ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সমন্বয় সাধন

প্রকাশিত: ০৩:১৩, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

সমন্বয় সাধন

উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র ও সুশাসনের কোন বিকল্প নেই, থাকতে পারে না। আর তা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক এবং সমন্বয় সাধন। আর এই তিনটি বিভাগের সফলতার জন্য পারস্পরিক আস্থা অপরিহার্য। এরা কেউ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযোগী। দেশ, জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য তাই এই তিনটি বিভাগকে একযোগে কাজ করে যেতে হয়। কোথাও বাধাগ্রস্ত হলে তা বিপর্যয় ঘটাতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনটি বিভাগই হতে পারে ভুক্তভোগী। তিনটি বিভাগকেই সতর্ক থাকতে হয়, এক বিভাগের কার্যক্রমে যাতে অন্য বিভাগের কার্যক্রম কোনভাবেই ব্যাহত বা বাধাগ্রস্ত না হয়। যদি তা হয় তবে জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত ত হতে বাধ্য, যা কারওই কাম্য নয়। তাই তিনটি বিভাগেরই কার্যক্রমে দেশ ও জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার প্রদান অবশ্যই করণীয়। আইনের শাসন, জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার রক্ষা এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে বিচার বিভাগের ভূমিকা। এটা তো অনস্বীকার্য যে, একটি শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমেই সমাজ পরস্পর সংযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। বিশ্বের সব অগ্রসর ও সভ্য দেশে রাষ্ট্রের কাঠামোর তিন স্তম্ভের পারস্পরিক সমঝোতাপূর্ণ অবস্থানকে অলঙ্ঘনীয় বিষয় হিসেবে গুরুত্ব প্রদান করা হয়ে আসছে। রাষ্ট্রের তিন অবিচ্ছেদ্য অংশ নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগের পারস্পরিক আস্থা ও সুস্থ সম্পর্কের কোন বিকল্প নেই। রাষ্ট্র কাঠামো যেহেতু এ তিন বিভাগের ওপর ভর করে গড়ে উঠেছে, সেহেতু এক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা যে সমূহ বিপদ ও বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে সে ব্যাপারে সব পক্ষ সচেতন থাকাকে নিজেদের কর্তব্য হিসেবেই দেখে। তিন বিভাগের পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতায় রাষ্ট্র ব্যবস্থার সুফল নিশ্চিত হয়। জনকল্যাণের ক্ষেত্রেও তা নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত বিচার ব্যবস্থা যেহেতু মানুষের শেষ ভরসার স্থল সেহেতু বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কা-জ্ঞানহীন সমালোচনা অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিচার বিভাগ হচ্ছে তিনটি অঙ্গের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সুপ্রীমকোর্ট সংবিধানের রক্ষক এবং চূড়ান্ত ব্যাখ্যা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপীল বিভাগ সংবিধান ও আইনের যে ব্যাখ্যা প্রদান করে তা দেশের সকল আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক। একইভাবে হাইকোর্ট বিভাগের আইনের ব্যাখ্যা অধস্তন সকল আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক। সুপ্রীমকোর্টের রয়েছে জুডিসিয়াল রিভিউয়ের ক্ষমতা। কিন্তু এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। সাম্প্রদাতিককালে আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের মুখোমুখি অবস্থানের ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে সুসম্পর্কের অভাব বা দূরত্ব সৃষ্টি মানেই অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ তৈরি হওয়া, যা কারোরই কাম্য নয়। সুপ্রীমকোর্ট দিবস উপলক্ষে সুপ্রীমকোর্ট চত্বরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, মামলা ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনতে তথ্যপ্রযুক্তির সব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। সুপ্রীমকোর্টকে ভবিষ্যতে ই-জুডিসিয়ারি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। তিনি আদালতকে তার দায়িত্বের কথাও স্মরণ করে দিয়েছেন। বাস্তবে বিচার বিভাগ হচ্ছে মানুষের ভরসার স্থল। এই ভরসার জায়গাটিকে অক্ষুণ্ন রাখা প্রয়োজন যে কোন উপায়ে। দ্রুত বিচার ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। বিচার বিলম্বিত হওয়া অবিচারেরই নামান্তর। দেশের আদালতগুলোতে মামলার জট প্রকট আকার ধারণ করেছে। মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বিরাট অন্তরায়। কীভাবে দ্রুত বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায় সেদিকে দৃষ্টিদান জরুরী। রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভের কারও সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। অবশেষে বহুল আলোচিত অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরনবিধির গেজেট সর্বসম্মতক্রমে গ্রহণ করে আপীল বিভাগ যে আদেশ প্রদান করেছে তার ফলে সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের দীর্ঘ টানাপোড়েনের অবসান ঘটেছে। কাজেই নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের এখন আর ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। দেশের স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের স্বার্থে তিনটি বিভাগ সমন্বিতভাবে পরিচালিত হোক সেই প্রত্যাশা দেশবাসীর।
×