স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং উন্নয়নে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য বাংলাদেশকে এখন বহির্বিশ্বে পথিকৃৎ হিসেবে ধরা হয়। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ী জাতি। অন্যায়ের কাছে মাথানত করব না, যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পিছপা হব না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী ধীরে ধীরে বায়ার নেভি থেকে বিল্ডার নেভিতে পরিণত হবে। একদিন আমরা যুদ্ধজাহাজ রফতানি করব ইনশাল্লাহ।’
রবিবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে (বিএনএ) রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ মিডশিপম্যান-১৫ পরিদর্শন শেষে এবং বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি নৌবাহিনীর উন্নয়ন, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সার্বিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের গৃহীত উদ্যোগ, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উন্নয়নে বাংলাদেশের কর্মতৎপরতা দেশে বিদেশেও স্বীকৃত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতমাসেই কক্সবাজারে আইওএনএস মাল্টিলেটারাল মেরিটাইম সার্চ এ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজের মত বৃহৎ ও আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। সফল এ আয়োজন আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের নতুন ভাবমূর্তি সৃষ্টি করেছে।
মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে জাতির অস্তিত্বের ইতিহাস প্রতিফলিত হয়েছে। আমার মা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ভাষণ দিতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার প্রাক্কালে বাবাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজের বিবেক যা বলে সেই কথাগুলোই বলে আসতে। আমার মা বুঝতেন, জাতির পিতাই বাঙালীর আশা আকাক্সক্ষা ও দুঃখ বঞ্চনার কথা সবচেয়ে ভাল জানেন। বাঙালী জাতির প্রতি তাঁর মত গভীর আন্তরিকতা আর কারও নেই। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সেই ভাষণ শোষণ শাসনে জর্জরিত জাতির বেদনার উপাখ্যান। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি মুক্তিযুদ্ধের অবিনশ্বর ত্যাগ সংগ্রামের ইতিহাসের আলোকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়চেতা করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়ন ও শক্তি বৃদ্ধিতে তাঁর সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, নৌবাহিনীকে বায়ার নেভি থেকে বিল্ডার নেভিতে পরিণত করা হবে। একদিন আমরা যুদ্ধ জাহাজ রফতানি করব। এ সরকারের সময়ে এসেই দেশে নৌবাহিনী দক্ষ ব্যবস্থাপনায় খুলনা শিপইয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে দেশী প্রযুক্তিতে আধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মিত হচ্ছে। গতমাসে খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত সাবমেরিন বিধ্বংসী লার্জ পেট্রল ক্রাফট ‘দুর্গম’ এবং ‘নিশান’ নৌবহরে কমিশন্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ডাইডক লিমিটেডে আধুনিক ফ্রিগেট তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করার ক্ষেত্রে সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জলসীমায় নজরদারি বাড়াতে আরও মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টার ক্রয় প্রক্রিয়াধীন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে পটুয়াখালীতে এভিয়েশন সুবিধা সংবলিত নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটি এবং ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নৌঘাঁটি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া সাব মেরিনের সুষ্ঠু পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও জেটি সুবিধা প্রদানের জন্য কুতুবদিয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। চট্টগ্রামের সীতাকু-ের সন্দ্বীপ চ্যানেলে জাহাজ বার্থিং সুবিধাসংবলিত ফ্লিট সদর দফতরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এটি নির্মিত হলে সমুদয় এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে এবার কমিশন পেয়েছেন ২১ নারী কর্মকর্তা। এতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর এই কমিশন প্রাপ্তি দেশে নারীর ক্ষমতায়নের বহির্প্রকাশ। মিডশিপম্যানদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তোমরা এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্বে আত্মনিয়োগ করবে। একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে সর্বদা উর্ধতনদের প্রতি আনুগত্য এবং অধস্তনদের সহমর্মিতা প্রদর্শন করবে। চেন অব কমান্ড মেনে চলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বিশ্ব দরবারে আরও গৌরবোজ্জ্বল আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে।
মিডশিপম্যান ১৫ ব্যাচের ‘সোড অব অনার’ লাভ করেন ক্যাডেট সোহানুর রহমান। বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মিডশিপম্যান সীমান্ত নন্দী আকাশ ‘নৌবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ এবং ডাইরেক্ট এন্টি অফিসার এ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট এজেডএম নাসিমুল ইসলাম ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ গ্রহণ করেন। পরে প্যারেড কমান্ডার নবীন অফিসারদের শপথ গ্রহণ করান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এদের সার্বিক সহযোগিতায় সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ প্রশাসন সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। শীঘ্রই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। দুদেশের যৌথ কমিটি কাজ করছে।
এর আগে সকাল এগারোটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম নৌঘাঁটিতে এসে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল এম আবু আশরাফ। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, জাতীয় সংসদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সরকারী-বেসরকারী এবং সামরিক পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: