ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিক নেতা রফিক অপহরণ মামলা ১৮ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

শ্রমিক নেতা রফিক অপহরণ  মামলা ১৮ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ১০ জানুয়ারি ॥ দীর্ঘ ১৮ বছরেও রফিক খান (লাল খান) অপহরণ মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি। তদন্তে বার বার হাত বদল হলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদন আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। যে কারণে আসামিরা এলাকায় বীর দর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন অপহৃতের পরিবার। পৌরসভার নয়ারচর এলাকার ব্রিটিশ আমলের ডাকবাংলো আরসিন কোম্পানির জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০০১ সালের ৫ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে অপহৃত হন বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা রফিক খান (লাল খান)। আজ পর্যন্ত তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে পৌরসভার নয়ারচর এলাকায় বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উপর ইংল্যান্ডের আরসিন কোম্পানির বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ডাকবাংলো ও বড় বড় গুদাম ছিল। ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত স্বাধীনতার পর আরসিন কোম্পানি তাদের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আদমজী কোম্পানিকে দিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই সম্পত্তি মালিক হয় পাকিস্তানের আহমেদ বাওয়ানী কোম্পানি। আহমেদ বাওয়ানী কোম্পানি মালিকানা হস্তান্তর করে লতিফ বাওয়ানীর কাছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় পার্শ¦বর্তী গ্রামের প্রভাবশালীরা ওই সম্পত্তি ধীরে ধীরে বেদখল করার পাঁয়তারা শুরু করে। এ সময় খুলনা থেকে ফিরে আসেন বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা কমরেড রফিক খান (লাল খান)। তিনি দীর্ঘদিন খুলনায় শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং খুলনার একজন প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতার কিছুদিন পরে ১৯৭২ সালে তিনি তার নিজ এলাকা মাদারীপুরে ফিরে আসেন এবং ইংল্যান্ডের আরসিন কোম্পানির ওই পরিত্যক্ত সম্পত্তি ভূমিহীনদের মাঝে বণ্টনের জন্য ভূমিহীনদের সংগঠিত করে আন্দোলন শুরু করেন। ভূমিহীনদের পক্ষে আন্দোলন করায় স্থানীয় গাছবাড়িয়ার প্রভাবশালী সাত্তার খালাসী ও জাফর খালাসীর সঙ্গে রফিক খান ওরফে লাল খানের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বের কারণে ১৯৭৪ সালের দিকে খুন হয় লাল খানের আপন ছোট ভাই কালু খান। কালু খানের হত্যার পরে এ দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ১৯৭৬ সালে আততায়ীদের হাতে মারা যায় সাত্তার খালাসী। সাত্তার খালাসী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে ১১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন রফিক খান ওরফে লাল খান। মামলা চলাকালে রফিক খান ওরফে লাল খান নারায়ণগঞ্জে চলে যান। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার শাখায় চাকরি নেয়। সে সময় তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এদিকে সাত্তার খালাসী হত্যা মামলার সব আসামি বেকসুর খালাস পায়। রফিক খান ওরফে লাল খান মাঝে মধ্যে দেশের বাড়িতে যাতায়াত করতেন।২০০১ সালে ২৫ মে রফিক খান ওরফে লাল খান সপরিবারে গাছবাড়িয়ার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ঐ সালের ৫ জুন শহরের লেকের দক্ষিণপাড় মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে ১১ দলীয় কর্মী সভায় যোগদান করেন। সভা শেষে রাত প্রায় ১০টার দিকে শহরের ইটেরপুল এলাকা থেকে খোকা মুন্সী নামের তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে ভ্যানযোগে বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন। রাত সোয়া ১০টার দিকে ঝিকরহাটি গ্রামের চোকদার ব্রিজে পৌঁছেন এবং ব্রিজ সংলগ্ন নূরুল ইসলাম চোকদারের চায়ের দোকানে বসে দু’জনে চা পান করেন। চা পান করার পর রফিক খান ওরফে লাল খান এবং খোকা মুন্সী বাড়ির দিকে রওনা করেন। তারা চোকদার ব্রিজের উত্তরপাড়ে নিম্নকুমার নদীর খেয়াঘাটে যান এবং দু’জন এক সঙ্গে রাত সাড়ে ১০টার দিকে অছেল চোকদারের খেয়া পাড় হন। খেয়া পাড় হওয়ার পর পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কমরেড রফিক খান ওরফে লাল খানকে ঘিরে ফেলে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা খোকা মুন্সী কৌশলে সটকে পড়ে এবং সন্ত্রাসীরা কমরেড রফিক খান ওরফে লাল খানকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
×