ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

লেনদেন বাড়ছে বটিকয়নে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

লেনদেন বাড়ছে বটিকয়নে

বিটকয়েন হলো ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাংকেতিক মুদ্রা। বিটকয়েন লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না। ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো এই মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলন করেন। তিনি এই মুদ্রাব্যবস্থাকে পিয়া-টু-পিয়ার লেনদেন নামে অভিহিত করেন। বিটকয়েনের লেনদেনটি বিটকয়নের মাইনার নামে একটি সার্ভার কর্তৃক সুরক্ষিত থাকে। পিয়ার-টু-পিয়ার যোগাযোগ ব্যাবস্থায় যুক্ত থাকা একাধিক কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মধ্যে বিটকয়েন লেনদেন হলে এর কেন্দ্রীয় সার্ভার ব্যবহারকারীর লেজার হালনাগাদ করে দেয়। একটি লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিটকয়নের উৎপন্ন হয়। ২১৪০ সাল পর্যন্ত নতুন সৃষ্ট বিটকয়নগুলো প্রত্যেক চার বছর পরপর অর্ধেকে নেমে আসবে। ২১৪০ সালের পর ২১ মিলিয়ন বিটকয়নে তৈরি হয়ে গেলে আর কোন নতুন বিটকয়নে তৈরি করা হবে না। যেহেতু বিটকয়নের লেনদেন সম্পন্ন করতে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পরে না এবং এর লেনদেনের গতিবিধি কোনভাবেই অনুসরণ করা যায় না তাই বিশ্বের বিভিন্ন যায়গায় বিটকয়েনে ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বৈধ পণ্য লেনদেন ছাড়াও মাদক চোরাচালান এবং অর্থপাচার কাজেও বিটকয়েনের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বিটকয়েন ডিজিটাল কারেন্সি হিসেবে বিটকয়েন জনপ্রিয়দা পেয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এর দর মারাত্মক ওঠানামা, দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবসায় এর সীমিত ব্যবহারের কারণে অনেকেই এর সমালোচনা করেন। সম্প্রতি কানাডার ভ্যানক্যুভারে বিটকয়ন এর প্রথম এটিএম মেশিন চালু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এটি বিটকয়েনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। মাদক, চোরাচালান অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও অন্যান্য বেআইনী ব্যবহার ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডীয় সরকার বিটকয়নের গ্রাহকদের নিবন্ধনের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা করছে। কিভাবে লেনদেন হয় বিটকয়েনে লেনদেন হয় পিয়ার টু পিয়ার বা গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কম্পিউটারে। এটি কোন কেন্দ্রীয় নিকাশঘরের মধ্য দিয়ে যায় না কিংবা এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান নেই। বিটকয়নের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় অনলাইনে একটি উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে। বিটকয়নে মাইনারের মাধ্যমে যেকেউ বিটকয়ন উৎপন্ন করতে পারে। বিটকয়ন উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া সবসময় অনুমানযোগ্য এবং সীমিত। বিটকয়েন উৎপন্ন হওয়াার সঙ্গে সঙ্গে এটি গ্রাহকের ডিজিটাল ওয়ালেটে সংরক্ষিত থাকে। এই সংরক্ষিত বিটকয়নে যদি গ্রাহক কর্তৃক অন্য কারও এ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় তাহলে এই লেনদেনের জন্য একটি স্বতন্ত্র ইলেক্ট্রনিক সিগনেচার তৈরি হয়ে যায় যা অন্যান্য মাইনার কর্তৃক নিরীক্ষিত হয় এবং নেটওয়ার্কে মধ্যে গোপন অথচ সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত হয়। একই সঙ্গে গ্রাহকদের বর্তমান লেজার কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে হালনাগাদ হয়। বিটকয়ন দিয়ে কোন পণ্য কেনা হলে তা বিক্রেতার এ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় এবং বিক্রেতা পরবর্তীতে সেই বিটকয়ন দিয়ে পুনরায় পণ্য কিনতে পারে, অপরদিকে সমান পরিমাণ বিটকয়েন ক্রেতার লেজার থেকে কমিয়ে দেয়া হয়। প্রত্যেক চার বছর পর পর বিটকয়নেরর মোট সংখ্যা পুনঃনির্ধারণ করা হয় যাতে করে বাস্তব মুদ্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা যায়। বিটকয়েনকে অনেকে ফিউচার মানি হিসেবে মনে করছে। বিটকয়েনে বিনিয়োগ করে চিন্তিত ॥ অমিতাভ বচ্চন ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনে বিনিয়োগ করে বলিউডের মেগা স্টার খ্যাত অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন এখন মুনাফা অর্জন কিংবা তা খোয়ানোর আশা-নিরাশায় রয়েছেন। কারণ এই মুদ্রায় তাঁর বিনিয়োগের মূল্যমান মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে বেড়ে আড়াই লাখ মার্কিন ডলারে (বাংলাদেশের দুই কোটি টাকার বেশি) উঠে আরও কম সময়ে আবার ধপাস করে ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলারে নেমে গেছে। ওই সময়ে বিটকয়েনে অমিতাভের বিনিয়োগের মূল্যমান ১০০ কোটি ডলার বেড়েছিল, যা আবার ৭৫ কোটি ডলারে নেমে গেল। বিটকয়েনের দামে ব্যাপক উত্থান-পতনের কারণেই অমিতাভের বিনিয়োগের মূল্যমান কমে যায়। বছরখানিক ধরে দরবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এই ডিজিটাল মুদ্রার দাম একপর্যায়ে ২০ হাজার ডলারে ওঠে, তা আবার কমে গত শুক্রবার ১২ হাজার ডলারে নেমে যায়। এরপরে অবশ্য দাম বেড়ে ১৫ হাজার ডলারে ওঠে। বিটকয়েনে বিনিয়োগের সুবাদে ভাল মুনাফা হওয়ার সুবাদে ভারতের সেলিব্রেটিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করা ব্যক্তিদের তালিকায় ২০তম স্থানে উঠে আসেন অমিতাভ বচ্চন। তালিকাটি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস-এর। খবর হিন্দুস্তান টইমস ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর। ভারতীয় সিনেমার সুপার স্টার অমিতাভ বচ্চন প্রায় আড়াই বছর আগে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করেন। ভারতের বহু নাগরিক বিটকয়েনসহ বিভিন্ন ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় বিনিয়োগ করেন। তবে বিটকয়েনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত অমিতাভের নামটাই সবচেয়ে বড়। বিটকয়েন হচ্ছে একটি ডিজিটাল বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা। ‘মাইনিং’ নামের একটি জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মুদ্রাটির প্রচলন শুরু হয়। বিশ্বজুড়ে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিটকয়েনের লেনদেন কার্যক্রম ও তার ওপর তদারকি চলে। তবে এর পেছনে কোন দেশেই সরকারী সমর্থন নেই।
×