ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন

প্রকাশিত: ০৩:১৪, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য সরাসরি ব্যাংকিং লেনদেন চালুর উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এর জন্য সরকার ইতোমধ্যে দু’দেশের মধ্যে পণ্য রফতানি ও আমদানির ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা বিদ্যমান সেগুলো চিহ্নিত করা শুরু করেছে। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করার দাবি করেছে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটসÑ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিআইএস)। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে ইতিবাচক সাড়া। মনে রাখতে হবে যে, রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দেশ এবং সর্বাধিক পরিমাণে তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ, কৃষি ও বন সম্পদে সমৃদ্ধ এবং উন্নত। একই সঙ্গে পরাশক্তি তো বটেই। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও অত্যন্ত চমৎকার ও হৃদ্যতাপূর্ণ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অকুণ্ঠ সমর্থন-সহযোগিতা, সর্বোপরি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো প্রয়োগ করেছে তিন তিনবার। এবার বাংলাদেশের বিজয় দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাশিয়ার কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর সেনানীও এসেছেন। এর বাইরেও বাংলাদেশ রাশিয়ার মিগ ২৯ বিমানসহ বিবিধ অস্ত্রশস্ত্রের উল্লেখযোগ্য ক্রেতা। রাশিয়ার সক্রিয় সহযোগিতা ও ঋণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়াও চলছে। এত সব কিছুর পরও বলতেই হয় যে, দু’দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বিপুল ও বৈষম্যমূলক। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ৭৬টি বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও খুব কম পণ্যই সে দেশে প্রবেশাধিকারের সুযোগ পায় রফতানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে। বেশিরভাগ বাংলাদশেী পণ্যে রাশিয়া অন্য দেশের তুলনায় বেশি শুল্ক আরোপ করে থাকে। তৈরি পোশাক ছাড়া উল্লেখ করার মতো পণ্যের সংখ্যাও কম। তদুপরি সরাসরি কোন ব্যাংকিং চ্যানেলসহ রুবলের সঙ্গে লেনদেনের প্রচলনও নেই। রুশ ভাষাও একটা সমস্যা বৈকি। উল্লেখ্য, চীনের পর বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ। আর বাংলাদেশের পোশাকের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার রাশিয়া। প্রায় এক বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানির বাজার রয়েছে দেশটিতে। তবে পণ্য রফতানিতে জিএসপি সুবিধা না থাকায় বাংলাদেশী পোশাক রাশিয়ায় যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে। ফলে স্বভাবতই বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্যমূল্য ও মুনাফা থেকে। বেশিরভাগ চলে যাচ্ছে ইইউর পকেটে। সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলসহ এফটিএ করা হলে আগামীতে এই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির অবসান হতে পারে। সেক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধাসহ ঢাকা-মস্কো সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেল চালু হলে দেশটিতে রফতানির পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়বে নিঃসন্দেহ। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের প্রতি রফতানি তথা বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বহির্বিশ্বে নতুন দেশ খোঁজা এবং নতুন পণ্য তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আপাতত রাশিয়া হতে পারে সেই কাক্সিক্ষত দেশ। আর রাশিয়ার মাধ্যমে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ১১টি দেশের জোট কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটসের বাজারেও প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলসহ এফটিএ স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশী উৎপাদক ও রফতানিকাররা সেই সুযোগ নেবেন বলেই প্রত্যাশিত।
×