ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাহিত্যিকদের মিলনমেলা

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮

সাহিত্যিকদের মিলনমেলা

ঢাকায় দুই বাংলার সাহিত্যিকদের প্রত্যাশিত মিলনমেলা বসছে আজ। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের তিন শতাধিক কবি, সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী মিলিত হচ্ছেন তিন দিনের উৎসবে। এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন ভারতের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। একই ভাষায় সাহিত্যচর্চাকারী লেখকদের এত বড় মিলনমেলা এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশে। আমরা আশা করতে পারি এর ভেতর দিয়ে উভয় দেশের অভিন্ন ভাষার লেখকদের মধ্যে নতুন করে নৈকট্য লাভের বর্ণিল সুযোগ ঘটবে। পারস্পরিক ভাব বিনিময় ও মতের আদান-প্রদানের মাধ্যমে উভয় দেশের সাহিত্যিকেরা অনুপ্রাণিত হবেন এবং নতুন করে সম্পর্ক-সাঁকো গড়ে উঠবে। ঢাকা লিট ফেস্ট উদ্বোধনের সময় আমরা সম্পাদকীয়তে স্পষ্ট উচ্চারণে বলেছিলাম: ‘আগে বাঙালী হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়, এরপর আমরা বিশ্ববাসী। মধুসূদনের বাণী আমরা ভুলে যাইনিÑ ‘হে বঙ্গভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন. তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি’। আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য ‘বিশ্ব মানব হবি যদি কায়মনে বাঙালী হ’ নির্ধারিত হওয়ায় আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারি। তাছাড়া সাহিত্য সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়ক গণমাধ্যমকে বলেছেন : ‘বাঙালীর হাজার বছরের একটি ইতিহাস রয়েছে। বাঙালীর সেই ইতিহাস কথা বলে মানবিকতার। সেই মানবিকতার আহ্বান ছড়িয়ে দেওয়াই হবে এ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।’ স্মরণযোগ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করেছিল। বাংলা একাডেমীর ওই সাহিত্য সম্মেলনে এসেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্বজার্মানসহ কয়েকটি দেশের গুণী সাহিত্যিকরা। এতে ভারত থেকে মুলকরাজ আনন্দ, অন্নদাশংকর রায়, ড. নীহাররঞ্জন রায়, ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য, কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়সহ কয়েকজন বরেণ্য লেখক যোগ দিয়েছিলেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এই সাহিত্য সম্মেলন সম্পর্কে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে সাহিত্যিকরা যে দেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে লালন করে আন্তর্জাতিকভাবে জাতিকে পরিচিতি করেন- সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।’ সাহিত্য-সংস্কৃতি সমাজবদ্ধ মানুষের সৃষ্টিশীল নান্দনিক চেতনার আরেক নাম। মানুষ যেমন সাহিত্য-সংস্কৃতির উপাদান সৃজন করে, তেমনি সেটি তার জীবনযাপনের অংশ, জীবন উপভোগের সূত্র করে তোলে। সাহিত্য রচিত হয় ব্যক্তির হাতে, কিন্তু সেটি হয়ে ওঠে সমষ্টির সম্পদ। সেই সম্পদ সমষ্টিকে আপ্লুত করে, তাকে শক্তি যোগায়, অনির্বচনীয় আনন্দ প্রদান করে। সাহিত্যের আলোয় যে আলোকিত হয় তার পক্ষে অন্ধকার রচনা করা, কিংবা অন্ধকারের যাত্রী হওয়া অসম্ভব। সঙ্গীত কিংবা নাটক, চিত্রকলা কিংবা চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতিটি শাখা সম্পর্কে আমরা একই কথা উচ্চারণ করতে পারি। একটি সমাজের এসব সাংস্কৃতিক শক্তি সমাজকে সুশীলতা ও সৌরভ দান করে। অসুস্থ মনের পরম শুশ্রষা হতে পারে সংস্কৃতির সৌন্দর্য ও সুঘ্রাণ। বিচ্ছিন্ন, বিহ্বল, বিপথগামী তারুণ্যকে জীবনের ইতিবাচক দিকটির প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট করার জন্য শিল্প-সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগানোর তাই বিকল্প নেই।
×