ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ২৫ জানুয়ারি মাতারবাড়ি বিদ্যুত প্রকল্প উদ্বোধন করবেন

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী ২৫ জানুয়ারি মাতারবাড়ি বিদ্যুত প্রকল্প উদ্বোধন করবেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ জানুয়ারি মাতারবাড়ি বিদ্যুত প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। মাতারবাড়িতে বিদ্যুত প্রকল্পের সঙ্গে ১০ হাজার মেগাওয়াট কয়লা খালাসের উপযুক্ত একটি কয়লা টার্মিনাল নির্মাণ এবং বন্দর চ্যানেল খনন করা হবে। একই সঙ্গে গড়ে তোলা হবে আধুনিক পর্যটননগরী। প্রথম ধাপে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। মাতারবাড়ি বিদ্যুত হাবে সরকার অন্তত ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায়। কয়লা ছাড়াও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) তে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চালানো হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায় ২৫ জানুয়ারি প্রকল্পটি উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ি যাবেন। একই দিন ওই এলাকায় একটি জনসভায়ও ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে তাঁর। ভবিষ্যতে মাতারবাড়ি হবে সব থেকে বড় বিদ্যুত হাব। দেশের বিদ্যুত এবং জ্বালানির একটি বড় অংশের সরবরাহ আসবে মাতারবাড়ি থেকে। মাতারবাড়ি কোল টার্মিনাল থেকে দেশের অন্য আমদানি নির্ভর কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন কয়লা এবং এলএনজির বড় জাহাজ আসার একমাত্র উপযোগী জায়গা হচ্ছে মহেশখালীর অগভীর সমুদ্র। মহেশখালী থেকে সাগরের মধ্যে ছয় থেকে সাত কিলোমিটার খনন করে চ্যানেল করলেই এখানে জাহাজ আনা সম্ভব। কিন্তু মংলা এবং পায়রা বন্দরের অন্তত ৬০ কিলোমিটার গভীরে একই ধরনের জাহাজ আসতে পারে। এ ধরনের মাদার ভ্যাসেলের জন্য ১৬ থেকে ২০ মিটার ড্রাফট থাকতে হয়। কেবলমাত্র মহেশখালীর উপকূল ছাড়া অন্য কোথাও এই সুবিধা নেই। পায়রা এবং খুলনা এলাকার বিদ্যুত কেন্দ্রও গভীর সমুদ্রে জাহাজ রেখে লাইটার্জে করে কয়লা খালাস করবে। যদিও ভবিষ্যতে মাতারবাড়ি বন্দরের সুবিধা নিয়ে কয়লা খালাস করতে পারবে এসব কেন্দ্র। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র উন্নয়নের অন্যতম মাইলফলক। এখনে বিদ্যুত কেন্দ্রের পাশাপাশি কয়লা বন্দর, ভাসমান এবং স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল এই এলাকার সঙ্গে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। টাকার অঙ্কে বিদ্যুত বিভাগের সব থেকে বড় প্রকল্প মাতারবাড়ি বিদ্যুত প্রকল্প। এখানে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা বিদ্যুত প্রকল্পটিতে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৩ ও ভৌত অগ্রগতি ১৮ ভাগ। এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে চ্যানেল ও জেটি নির্মাণ, এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ, কোল ইয়ার্ড নির্মাণ, পল্লী বিদ্যুতায়ন, টাউনশিপ নির্মাণ, পল্লী বিদ্যতায়ন কাজের আওতায় চকোরিয়া-মাতারবাড়ি ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ ও ১৩২/৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হবে। সম্প্রতি মাতারবাড়ি পরিদর্শনে যান জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসু ইজুমি জাইকার বাংলাদেশ প্রধান টাকাতুসি নিশিকাতা। প্রধানমন্ত্রীর মাতারবাড়ি উদ্বোধনের আগে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তারা মাতারবাড়ি পরিদর্শন করেন। এ সময় কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রকল্পের অগ্রগতি জানানো হয়। মাতারবাড়িতে আরও কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য পিডিবি এমওইউ সই করেছে। এর বাইরে একই এলাকায় কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিও চুক্তি করেছে। খুব শীঘ্রই এসব কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়াও শুরু হবে। মহেশখালীতে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের জন্যও জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে নতুন ইপিজেড নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে মহেশখালীতে প্রতিদিন ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করতে পারে এমন একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। সরকার আগামী বছর এপ্রিলে এই টার্মিনালটি দিয়ে এলএনজি আনতে চায়। ইতোমধ্যে পাইপলাইন নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। এছাড়াও সামিট পাওয়ার এবং ভারতের রিল্যায়েন্স পাওয়ার দুটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ভাসমান এই টার্মিনাল দুটিও মহেশখালীতে স্থাপন করা হবে। ফলে দ্বীপটিতে গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া যাবে। যা দিয়ে শিল্প গড়ে উঠতে পারে। এর বাইরে মহেশখালীতে আধুনিক পর্যটন শিল্পও গড়ে তোলার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। জাইকা আধুনিক এই শহর স্থাপনে বাংলাদেশকে সহায়তা দিচ্ছে।
×