ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংঘর্ষে আহত ২৫,আটক ২৬

আদালতে হাজিরা শেষে খালেদার ফেরার সময় ফের তান্ডব, ভাংচুর

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

আদালতে হাজিরা শেষে খালেদার ফেরার সময় ফের তান্ডব, ভাংচুর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবারও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তা-বে হাইকোর্টসহ আশপাশের এলাকায় এক প্রকার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। পুলিশ অন্তত ২৬ জনকে আটক করেছে। নেতাকর্মীরা বেশ কিছু যানবাহনে ভাংচুর করেছে। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে এমন ঘটনায় রীতিমতো বিপাকে পড়েন ঘরমুখো মানুষ। কয়েক ঘণ্টার জন্য জনজীবন থেমে গিয়েছিল। মারাত্মক বিপাকে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সেগুনবাগিচা বারডেম-২ হাসপাতাল, বারডেম হাসপাতাল ও হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরা। তা-বের সময় মানুষ প্রাণ ভয়ে দোকানপাট, প্রিয় গাড়িসহ অন্যান্য সামগ্রী ফেলে পালিয়ে যান। এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর একইভাবে তা-ব চালিয়েছিল তারা। বেলা এগারোটার দিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর পুরনো ঢাকার বকশীবাজারের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাঠে স্থাপিত ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ আদালতে হাজির হন। হাজিরা শেষে বিকেল চারটার দিকে গুলশানের বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। বিকেল সোয়া চারটার দিকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুরান ঢাকার বকশীবাজারের আদালতে হাজিরা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহর রওনা হয়। গাড়িবহরটি হাইকোর্ট মাজারের কাছে গেলে হাইকোর্টে আগ থেকেই অবস্থান করা নেতাকর্মীরা গাড়িবহরের কাছে যেতে চায়। গত ৫ ডিসেম্বর একই ঘটনা ঘটেছিল। এজন্য পুলিশ হাইকোর্টের গেট বন্ধ করে দেয়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। দলের নেতাকর্মীরা জোর করে গেট ভেঙ্গে বেরুতে চান। পুলিশ বাধা দিলে নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশও লাঠিচার্জ করে। পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়। নেতাকর্মীরা বৃষ্টির মতো পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষার জন্য জলকামান ও এপিসির নিয়ে দূরে চলে যায়। মাইকে পুলিশ বার বার নেতাকর্মীদের সহিংস নানা হওয়ার আহ্বান জানায়। এর কয়েক মিনিট পরে আবারও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষ চলার সময় খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে অন্তত পনের মিনিট অবস্থান করে। দলের নেতাকর্মীদের একাংশ খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ঘিরে রাখে। বাকিরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চালিয়ে যায়। হাইকোর্টের ভেতরে নেতাকর্মীদের আটকে রাখার গুজব ছড়িয়ে দেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। যাতে অন্য নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর আরও বেশি চড়াও হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের বেরিকেড ভেঙ্গে নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়লে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এমনই সংঘর্ষ হয়েছে চাঁনখারপুল এলাকাতেও। ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, হাইকোর্টে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল ছুঁড়ে। এতে কয়েকজন পুলিশ আহত হয়। এ ঘটনায় শাহবাগ মডেল থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারী কাজে বাধা দেয়া ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একাধিক মামলা দায়ের করেছে। এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর একই মামলায় হাজিরা শেষে ফেরার পথে সচিবালয়, শাহবাগ, জাতীয় প্রেসক্লাব, হাইকোর্টসহ আশপাশের এলাকায় রীতিমতো তা-ব চালিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। হামলাকারীরা ওইদিন অন্তত শতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে। ভাংচুরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বিডিআর বিদ্রোহের মামলার বিচারক হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলামের প্রটেকশন গাড়িও। এছাড়া নির্বিচারে ভাংচুর করেছিল শিশু, কিশোর, স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষকে বহনকারী যানবাহনও। তা-বের সময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষে পুলিশ, পথচারীসহ নানা শ্রেণী পেশার অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছিলেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ফুটবলার আমিনুল ইসলামসহ ২৫ জনকে আটক করে। অনেকেই বলছিলেন, ভাংচুরের পর প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে থেকে গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছিল ওইদিন। অনেক গাড়ির মালিক কাকুতি-মিনতি করে পার পাননি। অনেককে গাড়ি থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে গাড়িতে আগুন দেয়ারও ঘটনা ঘটেছিল। তা-বের মাত্রা বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ২০১৪ ও ২০১৫ সালের তা-বের মাত্রার চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না।
×