ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা

এশিয়ার দেশে দেশে মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা সমানতালে প্রবহমান নয়। অভ্যন্তরীণ ও বহির্দেশীয় চাপের মুখে শান্তির শ্বেত কপোতগুলো নির্বাসিত প্রায়। মহাদেশের চার প্রান্তের দেশগুলোর স্থিতিশীলতা প্রায়শই পড়ে বিপর্যয়ের মুখে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অন্যতম সংঘাতপূর্ণ এলাকায় পরিণত। এখানে দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সামরিক এবং রাজনৈতিক সংঘাত চলমান রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান এবং উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে দারুণভাবে। সংঘাতের ফলে অর্থনৈতিক অনুন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক তথা শাসন ব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থা খুবই দুর্বল থেকে যাচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে অস্ত্র ও সন্ত্রাসের কারণে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার এশিয়ার বহু দেশকে জর্জরিত করে তুলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ল-ভ- প্রায়। ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের সশস্ত্র দাপটে বিপর্যস্ত। সৌদি আরব ও ইয়েমেনের মধ্যে যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইসরাইলের দীর্ঘদিনের সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি, লেবাননে ইসরাইলী হামলা, আফগানিস্তানে তালেবান ও আল কায়েদার চোরাগোপ্তা হামলার পরিণতি বিশ্ববাসী জানে। আর পাকিস্তান নামক ব্যর্থ রাষ্ট্রটি তো সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে অনেক আগেই। শ্রীলঙ্কায় সিংহলী ও তামিল দ্বন্দ্ব এখনও শেষ হয়নি যুদ্ধ থেমে গেলেও। নেপালে এক দশকের গেরিলা যুদ্ধ শেষে বর্তমানে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। ভারতের কাশ্মীর গোলযোগপূর্ণ এলাকা আজও। পাকিস্তান সেখানে সন্ত্রাস রফতানি করছে। ভয়াবহ অবস্থা মিয়ানমারে। সেখানে সেনাশাসিত ও নোবেলজয়ীর সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো হচ্ছে গণহত্যা। বাধ্য করা হচ্ছে দেশত্যাগে। দশ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুতের চাপ বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ফিলিপিন্সে জঙ্গীদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার জঙ্গীবাদীরা পালিয়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অবস্থান নিচ্ছে। নতুন করে ইরানে সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে সিআইএ। পরমাণু শক্তিধর দেশটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর অবস্থানে নেমেছে। এশিয়ার অনেক দেশই আজ পরমাণু শক্তিধর। এই অঞ্চলের মানুষ যখন ক্ষুধা দারিদ্র্যসহ পর্যাপ্ত বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাবে জর্জরিত, তখন উপমহাদেশের দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান এক অসুস্থ পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষকে অনাহারে রেখে এবং ন্যূনতম চাহিদা পূরণের সুযোগ বঞ্চিত করে এই পারমাণবিক অস্ত্র যদি ব্যবহার হয় তবে আগামী কয়েক শতক ধরে এর ভয়ঙ্কর পরিণতি শুধু ভারত আর পাকিস্তানের জনগণকেই নয়, এশিয়ার সব দেশের জনগণকে এর মাসুল গুনতে হবে। মিয়ানমারের ঘটনা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকলেও বিশ্বের কতিপয় শক্তিশালী দেশ এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়নি। বরং সেদেশের সম্পদ কুক্ষিগত করার জন্য তাদের লোলুপদৃষ্টি গুরুত্ববহন করছে। আর বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত নিপীড়িত জাতিতে পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গারা। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি আজ এশিয়া, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা নিয়ে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও চাপ উপেক্ষা করে উত্তর কোরিয়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও পারমাণবিক কর্মসূচী নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া পারস্পরিক হুমকি প্রদান সংঘাতকে সামনে নিয়ে আসছে। দুই কোরিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদ অনেক পুরনো। দুই বছরের ব্যবধানে অবশ্য দুই কোরিয়ার মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় আয়োজিত শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে যে সমঝোতা বৈঠক হয়েছে তাতে দেশ দুটির মধ্যে বিরোধ কমে আসার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রও অবশ্য উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে হুমকি পরিত্যাগ করে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এক সময় দুই কোরিয়া একত্রীকরণের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা বেশিদূর এগোতে পারেনি। একই জাতিসত্তার দুটি দেশের মধ্যে বিরোধ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। বর্তমানে সম্পর্কোন্নয়নের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে শান্তির শ্বেত কপোত ওড়ানো দুঃসাধ্য হবে না।
×