ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তি জগতের সার্বিক নিরাপত্তা দৃঢ় হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

তথ্যপ্রযুক্তি জগতের সার্বিক নিরাপত্তা দৃঢ় হবে

ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রযুক্তির জগতকে নিরাপদ করতে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নামের একটি আইন আসছে। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত ও নতুন আইন সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেবে। আইনের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি জগতের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দৃঢ় হবে। এ সব বিষয় বিবেচনায় রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আইনটি চূড়ান্ত হলে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। সূত্র জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি এখন মানুষের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে রয়েছে। এই অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার দেশের মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসছে। ইন্টারনেট এখন গোটা বিশ্বকে একটি গ্রামে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সরকার চাইছে সব নাগরিকের হাতে এ সুবিধা পৌঁছে দিতে। এ ক্ষেত্রে একের পর এক ব্যয়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট’ নামে একটি আইনের অনুমোদনের পর এ আইনের আওতায় দেশের ডিজিটাল সাইবার নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি করে ‘ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল’ নামে একটি কার্যকর টাস্কফোর্স গঠন করবে সরকার। পাশাপাশি ‘সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি’ নামে পৃথক একটি সংস্থাও গঠন করা হবে। তৈরি করা হবে ‘কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম’ এবং ‘ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব’। এই সংস্থাগুলো গঠন হওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তাও সুদৃঢ় হবে। তখন বাইরে থেকে কেউ সহজেই হ্যাক করতে পারবে না। চুরি হবে না দেশের নানা তথ্য। হ্যাকিংমুক্ত সাইবার জগত তৈরি করতে পারাই হচ্ছে এই আইনের মূল বিষয়। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পক্ষ থেকে সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি থেকে নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেছেন। পাশাপাশি ডিজিটাল এ্যাক্ট প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ দিকে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের সরকারী ও বেসরকারী সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি গঠন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এটি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। পরে পৃথক সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। এ সংস্থা সব সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থার নজরদারি করবে। তারা হ্যাকার গ্রুপগুলোর প্রতিও নজর রাখবে। যাতে কোন গ্রুপ দেশের প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাঙ্গার চেষ্টা না করতে পারে। নিয়মিত এসব মনিটর করা হলে এতে সাইবার অপরাধীদের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। এরপরও যদি সরকারী ও বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠান সাইবার আক্রমণের শিকার হয়, তখন তারা তাৎক্ষণিক এই সংস্থার কাছে রিপোর্ট করে সাহায্য চাইতে পারবেন। দ্রুত তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে সংস্থার পৃথক সেল সিআইআরটি দ্রুত ওই প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি সারাতে কাজ শুরু করে দেবে। একই সঙ্গে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। হামলার শিকার প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ত্রুটি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা হালনাগাদ করার বিষয়ে কী করণীয় তার পরামর্শ দেবে। যথা সময়ে এ কাজ করতে পারলে আর্থিক ক্ষতি বহুগুণে কমে আসবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যে সব উদ্যোগ হাতে নিয়েছি তাতে দেশে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা’ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সবার হাতে ইন্টারনেট দিয়ে যদি তাদের নিরাপদ রাখা না যায় তাহলে বড় বিপদ হতে পারে। নিজেদের প্রয়োজনেই সাইবার দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান হবেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদার। তিনি সার্বিক ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রীকে রিপোর্ট করবেন। এ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নীতি প্রণয়ন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক নীতি মেনে চলছে কি-না, তা পর্যবেক্ষণ করবেন। অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারবেন ওই সংস্থা। উল্লেখ্য, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার ও মোবাইল ভিত্তিক অপরাধগুলোকে বলা হয় সাইবার ক্রাইম। দেশে তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার ক্রাইমের ঘটনা। নতুন আইনটি পাস হলে সাইবার অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে।
×