকৌশলী, মৎস্য, কৃষি, শূন্য পদ ৭৬১টি। সেই ক্ষেত্রে এবারের বিসিএসেও যদি যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায় তা হলে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৩০ শতাংশে ২২৮টি, মহিলা কোটার ১০ শতাংশে ৭৬টি, ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী কোটার ৫ শতাংশে ৩৮টি অর্থাৎ সর্বমোট ৩৪২টি পদের অধিকাংশই পূরণ সম্ভব না। ৩৬তম বিসিএসে কোটার যোগ্য প্রার্থীর অভাবে ৩৬৬টি পদও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। অথচ কারিগরি কোটার জনবলের অভাবে সরকারী দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। পিএসসিকে একই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে নন ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রেও। নন ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর জনবল নিয়োগের সময়ও দেখা যায় কোটার পদসমূহে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ইতিপূর্বে ২৮তম বিসিএসে যোগ্য প্রার্থীর অভাবে প্রথম শ্রেণীর ৯১টি, ২৯তম বিসিএসে ৪৫টি, ৩০তম বিসিএসে ৮৫টি, ৩১তম বিসিএসে ৩৬টি, ৩২তম বিসিএসে ১৩টি, ৩৩তম বিসিএসে ৯১টি পদে কোন জনবল নিয়োগ সম্ভব হয়নি। একইভাবে ৩৩তম বিসিএসে দ্বিতীয় শ্রেণীর ৮৫টি, ৩৪তম বিসিএসে প্রথম শ্রেণীর ৬২টি এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর ১ হাজার ২৪৬টিসহ সর্বমোট প্রথম শ্রেণীর ৪২৩ এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর ১ হাজার ৩৩১টি পদে কোন জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হলে মন্ত্রিসভার অনুমোদন সাপেক্ষ কোটা সংরক্ষণের শর্ত শিথিল করা হলে উল্লিখিত পদসমূহে জনবল নিয়োগ দেয় পিএসসি। এবারও সেই একই ধরনের অনুমোদন চেয়েছে পিএসসি। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার সংরক্ষিত কোটা পূরণে বেশ আন্তরিক। কিন্তু সংরক্ষিত কোটায় জনবল না পাওয়া গেলে তা পূরণে বিকল্প ব্যবস্থা থাকা উচিত। কারণ শূন্য পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ দিতেই সরকারী কর্মকমিশন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। যদি কাক্সিক্ষত জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব না হয়, তা হলে ওই পদগুলো শূন্য থেকে যায়। তখন সরকারী কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। জনসাধারণ স্বাভাবিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। সেই ক্ষেত্রে সংরক্ষিত কোটায় জনবল না পাওয়া গেলে বিকল্প পদ্ধতি জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করতে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। যদি প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়া হয়, তাহলে শূন্য পদগুলো সহজেই পূরণ সম্ভব হবে। পিএসসি আরও জানায়, ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিধি নিষেধ আরোপ করে যে আদেশ জারি করা হয়েছে তা শিথিল করতে হবে। অর্থাৎ কোটা সংরক্ষণের যে বিধি নিষেধ রয়েছে তা শিথিলের অনুরোধ জানায় পিএসসি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহিলা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য কোটা সংরক্ষণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কোন আদেশ নির্দেশ জারি করা হয়নি। শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পদ সংরক্ষণের জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। ২০১০ সালে জারি করা আদেশে যা বলা হয়েছে ॥ ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সরকারী আধা-সরকারী দফতর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা প্রতিষ্ঠান এবং কর্পোরেশনে সরাসরি জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করতে হবে। যদি সরকারী পদে জনবল নিয়োগের সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না যায়, তা হলে ওই সব সাধারণ কোটার জনবল নিয়োগ দেয়া যাবে না। বরং মুক্তিযোদ্ধা কোটার পদগুলো অবশ্যই শূন্য রাখতে হবে। এমনকি বিভাগীয় পদসমূহে জনবল নিয়োগেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। ওই আদেশের আলোকেই বিসিএস নিয়োগেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
×