ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সর্দাররা ইদানীং রোহিঙ্গাদের দলে ভিড়িয়ে শুরু করেছে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

উখিয়া ও টেকনাফ উপকূলে হঠাৎ ডাকাত আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

উখিয়া ও টেকনাফ উপকূলে হঠাৎ ডাকাত আতঙ্ক

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ উখিয়া ও টেকনাফ উপকূলীয় এলাকায় হঠাৎ করে সাধারণ মানুষের মাঝে বেড়েছে ডাকাত আতঙ্ক। টেকনাফ ও উখিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় বেশ কিছুদিন ধরে এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। তারা এতদিন ডাকাতিপ্রবণ এলাকা ছাড়াও প্রধান সড়ক ও গ্রামের বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করেছে। হঠাৎ করে ডাকাত বা কিছু রোহিঙ্গাকে দলে ভিড়িয়ে প্রধান সড়কেও গাছের গুঁড়ি ফেলে দুর্ধর্ষ ডাকাতি শুরু করেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। ফলে এই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে বেড়েছে ডাকাত আতঙ্ক। গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধায় টেকনাফ হোয়াইক্যং ঢালায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, ওই দিন হঠাৎ একদল ডাকাত দুটি সিএনজি গাড়ি রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে প্রায় দেড় ঘণ্টা যাবত পনেরটি গাড়িতে লুটতরাজ চালিয়েছে। ওইসময় জিনিসপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল, টাকা পয়সাসহ সব কিছু কেড়ে নেয়া হয়েছে। খবর পেয়ে টেকনাফ বাহারছড়ার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কাঞ্চন কান্তির নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঢালার ভেতর ডাকাতি হওয়া স্থানে অভিযানে যায়। তখন ফাঁড়ির সামনে অপেক্ষমাণ ডাকাত দলের সহযোগী মোবাইল ফোনে সিগন্যাল দিলে ডাকাত দল পাহাড়ের ভেতর পালিয়ে যায়। বর্তমানে হোয়াইক্যং ঢালার রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছে। পুলিশ পাহারা ছাড়া সহজে কেউ যাচ্ছেনা ওই রাস্তা দিয়ে। গত রবিবার টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কে রাস্তায় নারিকেল গাছের গুঁড়ি ফেলে ডাকাতরা হ্নীলায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি করে। ওই সময় পর্যটকবাহী বাসসহ পনেরটি গাড়িতে গণডাকাতি করেছে। এসময় ডাকাতের খপ্পরে পড়া পর্যটকসহ স্থানীয় যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে নেয় ডাকাতদল। পরদিন সকালে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুদ্ধ জনতা ও মোটর শ্রমিকরা প্রায় তিন ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে ডাকাতদের গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে শান্ত করে। স্থানীয়রা জানান, সারা বছর এই এলাকা দিয়ে নির্বিঘ্নে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করলেও বর্তমানে রোহিঙ্গাদের কারণে রীতিমতো আতঙ্কে দিন যাপন করতে হচ্ছে। তারা আরও বলেন, কুখ্যাত কয়েক ডাকাত সর্দার ইতোপূর্বে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। মূলত তাদের নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অস্ত্রধারী ডাকাত সদস্য সংগ্রহ করে লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দীন খান বলেন, টেকনাফে কয়েকটি জায়গায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই দুঃখজনক। আর এই ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। রামুর এক বসতবাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। ডাকাতদলের প্রহারে তিন নারী গুরুতর আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চা বাগান রেস্ট হাউস মোড় এলাকার সৌদি প্রবাসী রুস্তম আলীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হল বৃদ্ধ মা মেহেরুনেচ্ছা, বোন জেসমিন আক্তার ও রোকসেনা আক্তার। রুস্তম আলীর পুত্র আজিম উদ্দীন রুবেল জানান, ৫-৬ জনের মুখোশপরা ডাকাতদল তার বাড়ির দরজা ভেঙ্গে নারীদের উপর উপর্যুপরি হামলা চালিয়ে আলমিরায় রক্ষিত ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে রোহিঙ্গা ডাকাত জড়িত থাকতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে রামু হাসপাতালে নিয়ে গেলে আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের জেলা সদর হাসপাতালে রেফার করেছে ডাক্তার। খবর পেয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল, রামু থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
×