ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ ফজলুল হক মাস্টার

অনুভূতি হোক কল্যাণমুখী

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

অনুভূতি হোক কল্যাণমুখী

জঙ্গীবাদ গণতন্ত্রের জন্য ফ্যাসাদ। রাষ্ট্রের জন্যও এটি একটি অশুভ ফাঁদ এবং মানুষের জন্য আতঙ্ক। উগ্রধর্মবাদীরা প্রভু শক্তিদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু কে বা কারা কখন জঙ্গীদের ব্যবহার করছে তা অস্পষ্ট। কিন্তু জামায়াত যে জঙ্গী সৃষ্টি করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। জঙ্গীরা উন্নত প্রযুক্তি এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে এতে করে স্পষ্ট যেথ প্রভু শক্তিরাই তাদের মদদদাতা। জঙ্গীরা রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে তাতে বিশ্ব কিন্তু এক হয়ে প্রতিবাদ করছে না। অস্বাভাবিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ গড়ে তুলতে না পারলে সভ্যতা বিকলাঙ্গ হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রভু শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোও জঙ্গীদের মদদ দিচ্ছে। জোট সরকার জঙ্গীদের মদদ দিয়েছে যা সকলেরই জানা। অতঃপর রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন সহসাই হবে তা আশা করাটাই ভুল। মিয়ানমারে ধর্মীয় কারণে রোহিঙ্গাদের অমানবিক এমনকি পশুতুল্য বর্বরভাবে নির্যাতন করা হলো। আমরা কিন্তু রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য বিশ্ব প্রতিরোধ প্রত্যক্ষ করতে পারিনি। আউং সান সুচি বর্বরতা নজির সৃষ্টি করেছেন আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতাকে উচ্চাঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা পশুত্ব প্রদর্শন করছে আর বাংলাদেশের জোয়ান সেনারা সহনশীল আচরণের মধ্য দিয়ে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে। সভ্যতার এই যা আলোকময় অধ্যায় বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে তা অবশ্যই মানবিকতার ক্ষেত্রে চির অম্লান হয়ে থাকবে। জনসংখ্যা বাড়ছে, আবাদি জমি, ফসলি জমি কমে আসছে। যদি নৈতিকভাবে প্রতিটি মানুষ গড়ে না উঠে তবে হিংস্রতা তীব্রতা অস্বভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। দখলি মানসিকতা পরিহার করা এবং ভোগবাদী মানসিকতা থেকে সরে আসার শিক্ষা প্রতিটি নাগরিকের জন্য জরুরী। আমরা জানি জামায়াত ক্যাডার সৃষ্টি করে। আমরা জানি এসব ক্যাডারদের আরও দুর্ধর্ষ করার হীনমানসে তারা জঙ্গীবাদে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমাদের অনেকের পড়ুয়া সন্তানরা জামায়াতের অপরাজনীতির ফাঁদে পা দিচ্ছে। জঙ্গীবাদে পা দিচ্ছে। দেশের বাইরেও তারা সন্ত্রাসী করছে। এসবের প্রতিকার করতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাতে জামায়াত সমর্থকদের হাতে না চলে যায় বিলক্ষণ তা পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। জামায়াতের শিক্ষকরা কোমলমতি ছাত্রদের হাতে প্রশ্ন ধরিয়ে দেয়। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাল রেজাল্টের গ্যারান্টি দেয়। এভাবে ফাঁদে ফেলে জামায়াতিরা তাদের দলে টেনে নিচ্ছে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির পথে, যখন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি তখনই সংবাদ হচ্ছে আমাদের সন্তানরা বিদেশে জঙ্গীপনায় লিপ্ত। সাম্প্রদায়িক চেতনা সবক্ষেত্রে যেন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য আগুন সন্ত্রাস করল বিএনপি-জামায়াত এবং বিদেশীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার জন্য গুলশানের রেস্তরাঁয় জঙ্গীরা হত্যাযজ্ঞ ঘটানোর সময় বলেছিল তোমরা যারা বিদেশী আমরা শুধু তাদেরই হত্যা করব। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বোমা মেরে বলছে আমরা ধর্মের লোক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বোমা মেরে বলছে আমরা সমাজ হিতৈষীÑ এরা যে অমানুষ তা নিয়ে বুদ্ধিজীবীরা এবং প্রভু শক্তিরা কখনই শক্তিশালী ভূমিকা রাখেনি। চরম সত্যকে উপেক্ষা করে কেউ বড় মাপের মানুষ হতে পারে না। টকশোতে পক্ষপাতিত্ব করতে গিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্নার অরিজিনাল চরিত্রটা বেরিয়ে এসেছে। তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বঙ্গবন্ধু হত্যা হলে গোলাম আযম আনন্দ উপভোগ করেছে লন্ডনে বসে। যুদ্ধাপরাধীর দায় নিতে হয়েছে তাকেও। জঙ্গীদের হাতে পাওয়া যায় গোলাম আযমের, নিজামীর এবং সাঈদীর বই, সিডি। জামায়াতের প্রতিটি নেতাই অপদেবতা এবং প্রতিটি কর্মীই ক্যাডার এবং সন্ত্রাসী। তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের জীবিকার ব্যবস্থা রয়েছে এবং এটাই তাদের এগিয়ে যাবার পথ। ইসলামী ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে কিন্তু এটাই সর্বশেষ কাজ নয় কিংবা এ উদ্যোগটাকেই আমরা উত্তম বলতে পারি না। কেননা ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জামায়াতের স্থানীয় আমিরদের সুপারিশ রয়েছে। বিষয়টি সরকারের মাথায় থাকা জরুরী। অভিজ্ঞতা হলো ’৭৫ এর পর যারা দেশ পরিচালনা করেছে তাদের জনসমর্থন ছিল কম। তারা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের যেমন ক্ষতি করেছে তেমনি আমলাদের সুবিধা দিতে গিয়ে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা চলছে কিন্তু সহসাই পরিবর্তন চাওয়াটা সমীচীন নয়। বলতে চাই বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জনসমর্থন না থাকায় তারা জনপ্রতিনিধিদের মাত্রাতিরিক্ত সুবিধা দিয়েছে ফলে ইউপি চেয়ারম্যানরাও কোটিপতি বনে গেছে। পরম বুদ্ধিমত্তায় এসব বিবেচনা না করেই অনেক বুদ্ধিজীবীরা বলে চলছে দেশ ভাল নেই। আর ক্ষুদ্র চিন্তায় যারা বড় মাপের মানুষ বনে যেতে চায় তারা প্রকৃত সত্য আড়াল করে কথা বলে। খালেদা জিয়া ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা করেছিল এ রকম সত্য জানার পর বুদ্ধিজীবীর কাতারে থাকা লোকেরা তাকে সমর্থন দিতে পারে- এ বিষয়টি আচানক নয় কি? খুনীদের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমান টেনে এনেছে। উগ্র ধর্মবাদীদের এবং রাজাকারদের রাজনীতির সুযোগ দিয়েছে জিয়াউর রহমান। তারা জিয়াউর রহমানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এবং তারা বলতে চায় জিয়াউর রহমান না হলে ধর্ম এবং গণতন্ত্র রক্ষা পেত না। তাদের বলতে চাই, উগ্রধর্মবাদীদের জিয়াউর রহমান কাছে টেনেছিল বলেই খালেদার শাসনামলে জঙ্গীর আস্ফালন দেখতে হয়েছে। এখনও সে জন্যই দিকে দিকে জঙ্গীদের দ্বারা মানুষ খুন হচ্ছে। গুম হওয়ার কাহিনী রচনার নেপথ্যেও জঙ্গীরা। আমরা যদি গণতন্ত্র চাই তবে গণতন্ত্রবিরোধী অশুভ শক্তিকে তফাৎ করার মানসিকতা জরুরী। যারা হেফাজতিদের হয়ে সাফাই গেয়েছে তাদের অনুভবে থাকা দরকার হুজুর সাহেব নারীদের তেঁতুলতুল্য মনে করেন। আর জামায়াত নারী শাসনের এবং নারী নেতৃত্বের বিরোধিতা করেও নারী নেতৃত্ব তৈরি করেছে, সংরক্ষিত আসনে নারীদের এমপি বানিয়েছে। আসলে রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য বিপুল বিশাল মানসিকতার দরকার যা বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার রয়েছে। কেননা আগুন ধরিয়ে এ আমলে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যার পরও কোন উগ্রতা কোন প্রতিশোধের আভাস তার মাঝে দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর উপলব্ধি, অনুভূতি এবং আত্মনিবেদন হলো দেশের অগ্রগতি আর উন্নয়নের জন্য- তাই অনেক বড় মাপের মন্ত্রীদের, এমপিদের শাস্তির উদ্যোগ নিতে পেরেছেন। যদি আমরা এসব গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি, দেশের অগ্রগতির কথা চিন্তা-ভাবনা করি তবেই চোখে ভেসে উঠবে শেখ হাসিনার মতো শাসক এবং নেত্রী সত্যই বিরল। লেখক : শিক্ষাবিদ
×